Advertisement
E-Paper

সৌন্দর্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে হিংসা

সিমা গ্যালারিতে এখন চলছে গ্রীষ্মের প্রদর্শনী। দেখে এসে লিখছেন মৃণাল ঘোষ।জীবনের ভিতর এবং প্রকৃতির ভিতর একটা হিংসার বাতাবরণ সম্ভবত সব সময়ই থাকে। ইংরেজিতে ‘ভায়োলেন্স’ শব্দটি হয়তো আরও সুপ্রযুক্ত। কখনও প্রচ্ছন্ন। কখনও প্রত্যক্ষ। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রতিরোধ গড়ে তোলা। নানাভাবে এটা ঘটে থাকে। কখনও আঙ্গিকের ভিতর দিয়ে তা বিকৃতিকে তুলে ধরে।

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:০১

জীবনের ভিতর এবং প্রকৃতির ভিতর একটা হিংসার বাতাবরণ সম্ভবত সব সময়ই থাকে। ইংরেজিতে ‘ভায়োলেন্স’ শব্দটি হয়তো আরও সুপ্রযুক্ত। কখনও প্রচ্ছন্ন। কখনও প্রত্যক্ষ। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রতিরোধ গড়ে তোলা। নানাভাবে এটা ঘটে থাকে। কখনও আঙ্গিকের ভিতর দিয়ে তা বিকৃতিকে তুলে ধরে। কখনও আখ্যান-নির্ভর ভাবে নাটকীয়তার ভিতর দিয়ে হিংসার স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে চায়। আবার কখনও উঠে আসে একেবারে বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকে প্রশান্ত, তন্ময় এক জীবনের সন্ধান। যেমন হওয়া উচিত এই জীবন, সেই আদর্শকে উপস্থাপিত করে। সময়ের সঙ্গে, সভ্যতা-বিকাশের সঙ্গে হিংসা ও সংঘাতের চরিত্র পাল্টায়।

সিমা গ্যালারিতে এখন চলছে গ্রীষ্মের প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীর কাজগুলি দেখতে দেখতে মনে হয়েছে এখনকার তরুণ শিল্পীরা এই সংঘাতের স্বরূপকেই যেন নানাভাবে উদ্ঘাটিত করতে চেষ্টা করেছেন। আজকের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে এই ‘ভায়োলেন্স’ অনেক গভীর পর্যন্ত শিকড় বিস্তার করেছে। প্রযুক্তির বৈপ্লবিক উন্নতি সংঘাতের চরিত্রকে আরও জটিল করেছে। শিল্পের আঙ্গিকও জটিল হচ্ছে বিশ্ব জুড়েই। সেই জটিলতাকে কীভাবে মোকাবেলা করছেন আজকের শিল্পী তারই নানা নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই প্রদর্শনী। মোট ৫৫-টি কাজ উপস্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ভাস্কর্য। বাকি প্রায় সবই দ্বিমাত্রিক চিত্র। ‘অলটারনেটিভ আর্ট’-এর দৃষ্টান্ত প্রায় নেই বললেই চলে। এখনকার মূল ধারার ছবি বা ভাস্কর্যে বিকল্পের কিছু বৈশিষ্ট্য স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মিশে থাকে। তরুণ প্রজন্মের যে কাজ রয়েছে এখানে তার অধিকাংশই পূর্ববর্তী ‘সিমা অ্যাওয়ার্ড শো’ থেকে নির্বাচিত। নির্বাচনের বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হয় সহজ, সাবলীল, সংহত প্রকাশকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যদিও আজকের শিল্পে সহজের ভিতরেই প্রচ্ছন্নভাবে অনুপ্রবেশ করে জটিলতা। তরুণ শিল্পী ছাড়াও এই প্রদর্শনীতে রয়েছে ১৯৬০-এর দশকের কয়েকজন শিল্পীর কাজ। এরও আগের প্রজন্মের রয়েছেন মাত্র একজন শিল্পী। তিনি এম.এফ হুসেন। প্রজন্মের ব্যবধানে হিংসা বা সমাজ-সংঘাতের চরিত্র কীভাবে পাল্টায়, তারও কিছু আভাস পাওয়া যায় সাম্প্রতিকের হিংসা ও মানুষের উপর এর প্রতিক্রিয়ার চরিত্র বুঝতে। প্রথমেই দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে দেবরাজ গোস্বামীর ছবিটির দিকে। দেবরাজ রবীন্দ্রভারতী থেকে ১৯৯৭-এর স্নাতক। ১৯৯৯-তে বরোদা থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। তিন অংশে বিভক্ত তার অ্যাক্রিলিকের ক্যানভাসটির শিরোনাম ‘দ্য ডোর বিটুইন’। তার ছবির চরিত্র সব সময়ই নাটকীয় এবং কল্পরূপাত্মক। পশ্চাৎপটে একটি দরজার আভাস। সামনে বসে আছে এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। তার মুখটি যেন ঝলসে গেছে। দরজার দুপাশে দুটি বৃহদাকার কান। ডান পাশে বন্দুক উঁচিয়ে আছে একদল মানুষ। বাঁ-পাশে বুলেট প্রতিরোধে হাত তুলে দাঁড়িয়ে আর এক দল। এই ভয়াবহ সন্ত্রাস আমরা দেখেও দেখি না, শুনেও শুনি না। তবু কেবলই বিধ্বস্ত হই।

জ্যোতির্ময় দে কাপড়ের উপর রঙিন সুতোর কাজে এঁকেছেন যেখানে সৌন্দর্যের মধ্যেই আবৃত হিংসার এক ব্যাপ্ততর রূপ। তন্ময় সামন্ত গুয়াশ মাধ্যমে উপস্থাপিত করেছেন করুণ অস্তিত্বের সংকট। শাকিলার কোলাজটি আপাতভাবে একটি গ্রামীণ নিসর্গের উপস্থাপনা। তার ভিতরেও সম্মুখভাগের নগ্ন মানুষটি হঠাৎই যেন এক সংঘাতের বাতাবরণ মেলে ধরে। ভি. উভান বোথিসাথুভার-এর ‘মাই ফেকেড?’ উপস্থাপনাটি স্মরণীয়। মনীশ মৈত্রর অনামা ছবিটিতে বা কল্যাণ মুখোপাধ্যায়ের ‘শেলটার’ উপস্থাপনায় নাগরিক জীবনের অন্তর্লীন সংকটও আভাসিত।

ভাস্কর্যে বিপুল কুমার ও মনোজ সিংহ সমাজ সংকটকেই তুলে আনেন। বিজয় প্রবীণ কাভুরি-র ভাস্কর্যটিতেও এই সংকটের আভাস থাকে। মৃণাল কান্তি গায়েন ও সঞ্জয় কুমার দাস উপস্থাপিত করেছেন জলের নিসর্গ।

গণেশ পাইন, যোগেন চৌধুরী ও জেরাম পটেল তুলে এনেছেন হিংসার প্রতীকী রূপ। বিপরীতে রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়, শক্তি বর্মন ও পরমজিৎ সিংহের ছবিতে উঠে এসেছে জীবন ও প্রকৃতির আদর্শ রূপ।

cima art gallery painting review mrinal ghosh artist debraj ghosh debraj ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy