“তুমি কারও আকাশ হবে,/ শক্ত মাটি কারও পায়ের,/ এ সব হতে না-পারো তো,/ বলবে লোকে, ‘মানুষ না এ।’” বাংলার প্রতিষ্ঠিত লেখকেরা বরাবরই ছোটদের জন্য ছড়া-কবিতায় পুরে দিয়েছেন খাঁটি জীবনসত্য, এই পত্রিকার পাতাতেও সেই ধারা বহতা। পবিত্র সরকার ভবেশ দাশ মৃদুল দাশগুপ্ত শ্যামলকান্তি দাশ যুধাজিৎ দাশগুপ্ত সৌমিত্র বসু গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ প্রবীণ-নবীনেরা কলম ধরেছেন ছোটদের জন্য। কথা ও কাহিনি আছেই, বিজ্ঞান শব্দবাজি কুইজ় কমিক্স খেলা ভ্রমণও: বড়রাও পড়বে ছোট্টটি হয়ে গিয়ে। এমন সব সুন্দর ছবিতে ভরা, দেখলেই হাতে তুলে নিতে সাধ জাগে।
আমপাতা জামপাতা, ২০২৫
সম্পা: দেবাশিস্ বসু
৩৯৯.০০
শৈশবের রামধনু রঙে সাজানো একগুচ্ছ অণু গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ। ডেভিড হেয়ার, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিবরাম চক্রবর্তীর জীবন ফিরে দেখা, আবার তুলে আনা হয়েছে জীবন সর্দার, হরবোলা শিল্পের মতো কম চেনা ব্যক্তি ও বিষয়। ‘ছোটদের পাতা’ বিভাগে খুদে পাঠকদের তুলি-কলমের কারিগরি; প্রতিবেশী দেশ ও বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গেও পরিচয় করানো হয়েছে।
ছোটদের আলোলিকা, শারদ ১৪৩২
সম্পা: ইন্দ্রাণী সরকার
১০০.০০
পাতায় পাতায় সুদৃশ্য অলঙ্করণ। গল্প, উপন্যাস, ছড়ার সঙ্গে মানানসই কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের আলোকচিত্র। বাংলার গ্রামের স্নিগ্ধতা মাখা উপন্যাস, পুতুল দিয়ে তৈরি কাহিনির চিত্ররূপ আনে সিনেমা দেখার আমেজ। হাল্ক, স্পাইডি, থর-এর আকর্ষণের চেয়ে বাংলার পুতুলের জাদু কম কিসে! গল্পে জেগে থাকে বন্ধুত্বের বন্ধন, মেঘেদের পাঠশালা, নম্বরের ভয় পেরিয়ে জীবনকে নতুন করে চেনা।
উড়োজাহাজ, পুজোসংখ্যাসম্পা: তরুণকান্তি বারিক
২৫০.০০
হাসিমারার জঙ্গলে ছোট্ট বিট্টুর সঙ্গে হাতির ছানার বন্ধুত্ব, বন্ধুকে দেখতে না পেয়ে অবলা পশুর অভিমান হৃদয় ছোঁয়। ইতিহাসনির্ভর কাহিনিতে হুমায়ুনের রাজত্বকাল, মহাকাব্যের দুনিয়ার পরিচয়। ‘তিস্তাচরের গল্প’-এ পাহাড়-জঙ্গলে প্রাণিজগৎ ঘেঁষে থাকার বিপদের ছায়া, ‘বিজয়ী মিথুন’-এ নাগাল্যান্ডের আশ্চর্য লোককথা: প্রকৃতি ও পশুজগতের সঙ্গে মানুষকে জুড়ে থাকতে শেখায়। কিছু অলঙ্করণে সুকুমার রায়ের প্রভাব, সোনার কেল্লা-র অর্ধশতকে শিল্পী দেখা করিয়ে দেন ফেলুদার সঙ্গে। প্রচ্ছদে জলরং ও কাগুজে ছবির মেলবন্ধন।
শিশুমেলা, শারদীয় ১৪৩২
সম্পা: অরুণ চট্টোপাধ্যায়
১০০.০০
‘চরের মানুষ চরণদাস’ উপন্যাসে জলজঙ্গলের বিপদের গন্ধ, ‘জাদুকরের বাক্স’-এ অলৌকিকের মধ্যেই পার্থিব মায়ার আমেজ, ইতিহাস জীবন্ত ‘জালালাবাদের যুদ্ধ’ উপন্যাসিকায়। প্রায় ৪০০ পাতায় আরও ছোট বড় উপন্যাস, বাংলোর হাড়হিম অভিজ্ঞতায় পুরনো দিনের ভয়ের আবহ। অনুবাদে ঘুরে আসা যায় এডগার অ্যালান পো-র রহস্যবিশ্বে, ভ্রমণে মালগুডি ডেজ়-এর লেখক আর কে নারায়ণের বাড়ি ঘুরে আসার মজা। ইংরেজি সাহিত্যে ক্রিকেটের প্রভাব নিয়ে রয়েছে নিবন্ধ, আর টুকরো খুশির ঝলমলে কমিক্স-স্ট্রিপ।
সায়ন্তনী, শারদ সংখ্যা
সম্পা: অপূর্ব দাস
২০০.০০
ঝকঝকে প্রচ্ছদে রূপকথার রোশনাই ছোটদের মন কাড়বে। নলিনী বেরা, ভগীরথ মিশ্র, অনন্যা দাশ প্রমুখের গল্পে বাস্তবের রূপকথা, জীবজগতের ভালবাসা, মানুষের মনে থাকা রাক্ষস। অ্যাকশন-ভরা চিত্রকাহিনি, অ্যাডভেঞ্চার-উপন্যাস, গল্পে হাসি, ভূত, রহস্য— মন ভোলানোর সব উপাদানই মজুত। শিবাজির তরোয়ালের ঝঙ্কার, অগ্নিযুগের স্মরণিকার সঙ্গে রয়েছে খেয়ালখুশির পাতায় মগজে শাণ দেওয়ার বন্দোবস্ত, প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উঠে আসা নতুন লেখকদের সঙ্গে পরিচয়।
হংসরাজ, উৎসব-বার্ষিকী
সম্পা: সুবীর সেন
৩৬০.০০
ভূত, পুরাণ, ভিনগ্রহী, পাখিজগৎ, জঙ্গলজীবন, রিয়্যালিটি শো, সিনেমার শুটিং— চিরাচরিত ও অত্যাধুনিক সবই মিলবে গল্পে। তারই মাঝে মাঝে আরাম, তুলির টান আর শৈশবের রেশমাখা ছড়ায়। কলমে পবিত্র সরকার মৃদুল দাশগুপ্ত শ্যামলকান্তি দাশ পঙ্কজ সাহার সঙ্গে দুই বাংলার কবিরা। প্রবন্ধের ডালিতে যত্নের ছাপ: কলকাতার প্রথম দুর্গের কথা, সলিল চৌধুরীর গড়া ছোটদের ভুবন। প্রায় ৪৫০ পাতার বইয়ে ঠাঁই পেয়েছে শিশুসাহিত্যিকদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়, নাটক, কাজ়িরাঙা ভ্রমণও। তবে সূচিপত্র আর একটু সুসংহত হলে লেখাগুলি খুঁজে পেতে সুবিধা হত।
আলোর ফুলকি ২০২৫
সম্পা: আনসার উল হক, স্বপন পাল
৪০০.০০
প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে ছোটদের লেখা গদ্য পদ্য গল্প অলঙ্করণ, শিশুমনের সতেজ ভাবনার চিহ্ন। তারা যেমন অলৌকিকে রসসঞ্চারে দক্ষ, তেমনই যুক্তির জাল বুনতে জানে, পরিবেশকে দেখে সহমর্মিতার চোখে। একেবারে ছোটরাও যাতে এই আনন্দে যোগ দিতে পারে, তাই তাদের জন্য আঁকিবুঁকি, ছবি চেনা, রং ভরার খেলার আয়োজন। খেয়ালখুশির এই মেলায় ছোটাছুটির পর হাঁপিয়ে গেলে কাহিনির মায়া বিছিয়ে দেন বড়রা: পৃথা বল শাশ্বতী নন্দী পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের নানা স্বাদের লেখাজোখা। অনুপ রায়ের প্রচ্ছদ মন কাড়ে।
অনাবিল, পূজাবার্ষিকী ১৪৩২
সম্পা: দুর্বা গঙ্গোপাধ্যায়
২২০.০০
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজ়ের ভুলভুলাইয়া আর সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের জম্পেশ মামা-কাহিনি। নদী-পাহাড় ভালবেসে পরিবেশ রক্ষার পাঠ দিয়েছেন অনিতা অগ্নিহোত্রী। ড্রাকুলা নারকোলা ও মাথাগরম শঙ্করের গল্প, জঙ্গলের রহস্য— সম্পাদকের কলমে ইতিহাস-কেন্দ্রিক কাহিনি।
শারদীয়া কিশোর ভারতী
সম্পা: ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়
২৪০.০০
অতীতের লেখকদের কিছু হারিয়ে যাওয়া লেখা বয়ে আনে চিরচেনা পুজোর গন্ধ। দুষ্টু-মিষ্টি চিত্রকাহিনিতে সতেজ নতুনত্ব, রয়েছে পুরনো দুষ্প্রাপ্য কমিকস— যার প্যানেলিং আজও দর্শনীয়, শিক্ষণীয়। সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রচ্ছদ চিনিয়ে দেয় সমাজের প্রকৃত অসুর।
ডিঙিনৌকো, ছোটদের বার্ষিকী ২০২৫
সম্পা: সুনির্মল চক্রবর্তী
৫৫০.০০
ছোটদের পত্রিকার ক্ষেত্রে ‘দর্শনধারী’ ও ‘গুণবিচারি’ দুই-ই অতি জরুরি, খেয়াল রেখেছে এই পত্রিকা। আবার এই সময়ের কথাও মাথায় রেখেছে, শুধুই কল্পনামায়া নয়, বাস্তব পৃথিবীর রূপ রস গন্ধও তার নানা লেখায়। ‘ফিরে দেখা গল্প’-এ উপেন্দ্রকিশোর সুকুমার পরশুরাম বিভূতিভূষণ হেমেন্দ্রকুমারের হাতছানি, পুণ্যলতা ও ত্রৈলোক্যনাথের সঙ্গে পরিচয়— ছোটদের বুঝিয়ে দেবে কেমন ছিল বাঙালির শিশুসাহিত্যের জাদুভান্ডারটি। তারই পাশাপাশি আছে শেক্সপিয়র নিয়ে কুইজ়, নিকোলা টেসলাকে নিয়ে বিজ্ঞানের গল্প। সুকুমার রায়ের ‘আহ্লাদী’ ছড়া থেকে কমিক্স, হ য ব র ল-র নাট্যরূপ— চাইলে অভিনয়ও করা যাবে মঞ্চে। সঙ্গতে দারুণ সব ছবি।
৪.শিশুমেলা, শারদীয় ১৪৩২(ছবি)
সম্পা: অরুণ চট্টোপাধ্যায়
১০০.০০
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)