Advertisement
E-Paper

ভাস্কর্যে শুধু দর্শন নয়, আছে সমালোচনাও

‘সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্ট’ দলের সম্মেলক প্রদর্শনী দেখে এলেন মৃণাল ঘোষসোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্ট’ দলের শিল্পীরা সম্মিলিতভাবে ভাস্কর্য রচনা করেছিলেন। এই উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন ‘বাচওয়াত ফাউন্ডেশন’। কলকাতা থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরত্বে বারাসতের নিকটবর্তী বাদু-র গ্রামীণ পরিমণ্ডলে এই ফাউন্ডেশনের একটি কেন্দ্র আছে।

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ০০:০১

সোসাইটি অব কন্টেম্পোরারি আর্টিস্ট’ দলের শিল্পীরা সম্মিলিতভাবে ভাস্কর্য রচনা করেছিলেন। এই উদ্যোগে পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন ‘বাচওয়াত ফাউন্ডেশন’। কলকাতা থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরত্বে বারাসতের নিকটবর্তী বাদু-র গ্রামীণ পরিমণ্ডলে এই ফাউন্ডেশনের একটি কেন্দ্র আছে। শিল্পকলা সম্পর্কিত নানা কর্মশালার আয়োজন করা হয় সেখানে। চিত্রকলা, ছাপচিত্র ও ভাস্কর্য নির্মাণের সব রকম পরিকাঠামোও আছে। প্রায় তিন-চার মাস ধরে সোসাইটির শিল্পীরা এই কাজগুলো করেছিলেন। তার পর সেগুলো ব্রোঞ্জে ঢালাই করার ব্যবস্থা করা হয় বাচওয়াত ফাউন্ডেশনের কর্মশালায়। সোসাইটির ২২ জন সদস্য-শিল্পী ছাড়াও তিন জন ভাস্কর ও চিত্রী আমন্ত্রিত হয়েছিলেন একসঙ্গে কাজ করার জন্য। সেই শিল্পীরা হলেন দিল্লির প্রখ্যাত ভাস্কর কে এস রাধাকৃষ্ণন, কলকাতার চিত্রশিল্পী চন্দ্র ভট্টাচার্য ও তরুণ ভাস্কর তাপস বিশ্বাস। এই ২৫ জনের প্রত্যেকের দুটি করে ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য নিয়ে সম্প্রতি প্রদর্শনী হল আকৃতি আর্ট গ্যালারিতে।

সোসাইটির শিল্পীদের মধ্যে পাঁচজন সুপরিচিত ভাস্কর। নিরঞ্জন প্রধান, মানিক তালুকদার, বিমল কুণ্ডু, সুনীল দাস, পঙ্কজ পাঁয়ার এবং অখিলচন্দ্র দাস। বাকি সকলে মূলত চিত্রশিল্পী। আদিত্য বসাক, অতনু ভট্টাচার্য, অতীন বসাক, দীপক ভট্টাচার্য, গণেশ হালুই, লালুপ্রসাদ সাউ, মনোজ দত্ত, মনু পারেখ, মনোজ মিত্র, পার্থ দাশগুপ্ত, প্রদীপ মৈত্র, রাজেন মণ্ডল, সনৎ কর, শ্রীকান্ত পাল, সুহাস রায় ও সুনীল দাস। শিল্পী সুনীল দাস ১০ অগস্ট (২০১৫) প্রয়াত হয়েছেন। তার আগে তিনি অবশ্য তাঁর কাজটি শেষ করে যেতে পেরেছিলেন। এই প্রদর্শনীটি তাঁরই স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত হয়েছে।

একজন চিত্রশিল্পী ভাস্কর্যে তঁার ভাবনা যেভাবে ত্রিমাত্রিক অবয়বে রূপান্তরিত করেন, তাতে তাঁর দর্শনের যেমন বিস্তার ঘটে, তেমনই সূক্ষ্ম এক সমালোচনাও উপস্থাপিত হয়। এই ভাস্কর্যমালায় এ দিকটি বিশেষ অভিনিবেশযোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছে।

সুনীল দাস তাঁর ভাস্কর্যে গড়েছেন প্রমত্ত ও উত্তেজিত দুটি ঘোড়ার সংঘাত। তাঁর সুপরিচিত ঘোড়ার ছবির যে জঙ্গমতা, সেটা আরও ব্যাপ্ত ভাবে ও নাটকীয়তায় উপস্থাপিত হয়েছে এখানে। ঘোড়া নিয়ে কাজ করেছেন আর একজন শিল্পী অখিলচন্দ্র দাস। তাঁর ছুটন্ত ঘোড়ার সামনের অংশ, গলা ও মাথাটি এমন ভাবে বিস্ফারিত হয়েছে, তা এক তুমুল প্রমত্ততা প্রকাশ করে। যা আজকের দিশাহীন যন্ত্রণাক্ত সময়ের প্রতীক হয়ে ওঠে।

লালুপ্রসাদ সাউ ও সুহাস রায়ের রচনায় পরিস্ফুট হয়েছে মগ্ন সুষমা। মানিক তালুকদারের নারী মুখাবয়বেও অলঙ্করণের মধ্যে অন্তর্লীনতা আছে। বাকি মুখগুলি হয়ে উঠেছে সামাজিক সংকট ও বিপন্নতার প্রতীক। আদিত্য ঘনকাকৃতির একটি ব্লক থেকে বের করে এনেছেন আঁধার সমাচ্ছন্ন একটি মুখ। চন্দ্র-র চোখ বাঁধা মানবীমুখটি হয়ে উঠেছে অন্ধ সময়ের প্রতীক। পঙ্কজের পুরুষ মুখাবয়বটি নিপুণ স্বাভাবিকতায় রচিত। তীব্র হাহাকার ধ্বনিত হচ্ছে অতনুর গড়া মুখাবয়ব থেকে। চক্ষুকোটরে সংস্থাপিত হয়েছে স্তব্ধ সময়ের স্মারক দুটি ঘড়ি। সুনীল কুমার দাস জীবনকে জ্যামিতিকতায় রূপান্তরিত করেছেন। রাধাকৃষ্ণনের রচনাটি অজস্র ছোট মানব-প্রতিমার সমাহারে গড়া। সমবেত প্রয়াসে জীবনের ঊর্ধ্বমুখী গতিকে রূপায়িত করতে চেয়েছেন তিনি। বিমল কুণ্ডু জ্যামিতিক তলবিন্যাসে গড়েছেন প্যাঁচার অবয়ব।

রিলিফ পদ্ধতিতে কাজ করেছেন তিন জন দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়, গণেশ হালুই ও নিরঞ্জন প্রধান। তিন জনের কাজেই দেশীয় ঐতিহ্যের আবহ রয়েছে। লৌকিক ঐতিহ্যের সুস্মিত প্রকাশ আছে মনোজ দত্তের ঘোড়ার রচনাটিতে। মনোজ মিত্রের উপবিষ্ট বানরটি প্রশান্তির প্রতীক। মনু পারেখ তাঁর রচনায় জৈব-রূপান্তরিত বিমূর্ত প্রতিমা গড়েছেন। প্রদীপ মৈত্র গড়েছেন যুদ্ধরত সৈনিকের প্রতীক্ষার আচ্ছাদন। অতীন বসাক গড়েছেন জেগে ওঠা একটি পল্লবিত বৃক্ষ।

পার্থ দাশগুপ্তের রচনাটির নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ। তাপস বিশ্বাস, রাজেন মণ্ডল ও শ্রীকান্ত পাল যে কাজ করেছেন তা আঙ্গিকের দিক থেকে যেমন ব্যতিক্রমী, তেমনই ভাবনাতেও গভীর বোধের দ্যোতক।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy