Advertisement
E-Paper

বাস্তব ও রূপকল্পের টানাপড়েনের প্রতিচ্ছবি

সম্প্রতি স্টুডিও ২১-এ অনুষ্ঠিত হল ভিডিও প্রদর্শনী। দেখে এসে লিখছেন মৃণাল ঘোষবাস্তব ও কল্পরূপ, রিয়েলিটি আর ফ্যান্টাসি – এর মধ্যে দূরত্ব খুব বেশি নয়। বাস্তবের গভীরে প্রবেশ করলে, তাকে নিবিড়ভাবে দেখার চেষ্টা করলে বাস্তবই কল্পরূপ হয়ে যায়।

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৫ ০০:০১

বাস্তব ও কল্পরূপ, রিয়েলিটি আর ফ্যান্টাসি – এর মধ্যে দূরত্ব খুব বেশি নয়। বাস্তবের গভীরে প্রবেশ করলে, তাকে নিবিড়ভাবে দেখার চেষ্টা করলে বাস্তবই কল্পরূপ হয়ে যায়। কল্পরূপই তখন হয়ে ওঠে বাস্তবে পৌঁছানোর অনিবার্য এক পথ। ছবিতে তো এটা অনেক সময়ই দেখা যায়। আজকাল আলোকচিত্রও এই দুইয়ের মধ্যে নিরন্তর সেতু গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এই প্রকরণ প্রকৃষ্টভাবে ব্যবহৃত হয় ভিডিও-আর্টে। সময়ের প্রবহমানতা থাকে তাতে। সেই প্রবহমানতায় বাস্তব প্রগাঢ়ভাবে বিশ্লিষ্ট হতে পারে। অথচ সেই বিশ্লেষণ বুঝিয়ে দেয় – বাস্তবের বা সত্যের স্থির-নিশ্চিত বা একক কোনও নির্দিষ্ট রূপ নেই। সে রূপ থেকে রূপান্তরে যেতে যেতে নানা প্রান্ত থেকে দৃশ্যের উপর বা বিষয়ের উপর আলো ফেলে। সেই আলোকে অনুভব করাই হয়ে ওঠে শিল্প অনুধাবনের ক্রমিক একটি প্রক্রিয়া।

স্টুডিও ২১-এ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি ভিডিও-প্রদর্শনী দেখতে দেখতে এই কথাগুলো মনে হচ্ছিল। শিল্পী ছিলেন ব্রিটিশ আলোকচিত্র সাংবাদিক ও ফিল্ম-গবেষক পল হলমস। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘আউটসাইড দ্য বক্স’। চারটি আলাদা ভিডিও নিয়ে এই আয়োজন।

এর মধ্যে একটি প্রদর্শের শিরোনাম ‘টাইম মেশিন’। একটি হাই-স্পিড ক্যামেরা অনবরত তুলে গেছে একটি মুখের ছবি। বিভিন্ন অবস্থান থেকে তুলেছে। তুলেছে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। ক্লোজ-আপ থেকে বিগ-ক্লোজ-আপের দিকে গেছে। তাতেই নিরবচ্ছিন্ন ধারায় বিশ্লিষ্ট হতে থেকেছে মুখটি। আমাদের স্বাভাবিক দৃষ্টি আর – অনুবীক্ষিক দৃষ্টিতে দেখলে সেই সত্যের স্বরূপ অনেক পাল্টে যায়।

সেই বাস্তব আমাদের কাছে অপরিচিত বলে, তাকে আমরা কল্পরূপ বা ফ্যান্টাসি বলে অভিহিত করতে চাই। অথচ সেই কল্পরূপই সত্যের অনেক নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে আমাদের। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও লক্ষ্যে পৌঁছে দেয় না। এই ভিডিওটিতে প্রদর্শিত মুখটির এক একটি অংশ আমাদের দৃষ্টির সামনে বৃহদাকারে উদ্ভাসিত হয়।

সেই অংশটি তখন একটি চিত্রের আদল পায়। কল্পরূপাত্মক সেই চিত্রটি এক লহমায় আবার রূপান্তরিত হয়ে যায়। সেই মুখেরই অন্য একটি অংশের উপর ক্যামেরা দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। একবার চোখ, তারপর কপাল, কান, গাল, ঠোঁট হয়ে জিভের জঙ্গমতার দিকে সঞ্চালিত হতে থাকে ক্যামেরার চোখ। স্বভাবতই দর্শকের চোখ তাকে অনুসরণ করতে বাধ্য হয়। জিভের প্রান্তে এসে সেই কল্পরূপ ভিন্ন এক চেহারা নয়। জিভের সংকোচন প্রসারণকে রূপবদ্ধ করতে করতে ‘গ্রটেক্স’ বা কিমাকার আদল পরিগ্রহ করে। আপাতভাবে যা স্বাভাবিক, তার মধ্যে এক ধরনের বীভৎসতা সঞ্চারিত হয়।

আমরা বুঝতে পারি, দৃষ্টির সীমায় আমরা যেটুকু বাস্তব দেখি, প্রকৃতপক্ষে তা কত রহস্যময়। এই রহস্য উদঘাটনের দিকে শিল্পী বিশেষভাবে সাহায্য নেন অভিনয়ের। যে মুখটি ক্যামেরার লক্ষ্য, স্থির নয় সেই মুখ। অভিনয় তাতে গতি যেমন আনছে, তেমনি উদ্ভাসিত করছে অভিব্যক্তির নান দিগন্ত। এক দিকে ‘সাবজেক্ট’ বা বিষয়ের প্রকাশভঙ্গি ও সৃজনপ্রক্রিয়া আর এক দিকে শিল্পীর নিজস্ব তত্ত্ববিশ্ব নির্মাণের প্রয়াস, এই দুইয়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একটি শিল্প, যা স্বাভাবিকের ভিতর থেকে উদ্ঘাটিত করে রহস্যের বিচিত্র মায়াজাল। বুঝিয়ে দেয় প্রতিটি মুহূর্তই, অস্তিত্বের প্রতিটি এককই প্রতিনিয়ত অশেষ সম্ভাবনায় স্পন্দিত হয়। দ্বিতীয় ভিডিওটির শিরোনাম ‘দিজ মেজার্স আর ফর ইয়োর প্রটেকশন’। আধুনিক রাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থায় সন্দেহভাজন অপরাধীকে যে জিজ্ঞাসাবাদের পদ্ধতি, তা ব্যক্তি-স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করে দেয়। এই বিষয়টি নিয়েই প্রতিবাদী সাংকেতিক দৃশ্যভাষা তৈরি করেছেন শিল্পী। আবহসুরের সমন্বয়ে ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রতিচ্ছবি ক্রমান্বয়ে প্রতিবিম্বিত ও অপসৃত হয়েছে। তৈরি হয়েছে বাস্তব ও রূপকল্পের টানাপড়েন।

‘পার্সিসটেন্স অব ভিশন’ তৃতীয় ভিডিও-তে কোনও দৃশ্য বা প্রতিমাকল্প নয়, কেবলই বিচ্ছিন্ন কিছু শব্দ ও বাক্যাংশ। কেবলই ভেঙে যাচ্ছে। ব্যক্তির আত্মপ্রকাশের সংকটও তাঁর বাস্তবকে কল্পরূপের দিকে নিয়ে যায়।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy