ভিন রাজ্য বা দেশ থেকে কলকাতায় ঘুরতে আসা বন্ধুদের আমরা দেখাতে নিয়ে যাই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ইন্ডিয়ান মিউজ়িয়ম, নিউ মার্কেট, সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রাল, খুব বেশি হলে শহিদ মিনার। আর পাশ দিয়ে বা পেরিয়ে যাওয়ার সময় দেখিয়ে দিই হাওড়া ব্রিজ, কলকাতা হাই কোর্ট, জিপিও, রাইটার্স বিল্ডিং, বিধানসভা ভবন। স্থাপত্যশৈলী নিয়ে কেউ বিশেষ আগ্রহ দেখালে তবেই আমরা পা বাড়াই মার্বেল প্যালেস, টাউন হল, মেটকাফ হল, বেলভেডিয়ার এস্টেট-এর দিকে; নগরকেন্দ্রে এসপ্ল্যানেড ম্যানসন, মেট্রোপলিটান বিল্ডিং, ট্রেজ়ারি ভবন অনেক সময়েই চোখ ও মনের নজর এড়িয়ে যায়। এদের গড়ে ওঠার ইতিহাস, নিয়ো-গথিক ভিক্টোরিয়ান ইন্দো-সরাসেনিক আয়োনিক প্যালাডিয়ান টাস্কান ডোরিক ইত্যাদি বিচিত্র স্থাপত্যরীতির বিশেষত্ব— এ শহরে থেকে আমরাই বা জানি ক’জন! এই তাগিদ থেকেই বইটি লিখেছেন শুকদেব চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার ২৩টি ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের প্রাসঙ্গিক ইতিহাস তুলে ধরেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধুনালুপ্ত সেনেট হাউস, আর্মেনিয়ান চার্চ বা মাগেন ডেভিড সিনাগগের বিশেষত্ব কী, সেন্ট্রাল টেলিগ্রাফ অফিসকে কেন বলা হয় ‘ডেড লেটার অফিস’, জানা যাবে। স্থাপত্যগুলির সাদা-কালো ছবির এক রকম লাবণ্য আছে নিশ্চয়ই, তবে কিছু ক্ষেত্রে রঙিন ছবির ব্যবহার হলে ভাল হত, ঔপনিবেশিক স্থাপত্যে রঙের ব্যবহারও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কিনা! সাধারণ পাঠক থেকে ‘হেরিটেজ ওয়াক’-আয়োজক, কাজে দেবে সবার।
কলকাতার ঔপনিবেশিক স্থাপত্য
শুকদেব চট্টোপাধ্যায়
৩২৫.০০
ধানসিড়ি
ত্রিপুরার সংবাদপত্র জগতে পরিচিত নাম ত্রিপুরা দর্পণ। ১৯৭৪-এ পথ চলা শুরু করে পঞ্চাশ বছর অতিক্রম করেছে। এই উপলক্ষে পাঠকদের জন্য উপহার, সংবাদপত্রের মহাফেজখানা থেকে গত পাঁচ দশকের বাছাই করা খবরের সঙ্কলন। সুদৃশ্য, সুসজ্জিত বক্স-সেটে রামধনু রঙের মোট ছ’টি খণ্ড। শুধু দেশ, বিদেশ ও রাজ্যের বিশেষ কিছু ঘটনার ধারাবিবরণী নয়, ধরা পড়ছে রাজনীতি ও সমাজের পটপরিবর্তন, সংস্কৃতির ক্রমবদল, সংরক্ষিত রয়েছে অতীতের দৃষ্টিভঙ্গি, নজর কেড়েছে সংবাদ পরিবেশনের বিবর্তন। প্রথম খণ্ডে ১৯৭৪ থেকে ’৮৪, দ্বিতীয়টিতে ’৮৫-’৯৭, তৃতীয় খণ্ডে ১৯৯৮-২০১২ কালপর্ব, চতুর্থটিতে ২০১৩-২০’র ঝলক, পঞ্চম খণ্ডে চলমান দশকের প্রথমাংশ, ২০২৪ অবধি। প্রতি খণ্ডের সূচনায় তাৎপর্যময় বা প্রতিক্রিয়াবহুল একটি খবর। প্রথম খণ্ডের শেষে ইন্দিরা গান্ধীর শেষশয্যা ও রেকর্ড ভোটে রাজীব গান্ধীর উত্থান যুগসন্ধিক্ষণের দ্যোতক। উত্তাল সত্তর, আশি-নব্বইয়ে বামপন্থায় বিশেষ প্রণিধান, গত দশকে ক্রমে ভিন্নধারার আঁধার-রাজনীতির অভ্যুত্থান— খবর-কোলাজে প্রকট দশকের বৈশিষ্ট্যও। জরুরি অবস্থা, শিখ দাঙ্গা, সূর্যগ্রহণ, কোভিডকাল ইত্যাদি কালচিহ্নের পাশেই ঠাঁই পেয়েছে সংস্কৃতি মঞ্চ, রাজ্যের প্রথম বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের খবর, ককবরক ভাষার জন্য বাংলা হরফ চালু, শচীন দেব বর্মণের শতবর্ষ। আশির দশক থেকে সংবাদপত্রটি পুষ্ট হয়েছে সমাজ-রাজনীতি নিয়ে কার্টুনে, ষষ্ঠ খণ্ডে সঙ্কলিত সেই রঙ্গ-সাম্রাজ্য। সংবাদপত্রের প্রতিলিপিও খবর পড়ার অনুভূতি আনে, পুরনো পত্রিকার স্তূপ থেকে অক্লান্ত পরিশ্রমে সংবাদ নির্বাচনে তৈরি এই সঙ্কলনে পাঠক, গবেষক উপকৃত হবেন।
বিচিত্রপত্র-র শরদিন্দু প্রসঙ্গ
সম্পা: সৌরদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়ন চট্টোপাধ্যায়,সৌম্যকান্তি দত্ত
৩৭৫.০০
বিচিত্রপত্র গ্রন্থন বিভাগ
ব্যোমকেশ বক্সীর গোয়েন্দাকাহিনিগুলির মধ্যে ‘শজারুর কাঁটা’ বিশেষ করে পাঠকধন্য, কারণ তা বিষয়বৈচিত্রে ও লেখার গুণে তুলনাহীন। এই আখ্যানে খুনের ধরন, অস্ত্র— সবই পাঠককে ধাক্কা দেয়। আবার শেষ পর্যন্ত গল্পটি বাঙালি গৃহস্থ পরিবারে এক নবদম্পতির মনোরম প্রেমের গল্পেও উত্তীর্ণ হয়। ব্যোমকেশও কিন্তু শুধু মগজাস্ত্রেই শাণ দেয়নি: সত্যবতীর সঙ্গে তার খুনসুটি, আবার তার স্বাস্থ্যের প্রতি সত্যবতীর সজাগ নজরও পাঠককে সমান টানে। যুগ-বদল ও গোয়েন্দাগল্পের রূপ-রূপান্তরের নানা বাঁক পেরিয়েও এ-কালে ব্যোমকেশের সত্যান্বেষী ও রোম্যান্টিক সত্তা সমান আকর্ষক— ইন্দ্রাণী চক্রবর্তীর লেখায় আলোচিত তা। ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন আদ্যোপান্ত এক বাঙালি গোয়েন্দা রূপে ব্যোমকেশের প্রভাব নিয়ে। সত্যান্বেষীর গল্পের আড়ালে কলকাতার প্রেক্ষাপট ও সামাজিক ইতিহাস-চর্চার প্রসঙ্গটি তুলে ধরেছেন স্মরণজিৎ চক্রবর্তী; শরদিন্দু-কাহিনি অবলম্বনে ‘ভূত ভবিষ্যৎ’-এর চিত্রনাট্য লিখেছেন সন্দীপ রায়। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইগুলির চেনা সাজেই নির্মিত, লাল মলাটের বইটি স্রষ্টা ও সৃষ্টির আরও নানা তথ্যে ভরা।
ত্রিপুরা দর্পণ ১৯৭৪-২০২৪ (১-৬ খণ্ড)
সম্পা: সমীরণ রায়
২০০০.০০
ত্রিপুরা দর্পণ
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)