Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২...

‘চাঁদে মরচে ধরবে, বেঁচে থাকার মরচে’

‘বাংলার বিগত সংস্কৃতি’ নিয়ে ক্রোড়পত্র পদক্ষেপ-এ (সম্পা: জ্যোতির্ময় দাশ অসীমকুমার বসু) । তাতে ঠাঁই পেয়েছে লোকনৃত্য, নাটক, গ্রামোফোন রেকর্ড, মেয়েলি ব্রত, সাময়িক পত্র, চলচ্চিত্র, বটতলার বই ইত্যাদি নিয়ে নানা রচনা। অবশ্য সংগ্রহযোগ্য চন্দ্রগ্রহণ-এর (সম্পা: প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়) ‘হাংরি আন্দোলন সংখ্যা’।

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ২৩:১৩
Share: Save:

রাজা মিত্র লিখেছেন ‘উনিশ শতকের বাংলা গ্রন্থচিত্রণ’ নিয়ে— বাংলা সাহিত্যের অলংকরণের প্রয়োজনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিল্পীরা কলকাতায় আসতে শুরু করেছিলেন, ‘এই শিল্পীরা ছিলেন মূলত স্বর্ণকার, সূত্রধর এবং পটুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। কাঠ ও ধাতু খোদাই শিল্পে এঁদের পুরুষানুক্রমিক দক্ষতা ছিল। ছিল ড্রয়িং আঁকার অভিজ্ঞতা।’ পদক্ষেপ-এ (সম্পা: জ্যোতির্ময় দাশ অসীমকুমার বসু) ‘বাংলার বিগত সংস্কৃতি’ নিয়ে ক্রোড়পত্র। তাতে ঠাঁই পেয়েছে লোকনৃত্য, নাটক, গ্রামোফোন রেকর্ড, মেয়েলি ব্রত, সাময়িক পত্র, চলচ্চিত্র, বটতলার বই ইত্যাদি নিয়ে নানা রচনা।

‘অঘ্রানের এই কৃষ্ণপ্রতিপদে কোনারকে এসেছি আমাদের যৌনতার সম্পূর্ণতা খুঁজতে। চাঁদে মরচে ধরবে, বেঁচে থাকার মরচে।’— দেবেশ রায়ের গল্প ‘মিথুনলেখ’র সঙ্গে হিরণ মিত্রের চিত্রকর্ম। ‘পণ্যসাহিত্য বিরোধিতার অন্যতম কাগজ’ এই জারি বোবাযুদ্ধ-এ (সম্পা: প্রচেতা ঘোষ তাপস ঘোষ) সুবিমল মিশ্রের অ্যান্টিগল্প ‘মহানির্গ্রন্থীয়’। হিরণ মিত্রের আঁকি-বুকি ‘অন্তরালে বেনারস!’ আঁকা ছবির সঙ্গে গদ্যলেখ: ‘কেদার ঘাটেই কেদার মন্দির। কিছুটা সিঁড়ি নামলাম; এবার আঁকার খাতার সাদা পাতাগুলো ছবি খুঁজে পেতে শুরু করল।’

কার্টুন ও কমিকস নিয়ে আন্তর্জাতিক পাঠশালা-য় (প্রধান সম্পা: অমিত রায়) বিশেষ ক্রোড়পত্র। ‘বাংলা কার্টুন’ নিয়ে শুভেন্দু দাশগুপ্ত: ‘সেই ১৮৭২ সাল থেকে এই ২০১৩ পর্যন্ত কখনও না থেমে বাংলা কার্টুন আঁকা হয়ে চলেছে। ছাপা হয়ে চলেছে। প্রায় ১২০ জনের মতো বাংলা কার্টুন আঁকিয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে।’

‘‘সহজ পাঠ’-এর আরেকটি বিষয় হল তার ভৌগোলিক সীমানাটা।... ‘আমাদের ছোট নদী’ থেকে পদ্মা, কর্ণফুলি, তিস্তা, আত্রাই, ইছামতি, অঞ্জনার সাথে যোগ হয়ে যায় এখানে তিল্পনি খাল, মোতিবিল। বাংলার ঋ

তু, ফুল, হাওয়া, বিবেক, মাটি, জল, মানুষ সবই ‘সহজ পাঠ’-এ যেন সহজ হয়ে উঠে আসে।” লিখেছেন সোমব্রত সরকার তাঁর প্রচ্ছদ-নিবন্ধ ‘রবীন্দ্র-প্রাইমার: বড় বয়সে ছোট বয়সকে ঝালিয়ে নেওয়া’-য়। ‘সহজ পাঠ’ নিয়ে একাধিক নিবন্ধ খোয়াই-এ (সম্পা: গার্গী দাশগুপ্ত)। এর ইলাস্ট্রেশন নিয়ে সাক্ষাৎকারে প্রণবেশ মাইতি জানিয়েছেন “প্রথমেই ‘ছোটো খোকা বলে অ আ/ শেখেনি সে কথা কওয়া’। ছোট্ট ছেলে মানে নাড়ুগোপাল, এই ধরনের। শ্রীকৃষ্ণের একটা ইমেজ চলে আসে।... ‘ঘন মেঘ বলে ঋ/ দিন বড়ো বিশ্রী’। চুপচাপ এই অঝোরে বৃষ্টি, তার মধ্যে দুজনে গুটি শুটি মেরে বসে আছে। এটা তো অন্য ভাবেই আঁকা যেত। কিন্তু এর মুডটাকে ধরে দেওয়া হয়েছে।”

দূর্বাদল দে লিখেছেন ‘সত্যজিতের ভূতের গল্প’ নিয়ে: ‘নর-নারী সম্পর্ক ব্যতিরেকে বাংলা ভাষায় নতুন ধরনের মনস্তত্ত্বমূলক কাহিনি। এই প্রয়াস অভিনব।... এক কথায়, সত্যজিতের প্রায় সব ভূতের গল্পই নিবিড় পাঠে হয়ে যায় মনস্তাত্ত্বিক গল্প।’ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য থেকে রবীন্দ্রনাথ হয়ে একেবারে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পে ভূত নিয়ে নানা আলোচনা সাহিত্যতক্কো-র (সম্পা: উদয় রতন মুখোপাধ্যায়) “বাংলা সাহিত্যে ‘ভূত’কথা” সংখ্যায়।

কবিতা গল্প অনুবাদে এ বারেও শক্তিশালী আরশিনগর (সম্পা: স্বাতী গুহ)। ‘খোলা কথা’-য় অধীর বিশ্বাসের নাড়িয়ে-দেওয়া রচনা ‘কত টাকা চাইত সায়রা?’ নিবন্ধাদিতেও বিষয়ের বৈচিত্র— ধান, শবরভাষা, জসীমউদ্দীন, নাচনি, মনসা সনকা বেহুলা। তবে ‘আমাদের কথা’য় জানানো হয়েছে ‘সত্যপ্রিয় ঘোষের লেখা নিয়ে রুশতী সেনের অসামান্য আলোকপাত’-এর কথা। তাঁর ‘বনিতা জনম— এক থেকে অনেকে’ শিরোনামের রচনাটিতে রুশতী লিখছেন ‘জীবন থেকে নির্মাণের বদলগুলো খুব সম্ভব বাঙালির পারিবারিক জীবনের অসহায় অসংগতিকে আরও প্রত্যক্ষে আনতেই করেছিলেন সত্যপ্রিয় ঘোষ।’

মৌলিক নাটক, নাট্য সমালোচনা ছাড়াও নানা ধরনের থিয়েটার— শহরতলির, গ্রুপ ও বোর্ডের, বা ফিল্মের সঙ্গে তার সম্পর্ক ইত্যাদি এ বারের অসময়ের নাট্যভাবনা-র (সম্পা: রঙ্গন দত্তগুপ্ত) প্রবন্ধাদির বিষয়। অন্য দিকে এ বারের বহুরূপী-তে (সম্পা: প্রভাতকুমার দাস) বাংলাদেশের প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম নাট্যকার সেলিম আলদীন-এর গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার। অংশুমান ভৌমিককে তিনি জানিয়েছিলেন ‘... অসম্মানের ইতিহাস। ব্রিটিশরা এসে আমাদের থিয়েটার করে দিল বা তাদের অনুকরণ করে আমরা থিয়েটারে প্রবৃত্ত হলাম এই ইতিহাসটা অপঘাতের ইতিহাস।’ ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের সার্ধশত জন্মবর্ষ উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে, রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী ও গীতাঞ্জলি, এবং নাট্যচর্চায় বিজ্ঞান নিয়ে প্রবন্ধাদি।

চন্দ্রগ্রহণ-এর (সম্পা: প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায়) ‘হাংরি আন্দোলন সংখ্যা’ অবশ্য সংগ্রহযোগ্য। শুরুতেই সম্পাদক জানিয়েছেন যে এ সংখ্যাটি ‘এই আন্দোলনের সমস্ত সাক্ষ্য, চিঠিপত্র যতটা সংগ্রহ করা গেছে, একদা যারা আন্দোলনের সাথে ছিলেন, এখনও জীবিত আছেন তাঁদের সকলের সাক্ষাৎকার সহ পূর্ণাঙ্গভাবে আন্দোলনটিকে ধরার একটা সচেতন প্রয়াস করেছে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

book review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE