Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
আলোচনা

ভালবাসায় জড়িয়ে শুধুই প্রকৃতি

এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ইম্প্রেশন’। অর্থ হল প্রভাব বা ছাপ। শিল্পীমনের ওপর পারিপার্শ্বিকের ছাপ। চিত্রশিল্পী পরেশ সাহার বড় ক্যানভাসের কাজ। কলকাতার মতো বড় বড় শহর ফ্লাইওভারের চাপে বিব্রত।

মন: অ্যাকাডেমিতে ‘ইম্প্রেশন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর একটি ছবি

মন: অ্যাকাডেমিতে ‘ইম্প্রেশন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর একটি ছবি

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৭ ০০:১৫
Share: Save:

আট জন শিল্পীকে নিয়ে দলবদ্ধ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। এই শিল্পীদের মধ্যে চোখে পড়ার মতো কাজ পল্টু ঘোষের। উত্তরবঙ্গবাসী এই তরুণ শিল্পীর কাজে বেশ সতেজ ভাব চোখে পড়ল। প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠার জন্য শিল্পী খুব কাছের থেকে দেখেছেন পাহাড়ের কোলে নেমে আসা মেঘ। দেখেছেন মাঠভরা ঘাসের খাঁজে ছোট-খাটো পোকামাকড়। আরও দেখেছেন ফুলের বুকে প্রজাপতির চঞ্চলতা। এমন জীবনে তিনি অভ্যস্ত যেখানে মানুষ জড়াজড়ি করে বেঁচে থাকে প্রকৃতির সঙ্গে। ভালবাসায় জড়িয়ে থাকে গাছপালা, আকাশ, পাখি, পতঙ্গ। সেখানে সভ্যতার বিপর্যয় নেই। মানুষ এখনও নিসর্গপ্রেমে মুগ্ধ। সেই বিষয় নিয়েই তাঁর ছবি। সুন্দর বর্ণবিন্যাস। আলো-ছায়ার বিন্যাস অতি মনোহর। সব ছবিতেই নর-নারীর যুগল মূর্তি দেখা যায়।

এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ইম্প্রেশন’। অর্থ হল প্রভাব বা ছাপ। শিল্পীমনের ওপর পারিপার্শ্বিকের ছাপ। চিত্রশিল্পী পরেশ সাহার বড় ক্যানভাসের কাজ। কলকাতার মতো বড় বড় শহর ফ্লাইওভারের চাপে বিব্রত। তাই তিনি পালিয়ে যান সুন্দরবনের দিকে। ওখানে পুকুরভরা টলমলে জল, শাপলা ফুলের সুগন্ধে মাতোয়ারা হন তিনি। তাঁর দুঃখ এই যে, সেই লাল শাপলা এখন আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। তারাও বিলুপ্ত হতে চলেছে। শিল্পীর প্রধান ছবিগুলি অবশ্য প্রকৃতি বিষয়ক নয়। আধুনিক সমাজে আধুনিকতা সত্ত্বেও নারীর প্রতি যে অপমান ও অত্যাচার করা হয় তার প্রতিবাদ। রমণী নিজেকে বাঁচাতে ব্যস্ত। এক জোড়া হাত দিয়ে সে তার লজ্জা নিবারণ করতে চায়।

ভাস্কর অসীম পাল তাঁর শিল্পকর্মের নাম দিয়েছেন ‘দ্য হ্যাট ম্যান’। একটি মানুষ বিশাল এক টুপির ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন। কাজটি মজাদার। মানুষ ছলনায় পারদর্শী। অন্যকে টুপি পরাতে ওস্তাদ। এমনই বক্তব্য শিল্পীর। তাঁর দ্বিতীয় কাজটির নাম ‘ক্ষুধা’। একটি কাঠের মাছ। সেটি গাঁথা রয়েছে ধাতুনির্মিত বিভিন্ন আকারের কাঁটা চামচে। ভাষা কিন্তু প্রতিবাদের। অপর ভাস্কর পার্থ দে ‘যাত্রা শেষ’ শিরোনামের কাজে দেখিয়েছেন একটি বোতল দোমড়ানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যাত্রা শেষে আমরা জলের বোতল মোচড়ানো অবস্থায় ফেলে দিই। কিন্তু যাত্রা কি কখনও শেষ হয়?

এ ছাড়াও এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিলেন অরূপ পাল, গৌর চৌধুরী, গৌতম দাস, শতভিষা হাজরা।

শমিতা বসু

আবেগ মেশানো কণ্ঠে

দ্য ডোভার লেন মিউজ়িক কনফারেন্স, দ্য ডোভার লেন মিউজ়িক অ্যাকাডেমি এবং আইসিসিআর-এর যৌথ উদ্যোগে সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হল মনোরম এক শাস্ত্রীয় সংগীতানুষ্ঠান। কণ্ঠ এবং যন্ত্রসংগীতের মূর্ছনায় দু’দিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান দর্শকের মনে আবেশ রেখে গেল।

প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করলেন সোহিনী চক্রবর্তী ও সম্যক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভায়োলিন বাজিয়ে শোনালেন উপমা সিংহ। সোহিনীর পরিবেশনায় ছিল ঠুমরি এবং ভজন। তাঁর সুরেলা কণ্ঠ এবং বৈঠকী মেজাজ ঠুমরির উপস্থাপনায় অভিনবত্ব এনেছিল। ভজন গায়নেও সোহিনীর আবেগমিশ্রিত কণ্ঠ দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করেছে। তবলায় তাঁকে সহযোগিতা করেছেন বিবেক সিকদার এবং হারমোনিয়ামে হিরণ্ময় মিত্র।

সম্যক বন্দ্যোপাধ্যায় শোনালেন রাগ ইমন। সুমিষ্ট আলাপে ইমনের রাগরূপ যত্ন সহকারে ফুটিয়ে তুললেন। তানবিস্তারে সম্যকের কণ্ঠের মসৃণতা সাধুবাদযোগ্য। তাঁকেও হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেছেন হিরণ্ময় মিত্র, তবলায় বিভাস সাংহাই। উপমা সিংহ বাজিয়ে শোনালেন রাগ দুর্গা এবং দেশ। রাগবিস্তারে পরিচিত পথে হাঁটলেও, উপমার উপস্থাপনায় ছিল পরিণত হাতের ছোঁয়া। তবলায় তাঁকে যথাযোগ্য সঙ্গত করেছেন সুভদ্রকল্যাণ রানা।

দ্বিতীয় দিন রাগপ্রধান গেয়ে অনুষ্ঠানের মেজাজ তৈরি করে দিলেন রিয়া দে। মধুর কণ্ঠ এবং সাবলীল সুরবিস্তার তাঁর উপস্থাপনায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছে। রিয়ার সঙ্গে হারমোনিয়ামে ছিলেন প্রদীপ পালিত। পরবর্তী শিল্পী অত্রি কোটাল বেহাগ রাগে বিলম্বিত এবং দ্রুত বন্দিশ পরিবেশন করলেন। তাঁর কণ্ঠের বলিষ্ঠতা গায়নশৈলীকে অভিনবত্ব দিয়েছে। তবলায় ছিলেন সন্দীপ ঘোষ এবং হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায়।

পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভায়োলিন-বাদন বেশ ভাল লেগেছে। তিনি শোনালেন রাগ যোগ। সংক্ষিপ্ত আলাপ-জোড়-ঝালায় যোগ রাগের ভাবগাম্ভীর্য ধরা পড়ছিল। তিনতালে বিলম্বিত বাজানোর পর একটি গৎ বাজিয়ে শোনালেন পল্লব। শেষে শোনালেন কাহারবা তালে একটি ঠুমরি। তবলায় তাঁকে সহযোগিতা করেছেন সমর সাহা।

চিত্রিতা চক্রবর্তী

যখন পড়ল মনে

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে রূপমঞ্জরীর অনুষ্ঠানে গানে-পাঠে ও কথায় উত্তমকুমারকে শ্রদ্ধা জানালেন নবীন ও প্রবীণ শিল্পীরা। মন ভরে গেল প্রবীণ শিল্পী সুধীন সরকারের গানে। শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেলা কণ্ঠে ‘চলে যেতে যেতে’, ইন্দ্রাণী সেনের গাওয়া ‘জানি না আজ যে আপন’ শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। এ দিন শিশুশিল্পী রণিতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসাধারণ সুরে গান শোনান। শিবাজী চট্টোপাধ্যায়, সৈকত মিত্রের গানে মুগ্ধ হতে হয়। আর হৈমন্তী শুক্ল তাঁর চিরপরিচিত মধুর স্বরেই বেশ কয়েকটি গানে শ্রোতাদের মন জয় করে নিলেন। অন্তরা চৌধুরী সদ্যপ্রয়াত সবিতা চৌধুরীর গাওয়া ‘বিশ্বপিতা তুমি’ গানটি শোনালেন। মিস জোজো, মনোময় ভট্টাচার্যের গানেও অকুণ্ঠ আবেগ ছিল।
নবীন শিল্পীদের মধ্যে অন্বেষার গান মন্দ নয়। অনুষ্ঠানটি সুন্দর পরিচালনা করেছেন রাজর্ষি রায় ও সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়

অনুষ্ঠান

• মহাশ্বেতা দেবী’র স্মরণে তাঁর প্রথম প্রয়াণদিবসে ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে এক শ্রদ্ধার্ঘ্যের আয়োজন করে ‘রবিভৈরবী’। ‘আমার নিশীথরাতের বাদলধারা’ শিরোনামে শিল্পী মনীষা বসু নিবেদন করলেন দশটি গান, রবীন্দ্র-সান্নিধ্যধন্য মহাশ্বেতা দেবীর জীবন-অভিজ্ঞতা নিয়ে। ভাষ্য পাঠে ছিলেন দেবাশিস বসু।

দ্বিতীয়ার্ধে মীনাক্ষী সিংহের একক অভিনয়ে পরিবেশিত হল ‘হাজার চুরাশির মা’। অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। স্মৃতিচারণে কণিষ্ক সেন এবং সুজয় সোম।

• ঈষিকা রবীন্দ্রসদনে আয়োজন করেছিল গান ও পাঠের অনুষ্ঠান। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ। শুরুতেই সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করল কাব্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমি। একক আবৃত্তিতে ছিলেন ঈশিতা দাস অধিকারী, জয়ন্ত ঘোষ। গানে ছিলেন অব্যয় চট্টোপাধ্যায়, মৌসুমী কর্মকার প্রমুখ।

• মুক্তধারা শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করেছিল রাগাশ্রয়ী বাংলা গান, ভজন ও হিমাংশু গীতির সংকলন ‘গীতসুধারসে এসো’। শুরুতেই সংবর্ধনা দেওয়া হয় নৃত্যশিল্পী অলকা কানুনগোকে। নমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘মুক্তধারা’ ও উর্মিলা ভৌমিকের ‘উর্মিলা’ নজর কেড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE