Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আলোচনা

মানুষ ছুটছে শান্তির খোঁজে

প্রথমেই উল্লেখযোগ্য কাজ অভিজিৎ সরকারের ‘চৌকো চাঁদ’। আঁধার রাতে আকাশের গায়ে যেন সহস্র চৌকো-চৌকো চাঁদ। আসলে বহুতল গগনচুম্বী বাড়ির জানালার আলো গোটা আকাশময়।

যোগ্যতা: অ্যাকাডেমিতে ‘স্বীকৃতি’ শীর্ষক প্রদর্শনীর একটি ছবি

যোগ্যতা: অ্যাকাডেমিতে ‘স্বীকৃতি’ শীর্ষক প্রদর্শনীর একটি ছবি

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:১৩
Share: Save:

বিড়লা অ্যাকাডেমিতে অনুষ্ঠিত হল একটি বিশেষ প্রদর্শনী। এটি বিড়লার সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ। তাদের বার্ষিক প্রদর্শনীর দুটি ভাগ থাকে। একটি আমন্ত্রণ বিভাগ এবং অন্যটি প্রতিযোগিতা বিভাগ। প্রতিযোগিতা বিভাগে ৪০২ জন শিল্পীর মধ্যে ৯টি পুরস্কার পেয়েছেন শিল্পীরা ৬টি শ্রেণিতে। এই শ্রেণিগুলি হল রেখাচিত্র, অঙ্কনশিল্প, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, ভিডিও এবং ইনস্টলেশন। শিল্পীদের মধ্যে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন কৌশিক সাহা (অঙ্কনশিল্প), ডেভিড মালাকার (রেখাচিত্র), ফারুক আহমেদ এবং সায়ন্তন সামন্ত (ভাস্কর্য), রাহুল ধীমান (গ্রাফিক্স), অভিজিৎ সরকার (আলোকচিত্র), চন্দ্রনাথ সাহা ও প্রশান্ত ঘোষ (নতুন মাধ্যম) এবং দেবানন শাসমল (বিশেষ পুরস্কার)। এই প্রদর্শনী বিড়লা অ্যাকাডেমির সম্মানপ্রাপ্ত শিল্পীদের কাজ নিয়ে। তাই শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘স্বীকৃতি’।

প্রথমেই উল্লেখযোগ্য কাজ অভিজিৎ সরকারের ‘চৌকো চাঁদ’। আঁধার রাতে আকাশের গায়ে যেন সহস্র চৌকো-চৌকো চাঁদ। আসলে বহুতল গগনচুম্বী বাড়ির জানালার আলো গোটা আকাশময়। বিলবোর্ডের আলো, সাইনবোর্ডের আলো আর চার পাশে অন্ধকার। বেশ নতুনত্ব আছে ছবিতে। চন্দ্রনাথ সাহার নতুন মাধ্যমে সৃষ্ট একটি শিল্পকর্ম। প্লাস্টিক বটুয়ার ভিতরে বিভিন্ন দেশের শিশু। শিশুরা আহত। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। পৃথিবী জুড়ে যে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা এবং ধ্বংস চলেছে, তারই প্রতিবাদ। প্রশান্ত ঘোষের ছবিতে সমাজের আদব কায়দার ওপর বিরূপ ভাব মূর্ত হয়ে আছে। আজকের সমাজব্যবস্থার যে মান এবং আদর্শ আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে, তার সঙ্গে শিল্পীর কোনও সমঝোতা নেই।

ডেভিড মালাকারের ছবির শিরোনাম ‘মধ্যরাতের গর্জন বা আর্তনাদ’। এটি একটি রেখাচিত্র। মধ্যরাতে কাশীর ঘাটে সব শান্তি ছাপিয়ে শেয়াল কুকুরের আর্তনাদ। খুব বীভৎস এই দৃশ্য। মধ্যরাতে ঘুমন্ত অবস্থাতেও মানুষের শান্তি নেই। শিল্পীর এই ছবিটি বেশ জোরালো। রাহুল ধীমানের শিল্পকর্ম গ্রাফিক্সে। পৃথিবীর চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে মানুষ বড় বিভ্রান্ত। বাঁয়ে বা ডাইনে ঘুরলে পথভ্রান্ত। সোজা পথে থাকাই কি ভাল?

সায়ন্তন সামন্ত একজন ভাস্কর। তাঁর শিল্পকর্ম তৈরি হয়েছে কংক্রিট, লোহার রড দিয়ে ইনস্টলেশন। পরিবেশদূষণ হচ্ছে, তারই প্রতিচ্ছবি। কৌশিক সাহার ছবি ‘ষাঁড়লড়াই’। যোদ্ধাদের পরাক্রম বা বীরত্ব। দেবানন শাসমলের কাজ ‘কালো মন’। তা কাগজে ওয়াটারপ্রুফ কালি দিয়ে আঁকা।

শমিতা বসু

ছায়াঘন দিন

সুচিত্রা মিত্র সঙ্গীত শিক্ষায়তনের সপ্তম বার্ষিক অনুষ্ঠানটি হয়ে গেল বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। শিল্পীর ছাত্র-ছাত্রীদের উৎসাহেই গড়ে ওঠে এই প্রতিষ্ঠান। এ দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় তিনটি উদ্বোধনী সঙ্গীতের মাধ্যমে। এর পর ছিল গীতি-আলেখ্য ‘ছায়াঘন দিন’। পরিচালনায় কাশীনাথ রায়। বর্ষাকে আহ্বান, আগমন এবং রূপবর্ণনা—তিনটি অনুষঙ্গে মোট ১১টি গান শোনা গেল ২২ জন শিল্পীর সমবেত কণ্ঠে। প্রতিটি গানেই ছিল আন্তরিকতার ছোঁয়া। তার মধ্যে ‘তপের তাপের বাঁধন কাটুক’, ‘ওই কি এলে আকাশ পারে’, ‘ওই আসে ওই অতি ভৈরব হরষে’ উল্লেখযোগ্য। শেষ গান ‘তৃষ্ণার শান্তি সুন্দর কান্তি’ শ্রোতাদের মনকে স্পর্শ করে। পাঠ ও আবৃত্তিতে ছিলেন অনিরুদ্ধ রক্ষিত এবং মৈত্রেয়ী রায়। যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সুরঞ্জিত রায় ও বিজয়া রায়। দ্বিতীয় পর্বে সতীনাথ মুখোপাধ্যায় দরাজ কণ্ঠে পরিবেশন করলেন রম্য রচনা ‘হালুইকর ও জোগারে’। পরে উপস্থাপিত হল শ্রুতিনাটক ‘কাঙাল’। অংশ নিয়েছিলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও মৈত্রেয়ী রায়। পরিচ্ছন্ন পরিবেশনা।

নিজস্ব প্রতিনিধি

দুর্দান্ত নাটকীয় মুহূর্ত

এক আনকোরা অনামী নাট্যদল, তায় তপন থিয়েটারের অকুলীন মঞ্চে অভিনয়। অ্যাকাডেমি-বিলাসী বাংলা থিয়েটারের কুলীন দর্শককূল যে ‘রাজগুরু’র শো নিয়ে আগ্রহী নন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই সমস্ত কৌলীন্যকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘চেতলা কৃষ্টি সংসদ’-এর শুভান্বিতা গুহ যে কাজ দেখালেন, তা অনেক প্রতিষ্ঠিত বড় দলকেও লজ্জায় ফেলতে পারে। নাটকের স্টোরি-লাইন বেশ সরল। নন্দবংশের অত্যাচারী রাজা ধননন্দকে সরিয়ে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে সিংহাসনে বসিয়ে অখণ্ড ভারতবর্ষের নতুন ইতিহাস তৈরি করেছিলেন চাণক্য। ইতিহাসের এই কাহিনির সমান্তরালে শুভান্বিতা রেখেছেন আজকের সময়ের এক স্কুলছাত্র শশীকে। টেররিস্ট সন্দেহে ধৃত, পুলিশি-অত্যাচার ও অপমানের হাত থেকে মুক্তি পেতে চাওয়া স্কুলশিক্ষক মইনুল সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। সেই মইনুলের পুত্রই শশী, যে হিন্দু পরিচয়ে বড় হয় ঠাকুমার কাছে। সদ্য স্কুলে যোগ দেওয়া শিক্ষক বিষ্ণুগুপ্ত তাকে আবিষ্কার করেন ও শিখিয়ে পড়িয়ে ইন্টারস্কুল সেমিনার ও ডিবেট কমপিটিশনে স্কুল টিমের ক্যাপ্টেন করে পাঠালেন। শেষ পর্যন্ত সব বাধা জয় করে শশী জয়ী হল। পিতা মইনুলের গায়ে লেগে থাকা টেররিস্টের মিথ্যা কলঙ্কও সে মুছে ফেলতে সক্ষম হল।

শুভান্বিতার আশ্চর্য কলমে চমৎকার সংলাপ যেন ইতিহাস থেকে বর্তমান, আর বর্তমান থেকে ইতিহাসের দূরত্ব মুছে দেয়। শিক্ষক বিষ্ণুগুপ্তর অন্য মুখ হয়ে ওঠে চাণক্য, শশী আর চন্দ্রগুপ্ত একাকার হয়ে যায়। তেমনই আশ্চর্য দৃশ্য পরিকল্পনায় প্রধান শিক্ষকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে চাণক্যর চন্দ্রগুপ্ত নিয়ে বলা বক্তব্য, কিংবা গুরুর কাছে শিক্ষা গ্রহণ ও তার প্রয়োগে চন্দ্রগুপ্ত-শশীর দৃশ্য পরিকল্পনায় ঘন ঘন ওভারল্যাপিং দুর্দান্ত নাটকীয় সব মুহূর্ত তৈরি করেছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টান-টান অভিনয়, বিশেষ করে চন্দ্রগুপ্ত/শশী চরিত্রে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় ও চাণক্য/বিষ্ণুগুপ্ত চরিত্রে ময়ূখ দত্ত অসামান্য মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবহ, সায়ন্তনী দে ও পিয়ালি সামন্তর পোশাক আলাদা করে চোখ টেনেছে। ছোট দল, মঞ্চ- উপকরণ সামান্যই, অথচ শুভান্বিতা গুহর অদম্য ইচ্ছে, পরিশ্রম, দুর্দান্ত টিম-ওয়ার্ক এই প্রযোজনাকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।

মলয় রক্ষিত

অনুষ্ঠান

• রবীন্দ্রসদনে ডাইমেনশন ফোর আয়োজন করেছিল দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত ও অতুলপ্রসাদের গানের অনুষ্ঠান ‘পূর্ণজ্যোতি’। গানে ছিলেন নূপুরছন্দা ঘোষ ও পাঠে মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। বালিকা বধুর সেই নায়িকা মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় সম্ভবত বহু বছর পরে মঞ্চে এলেন নূপুরছন্দা ও তাঁর শতাধিক ছাত্রছাত্রীর সম্মেলক ‘আজি এসেছি’ গানটির সঙ্গে। অসামান্য এই সম্মেলক গানটি শ্রোতাদের অন্তরে বহুকাল গেঁথে থাকবে। তিন কবির গানে নূপুরছন্দাও প্রশংসা পেয়েছেন। তবে ‘পাগলা মনটারে’ এক অন্য মাত্রা পেয়েছে শিল্পীর কণ্ঠে।

• বেহালা সাঁঝবাতির শ্রুতিসন্ধ্যা আয়োজন করেছিল দুটি নাটক ‘বাকসিদ্ধ বাঞ্ছারাম’ ও ‘চোখের বালি’। নাট্যরূপ ও পরিচালনায় স্বপন গঙ্গোপাধ্যায়। পরিকল্পনায় সুস্মিতা রায়। অভিনয়ে সুস্মিতা রায়, শান্তনু পাল, মীনাক্ষী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

• শিশির মঞ্চে ব্রততী পরম্পরা ও আবৃত্তিলোক আয়োজন করেছিল ‘বর্ষা উৎসব’। একক নিবেদনে ছিলেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণতি ঠাকুর। এ ছাড়াও অংশ নেয় সংস্থার কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন শাখা। অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন সৌমিত্র মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE