Advertisement
E-Paper

এগিয়ে চলে এক আশ্চর্য কথোপকথন...

ডি সিপ্লিন নিয়ে আমার কিছু বলা সাজে না। আমার কোনো ডিসিপ্লিন নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তল্লাটে বড়ো হয়েছিলাম। তারপর ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, সংস্কৃতিচর্চা ইত্যাদি নানা মুলুকে ঘুরেছি। সর্বত্র আমি সন্দেহজনক অনুপ্রবেশকারী।’ বলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০১

ডি সিপ্লিন নিয়ে আমার কিছু বলা সাজে না। আমার কোনো ডিসিপ্লিন নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তল্লাটে বড়ো হয়েছিলাম। তারপর ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, সংস্কৃতিচর্চা ইত্যাদি নানা মুলুকে ঘুরেছি। সর্বত্র আমি সন্দেহজনক অনুপ্রবেশকারী।’ বলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। (কথার কথা, তালপাতা, ১০০.০০) সাকুল্যে ৭২ পৃষ্ঠার ছিপছিপে, সুদৃশ্য বইটিতে ‘তরুণ পাইনের সঙ্গে কথাবার্তা’য় প্রবীণ সমাজবিজ্ঞানী নিজের জ্ঞানান্বেষণের কয়েক ঝলক উন্মোচন করেছেন, সেই সূত্রে সমাজ ও রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর সুতীক্ষ্ণ বিশ্লেষণেরও হদিশ মিলেছে। বই শেষ করে মনে হয়, কথাবার্তা আরও অনেকটা চলল না কেন? আশিস নন্দী ও জয়ন্তী বসু (ফুটপাথ পেরোলেই সমুদ্র, তালপাতা, ৩০০.০০) সেই খেদ রাখেননি। জয়ন্তী মনোবিজ্ঞানে সুপণ্ডিত, আশিস নন্দীর সমৃদ্ধ তত্ত্বচর্চা সম্পর্কে তাঁর ধারণাও বিশদ এবং গভীর। ২০১২ সালে তিনি দিল্লিতে কয়েক দিন ধরে আশিসদার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তার পর সেই আলাপের পাণ্ডুলিপি অন্তত চার বার পরিমার্জিত হয়ে প্রকাশ পেল। ‘আমার মূল কৌতূহলের জায়গা আপনার চিন্তা, আপনার লেখক-মন’, শুরুতেই জানিয়েছিলেন জয়ন্তী বসু। আশিস নন্দী বলেছিলেন, ‘আমারও হয়তো নিজের মনের ভিতর নিজেকে খুঁজতে ভালো লাগবে।’ অতঃপর এগিয়ে চলে এক আশ্চর্য কথোপকথন, একই সঙ্গে সুগভীর চিন্তা এবং সহৃদয় ভাবনা প্রতি মুহূর্তে পাঠককে ঋদ্ধ করে, মুগ্ধও। আলাপে উঠে আসা বিভিন্ন ধারণা, বহু তত্ত্ববিদ এবং আরও নানা প্রসঙ্গ সম্পর্কে মূল্যবান টীকা বাংলা বইয়ের দুনিয়ায় বিরল।

‘আমাদের বিবিধ বিষয়ক চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিজ্ঞানের স্থান কোথায়— এক কথায় এই সব প্রসঙ্গই এই বইয়ের বিষয়বস্তু।’ পলাশ বরন পাল (বিজ্ঞান এবং, অবভাস, ১৪০.০০) কঠিন এবং গভীর বিষয়কে সুস্বাদু ভাষায় লিখতে কতটা সিদ্ধহস্ত, এই সংকলনের এক ডজন প্রবন্ধে তার উজ্জ্বল স্বাক্ষর। অবভাস-এরই অন্য বই রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের মার্কসবাদ জিজ্ঞাসা (১২৫.০০)। মার্ক্স-এঙ্গেলস-এর তত্ত্বচিন্তা সম্পর্কে তাঁর দীর্ঘ অধ্যয়ন ও ভাবনার ফসল।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহজিয়া প্রকাশভঙ্গির আড়ালে লুকনো নিগূঢ় পরীক্ষা-নিরীক্ষা— বিষয় নিয়ে, আঙ্গিক নিয়ে। ওই সব ‘অনাবিষ্কৃত মহাদেশ’ নিয়ে রামচন্দ্র প্রামাণিকের বই বিভূতিভূষণ: অনুভূতিলোকে তীর্থযাত্রা (গাঙচিল, ৩৫০.০০)।

বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী অসীম রায়ের গল্প-উপন্যাসে সংক্ষুব্ধ সময়ের ছবি। সেই সময়ে বিধৃত সমাজ ও ব্যক্তিমানুষের দ্বান্দ্বিক রূপচিত্র কী ভাবে উঠে এসেছে তাঁর রচনায়, তা নিয়েই বন্দনা পালের অসীম রায়: জীবন ও শিল্প (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, ৩০০.০০)।

‘ঋত্বিক যত ভেবেছেন সিনেমাকে জনসংযোগের মাধ্যম করে তুলবেন ততই তাঁর ছবির ওপর আরোপিত করা হয়েছে নানা বিমূর্ত ভাবনা।... এই সব পাঁচিল ডিঙিয়ে এক অনুসন্ধিৎসু রিপোর্টারের মতোই চেষ্টা করেছি...’, জানিয়েছেন চণ্ডী মুখোপাধ্যায় তাঁর ঋত্বিককুমার ঘটক-এ (গাঙচিল, ২৫০.০০)। এতেই শুরু গাঙচিল-এর চলচ্চিত্র গ্রন্থমালা, বেরিয়েছে একই লেখকের ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো (২৫০.০০) ও অমিতাভ বচ্চন/ নায়ক-নির্মাণ (৩০০.০০)।

প্রাচীন ও আধুনিক বাংলা শব্দ, প্রচলিত প্রায় সমস্ত গ্রাম্য শব্দ-উচ্চারণ একক উদ্যোগে সংগ্রহ করে তার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ দিয়ে বঙ্গীয় শব্দকোষ নির্মাণ করেছিলেন যে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সার্ধশতবর্ষে তাঁকে নিয়েই তাপস ভৌমিকের সম্পাদনায় হরিচরণ (কোরক, ১০০.০০)। হরিচরণের আত্মপরিচয় সংক্রান্ত দু’টি রচনা একত্র করে দেবাঙ্গন বসুর সম্পাদনায় ইতিমধ্যেই বেরিয়েছে আভিধানিকের আত্মকথা (সূত্রধর, ১০০.০০)।

‘এরকমটা মাঝে মাঝে হয়। এক বছর বেশি শীত তো আর-এক বছর শীত কম। আরে বাপু, হাওয়া-বাতাসের তো ভাঁড়ার আছে। সেখানেও টান পড়ে।’ তির্যক গদ্যে লেখা প্রচেত গুপ্তের সাগর হইতে সাবধান-এ (অভিযান, ২০০.০০) গল্পের আদল আছে বটে, আদতে সমাজের নিয়ম-নিগড়, হুজুগের ফানুসটাকে কড়া ঠাট্টা-তামাশায় ফাঁসিয়ে দেওয়া। সুন্দরবনের স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়ার হাহাকার ধরা পড়েছে ভূমিপুত্র উৎপলেন্দু মণ্ডলের আখ্যানে: দলিজঘর কিংবা একজন ডেপুটি সাহেব (বইওয়ালা, ৮০.০০)।

লোপামুদ্রা চক্রবর্তীর প্রথম বই ঝোড়ো হাওয়া-র (ঋতাক্ষর, ১৫০.০০) অধিকাংশ গল্পের মূল চরিত্রই নারী। নারী-পুরুষের সম্পর্কের টানাপড়েনে চারপাশের এই সময়টা যেন আয়না হয়ে ওঠে। ঝরা পাতা উড়িয়ে ঝোড়ো হাওয়ায় পথ চলার গল্প।

‘কবিতা সকলের জন্য নয়, এবং যে পর্যন্ত জনসাধারণের হৃদয় নতুন দিগ্‌বলয় অধিকার না করবে সে পর্যন্ত কয়েকটি তৃতীয় শ্রেণির ‘কবি’র স্থূল উদ্বোধন ছাড়া বাজারে ও বন্দরে— এবং মানবসমাজে ও সভ্যতার সমগ্রতার ভিতর কোনো প্রথম শ্রেণির কাব্যের প্রবেশের পথ থাকবে না...’ ১৯৩৮ সালে লিখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। কবিতা নিয়ে তাঁর অনেকগুলি প্রবন্ধ, সঙ্গে নিজের সম্বন্ধে বেশ কিছু লেখাও সংকলিত হয়েছে আমার কথা কবিতার কথা শিরোনামে (ছোঁয়া, ২৫০.০০)। সম্পাদকের নামোল্লেখ নেই।

ধর্ম, বিজ্ঞান, বিশ্বাস, সংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে তিন দশক ধরে লেখা কয়েকটি ‘যুক্তিবাদী’ নিবন্ধ নিয়ে তরুণ বসুর ছোট্ট সংকলন-গ্রন্থ ধর্মের তর্জনী বনাম না-ধার্মিকতা (মনফকিরা, ১০০.০০)।

ত্রৈলঙ্গস্বামীর অলৌকিকত্ব নয়, অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় খুঁজেছেন তাঁর সাধনার ইতিবৃত্ত, পারিবারিক জীবনের তথ্য। সঙ্গে সংকলন করে দিয়েছেন ত্রৈলঙ্গস্বামী তাঁর প্রিয় শিষ্য উমাচরণ মুখোপাধ্যায়কে যে শাস্ত্র (‘মহাবাক্য রত্নাবলী’) তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন, সেটি, এবং উমাচরণের ‘তত্ত্ববোধ’। এই সব মিলিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ত্রৈলঙ্গস্বামী সমগ্র (জীবনী ও সংকলন অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়, পত্রভারতী, ৪০০.০০)।

‘বিবেকানন্দকে রোধ করার উপায় ছিল না আমার পক্ষে।’ লিখেছিলেন শঙ্করীপ্রসাদ বসু, তাঁর আত্মজীবনীর গোড়ায়। তাঁর গবেষণাগ্রন্থগুলি সুপরিচিত, কিন্তু সংশ্লিষ্ট বহু রচনা এখনও ছড়িয়ে আছে পত্রপত্রিকায়। আত্মজীবনীমূলক লেখার সঙ্গে রামকৃষ্ণ, সারদাদেবী, স্বামী বিবেকানন্দ, ভগিনী নিবেদিতা, সুভাষচন্দ্র বিষয়ক ছাড়াও বিবিধ রচনা ও ভাষণের লিখিতরূপ একত্র করে মূল্যবান সংকলন রামকৃষ্ণ সারদা বিবেকানন্দে নিবেদিত আমার জীবন আমার গবেষণা (লালমাটি, ৬০০.০০) প্রকাশিত হল।

সুস্মিতা সোমের নতুন গ্রন্থ মালদহ/ ভাষা-শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি (সোপান, ৫৫০.০০)। মালদহের বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী, প্রাচীন থেকে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, ইতিহাস চর্চা, সংবাদপত্র, লোকসংস্কৃতি, নাট্য চর্চা নিয়ে ছশো পাতার বইটিতে বিস্তারিত তথ্য সহ আলোচনা।

বাংলার ইতিহাসে আঠেরো শতক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। অনেক ইতিহাসবিদ এই পর্বের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেছেন, তবু আজও অনেক প্রশ্নেরই উত্তর স্পষ্ট নয়। নিখিল সুরের আঠারো শতকের বাংলা/ রাজনৈতিক চালচিত্র (১৭০০-১৭৬৫) (আশাদীপ, ২৫০.০০) এই সন্ধিক্ষণকে ফিরে দেখার গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস।

মুঘল চিত্রকলা নিয়ে দেড় দশক আগে বাংলায় একটি চমৎকার বই লিখেছিলেন রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায়। ‘কিছু কিছু অংশ একটু পালটিয়ে, কিছুটা যোগ করে’ তার নতুন সংস্করণ প্রকাশ করল থীমা (দরবারি শিল্পের স্বরূপ/ মুঘল চিত্রকলা, ২৫০.০০)। ষোলো পাতা রঙিন ছবির সংযোজন বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

ভাষাও পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অঙ্গ। নারীর বিরুদ্ধে কিংবা পুরুষের পক্ষে ভাষার এই অবস্থান দেখা যায় কথ্য ও লেখ্য— দু’ভাবেই। পুরুষতান্ত্রিক ভাষার নেতিবাচক (গালি শব্দ) ব্যবহারের মাধ্যমে নারীর সৃষ্টিশীলতা ও মনোজগতের উপর আক্রমণ চলে নিয়ত। ভাষাগত এই বৈষম্য নিয়েই আলোচনা হাসান ইকবালের ভাষা, নারী ও পুরুষপুরাণ (অবসর, ঢাকা, ৫০০.০০) বইয়ে।

বাংলার অগ্রগণ্য ইতিহাসপথিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় সংস্কৃত চর্চার মাধ্যমে ভারত-আত্মার সঙ্গে পরিচিত হতে চেয়েছিলেন, আর তারই ফল অনেকগুলি মূল্যবান রচনা। ‘রামায়ণ’ নিয়ে তাঁর এমনই তেরোটি লেখা এ বার গ্রন্থাকারে সংকলিত হল (রামায়ণ বিচার, সংকলন ও সম্পা: গৌতম অধিকারী, গোরাগাঙনি সাহিত্য পরিষৎ, পরি: দে’জ, ২০০.০০)। সম্পাদকের ভূমিকায় প্রেক্ষিত ও গুরুত্ব সু-আলোচিত। অন্য দিকে পার্শ্বনাথ রায়চৌধুরী তাঁর বাল্মীকি-রামায়ণের স্থান-কালক্রম ও সমাজ (লোক সেবা শিবির, পরি: মনফকিরা, ৭৫.০০) বইয়ে ভারতের আধুনিক মানচিত্রে রামায়ণে বর্ণিত স্থান ও পথগুলি চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। সঙ্গে আছে আর্যসমাজ, বানরসমাজ ও রাক্ষসসমাজের বৈশিষ্ট্য অন্বেষণ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy