Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

‘সাড়া দেবে না কবি?’

মনের প্রত্যন্ত প্রদেশে বিপ্রতীপের সেই লীলা টের পান তিনি অবিরত। নতুন কবিতার বইটিতেও বসন্তে মথিত দুঃখ নিয়ে দিনযাপনের পাশাপাশি সব সময় খুলে রাখেন স্বপ্নের জানালাগুলি।

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

স্বেচ্ছাবন্দি আশার কুহকে

লেখক: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

১৫০.০০

সিগনেট প্রেস

বয়ঃসন্ধিতে নতুন জন্মানো প্রেমজ অনুভূতি আলোড়িত করত তাঁকে, আর তা থেকেই তাঁর কবিতালেখা-র শুরু। অস্বীকার করেন না কখনও সে কথা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: ‘প্রেমের আনন্দ বেদনা ব্যর্থতা চরিতার্থতাই বোধহয় আমার সমস্ত জীবনভর কবিতার সব থেকে দীর্ঘস্থায়ী স্রোত হয়ে থেকে গেছে।’ পরবর্তী কালে নিসর্গ, সমাজ, বেঁচে থাকার অপরিহার্য টানাপড়েন একটু একটু করে ফুটে উঠতে লাগল তাঁর কবিতায়। মনের প্রত্যন্ত প্রদেশে বিপ্রতীপের সেই লীলা টের পান তিনি অবিরত। নতুন কবিতার বইটিতেও বসন্তে মথিত দুঃখ নিয়ে দিনযাপনের পাশাপাশি সব সময় খুলে রাখেন স্বপ্নের জানালাগুলি। ‘তারপর ঋতুর পর ঋতু বদলে যায়/ ভালোবাসার মুখ থেকে/ বসন্তের বহুবর্ণ মায়া একটু একটু করে মুছে যায়’— ‘সন্ধিপত্র’ কবিতায় এমন কয়েকটি লাইন লেখার পরই শেষ স্তবকে এসে লেখেন ‘সুন্দরের ওপর আমার বিশ্বাসের/ শিহরন রয়ে গেছে/ সব ক্ষতির মধ্যেও সুন্দর জেগে থাকতে পারে/ ওই সন্ধিপত্রই আমাকে বলে দেয়’। সৃষ্টির ক্রমাগত সক্রিয়তায় বয়সকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি, তবু চারপাশের ক্লেদাক্ত অন্ধকার সইতেই হয়: ‘সে আমার শ্বাসরোধ করার জন্যে/ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠাই স্থির করেছে’। কিন্তু কখনও অন্ধকারকে ধ্রুব মানেন না: ‘তথাপি তোমার প্রিয় ঋতু বসন্ত/ এখনই অন্ধকার ঠেলে সরিয়ে/ অযুত তারার হীরকচূর্ণ ছড়িয়ে এসে দাঁড়াবে/ সাড়া দেবে না কবি?’

ভূত শুধু ভূত

লেখক: হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

২০০.০০

দে’জ পাবলিশিং

যারা ভূতের গল্প পড়তে ভালবাসে, আর যারা ভালবাসে না তাদের সকলের উদ্দেশে উৎসর্গ করে বইটির মর্মকথা হল— ‘তেনারা আছেন কি নেই সেই বিতর্ক শিকেয় তুলে পড়তে হবে এই বই। আর পড়তে পড়তে মনে হবে আছেন... আছেন। তেনারা আশেপাশেই আছেন।’ এই আশপাশের ভূতের সন্ধান পাওয়া যায় ভিন্ন ভিন্ন ছাব্বিশটি লেখায়। ভূত প্রেত অশরীরী আত্মার খোঁজে লেখক প্রতিটি লেখার শুরুতে প্রাসঙ্গিক মুখপাত করেছেন ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানার। আরণ্যক, ভূত নেই?, লাল নিশানা, রাতের প্রহরী, রাত গভীর, বনকুঠির রহস্য, পিছনের জানালা-র মতো লেখায় ভূতের সঙ্গে মোলাকাত ঘটিয়েছেন। স্থান-কাল-পরিবেশ বর্ণনায় যে পরিসর তৈরি হয়েছে তাতে ভূতকে একটু আড়ালে আড়ালে রেখেই বৈঠকি মেজাজে লেখক ভয়ের কথা বলেছেন। মাঠ-ঘাট-জঙ্গল, শ্মশান, নির্জন বাড়িতে ভূতপ্রেতের আড্ডা যেন অহরহ! পুরনো সময়ের এই রসিক লেখকের গল্প বলার ঢঙে খুব যে উত্তেজনা আছে তা নয়— কিছুটা নিস্তরঙ্গ। আর ভূতও বহাল তবিয়তে গল্পের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছে। এর মধ্যে কোথাও গাছের ডাল থেকে ঝুলছে কাটা পা। সেখানে টর্চের আলো পড়তে আরও ভয় ধরে গেল। লেখকের বয়ানে— ‘মাথা নিচু করে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতেই নাকি সুর কানে এল। অঁ চাটুজ্যে মশাঁই শোঁন, শোঁন, কঁথা আঁছে।’

নুনেতে ভাতেতে ২/ হারিেয় যাওয়া খাবারের গল্প

সম্পাদক: রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল ও অনার্য তাপস

২২৫.০০

দ্য ক্যাফে টেবল

হারিয়ে যায় তো কত কিছুই। সবের কথা কি মনে থাকে? কিন্তু মায়ের, শাশুড়ির বা ঠাকুরমার হাতের রান্নার স্বাদ কিন্তু সহজে মুছতে চায় না। জিভের ডগায় লেগে থাকা সেই স্বাদ জেট গতির জীবনেও মনে নাড়াচাড়া দিয়ে যায়। স্মৃতির সঙ্গে রসনার বোধহয় চিরস্থায়ী সম্পর্ক রয়েছে। থাকাটাই উচিত, কারণ রান্না তো শুধু ক্ষুধা মেটানোর জন্য নয়, তার মধ্যে বহতা সংস্কৃতির ছোঁয়া থেকে যায়, থাকে একটি জাতির পরিচয়ও। কালের গর্ভে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এমন সব খাবারের গল্প দুমলাটের মধ্যে ধরেছে বইটি। এখানে খাবার নিয়ে ২৪টি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রবন্ধ বললে ভুল হবে, রয়েছে নানা স্বাদের রম্য লেখা। এগারোটি অধুনা বিরল পাকপ্রণালীর পাশাপাশি শ্রীহট্টীয় (সিলেটের) পাকঘরের সাতটি পদের হদিশ দেয় এই বইটি। সম্পাদকদ্বয় জানিয়েছেন, বইটিতে মূলত খাদ্যসংস্কৃতির বিষয়টিকে বোঝার চেষ্টা হয়েছে। চেষ্টা হয়েছে খাবারের সংস্কৃতির সঙ্গে ধর্ম, কৃষি ব্যবস্থা, ভূগোল, রসায়ন, সমাজনীতি, অর্থনীতি ও রাজনীতি কী ভাবে জড়িয়ে আছে তা বোঝার। কিন্তু কোথাও তা গুরুগম্ভীর আলোচনায় পর্যবসিত হয়নি। বইটির গদ্য, খাদ্যগুলির মতোই সুস্বাদু, পড়তে পড়তে হোঁচট খেতে হয় না। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির জগতে ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে আসা বাঙালির রান্নার কী বিপুল বৈচিত্র ছিল তার এক ঝলক মেলে এই লেখাগুলির মধ্যে দিয়ে। সেই ঝলকটি রাখার জন্য সম্পাদকদ্বয় চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্য নিতেও দ্বিধা করেননি। শুধু খাদ্যরসিকরাই নন, বইটি আমজনতার জন্যই লেখা। তবে পাকপ্রণালীর সঙ্গে ছবি থাকলে মন্দ হত না। ঘ্রাণে যদি অর্ধভোজন হয়, দর্শনে কী হবে তা বিদ্বজ্জনরাই ঠিক করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE