মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারির সংগ্রহশালা থেকে প্রভূত প্রিন্ট বা মুদ্রিত ছবি দেখার সুযোগ পাওয়া গেল রামকৃষ্ণ মিশন গোলপার্কের ছবির গ্যালারিতে। বুদ্ধের জীবনের চার বিশেষ অধ্যায়ের, যেমন জন্ম, নির্বাণ লাভ, প্রথম ধর্মোপদেশ এবং দেহত্যাগকে উপজীব্য করে নানা ঐতিহাসিক গল্প, লোকগাথা, কিংবদন্তি বা জনশ্রুতি গ্রথিত আছে। তাঁর এই বিশিষ্ট জীবনের অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থানগুলিকে ঘিরে পরবর্তী কালে শিল্পকলার বিকাশ ঘটেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। এই সব জায়গার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের কুশীনগর ধর্মীয় স্থান-মাহাত্ম্যে অত্যন্ত বিশিষ্ট। ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের সূচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। এই কুশীনগরে একটি স্তূপ আছে যার সন্নিহিত অঞ্চলে পরবর্তী কালে বহু প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি, মাটির সিল ইত্যাদি খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে। একটি অতিকায় নীলাভ বুদ্ধমূর্তি শোভিত আছে সেখানে। জানা যায়, সিলগুলি ব্যবহৃত হত দূরস্থানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য।
উত্তরপ্রদেশের কৌশাম্বী বৌদ্ধ ধর্মের আর একটি বিশিষ্ট ধর্মস্থান। বুদ্ধের পরম শিষ্য বণিক শেঠি তাঁর জন্য নির্মাণ করেন একটি সুন্দর বুদ্ধমন্দির। কথিত আছে বুদ্ধদেব প্রায়ই এই স্থানটি বিশ্রাম নিতে এবং ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করতেন। নির্বাণ লাভের পর ছয় থেকে নয় বছরের মধ্যে বুদ্ধদেব এই জায়গাটিতে প্রথম পা রাখেন বলে শোনা যায়। এখানে খননপ্রাপ্ত প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি, সিল প্রভৃতি পুরাবস্তু সে-যুগের স্বাক্ষর বহন করছে।
সারনাথ বৌদ্ধ ধর্মের আরও একটি বিশেষ ধর্মস্থান যেটি বহু প্রাচীন স্তূপ, মন্দির এবং প্রার্থনাগার ইত্যাদির ধারক হিসাবে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। কথিত আছে, বুদ্ধদেব বোধগয়াতে নির্বাণ লাভের পর তাঁর পাঁচ ভক্তকে প্রথম ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন এই সারনাথে। পাল রাজাদের সময়ে সারনাথে বহুবিধ উন্নতি লক্ষিত হয় এবং গুপ্তযুগের শিল্পীরা নানা ধাতুনির্মিত তাঁদের বৈচিত্রময় শিল্পকর্মের নিদর্শন রেখে গেছেন। গুপ্তযুগের ভাস্কর্যের বিশেষত্বের মধ্যে চমক লাগে তাঁদের বিভিন্ন আসনরত মূর্তি বা মুদ্রাযোগের বিশিষ্টতা, যেমন উত্তরাবোধি, বরদা, ব্রজ, ধ্যান, অঞ্জলি, অভয়, ধর্মচক্র, বিতর্ক ইত্যাদির শৈল্পিক নৈপুণ্য দেখে। সারনাথের শিল্প ভাস্কর্যের যে মনোরম ভঙ্গিমা, দণ্ডায়মান মূর্তির যে অনিন্দ্যসুন্দর পেলব আবেদন লক্ষণীয়, তা সম্ভবত সে যুগের আর কোথাও দর্শনীয় নয়।