Advertisement
E-Paper

‘মনে রাখবে, সারা দেশ তোমার দিকে তাকিয়ে’

আইসিএস পরীক্ষায় লিখিত পত্রে পাশ করেও অরবিন্দ ঘোষ ঘোড়ায় চড়ার পরীক্ষা দিতে যাননি, জানা কথা। অজানা তথ্য, প্রথম ভারতীয় আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ওই ঘোড়ায় চড়ার পরীক্ষা দিতেই হয়নি। সত্যেন্দ্রনাথ আমলার চাকরিতে ঢোকার দুই দশক পরে ১৮৮২ সালে ঘোড়ায় চড়া বিষয়টি পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত হয়।

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০০:০০

আইসিএস পরীক্ষায় লিখিত পত্রে পাশ করেও অরবিন্দ ঘোষ ঘোড়ায় চড়ার পরীক্ষা দিতে যাননি, জানা কথা। অজানা তথ্য, প্রথম ভারতীয় আইসিএস সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ওই ঘোড়ায় চড়ার পরীক্ষা দিতেই হয়নি। সত্যেন্দ্রনাথ আমলার চাকরিতে ঢোকার দুই দশক পরে ১৮৮২ সালে ঘোড়ায় চড়া বিষয়টি পরীক্ষার অন্তর্ভুক্ত হয়। যতীন্দ্রনাথ রায় নামে এক বাঙালি দু’বারই পাশ করেন, কিন্তু মেডিক্যাল টেস্টে বাতিল হয়ে যান। লন্ডনে গিয়ে দশটি বিষয়ে ছয় হাজার নম্বরের পরীক্ষা দিতে হত। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে ১৮০০, সংস্কৃতে ৮০০ নম্বরের পরীক্ষা। এ রকমই হরেক তথ্য নিয়ে সাত্যকি নাথ লিখেছেন তাঁর বই নেশন অর দি এম্পায়ার (ফ্রন্টপেজ)। প্রশাসনের ইস্পাতকাঠামো নয়, তাঁর বই আলো ফেলেছে অন্য দিকে। ওই পরীক্ষা দিতে গিয়ে ভারতীয়দের কী কী অসুবিধা হত! উঁচু তলার স্বদেশি আমলাদের নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা পরিষ্কার মাইকেল মধুসূদন দত্তের এক চিঠিতে। পরীক্ষার্থী মনমোহন ঘোষকে লিখছেন তিনি, ‘মনে রাখবে, সারা দেশ তোমাদের দিকে তাকিয়ে।’

‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে খুন করা হয়েছে;/ তারপর আমাকেই আবার খোঁজা হচ্ছে— চায়ের দোকানে,/ কবরস্থানে, গীর্জায়... কিন্তু ওরা আমাকে খুঁজে পেল না/ কোনও দিনও খুঁজে পেল না; কখনো না।’— লিখেছিলেন ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা। সেটা ১৯২৯-৩০। তার কয়েক বছর পরেই, ১৯৩৬-এর ১৬ অগস্ট স্পেনের এই কবিকে গ্রেফতার করে ফ্যাসিস্তরা। সম্ভবত ১৮ বা ১৯ অগস্ট তাঁকে হত্যা করা হয়। আজও তাঁর দেহাবশেষ অনাবিষ্কৃত। গার্সিয়া লোরকা এবং তাঁর কবিতা, নাটক আর জীবন নিয়ে, তাঁর ফ্যাসিবাদ-বিরোধী রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে বাঙালির উৎসাহ অনেক দিনের। তবে সচরাচর তাঁর লেখার অনুবাদ হয়েছে ইংরেজি অনুবাদ থেকে। স্প্যানিশ ভাষা ও সাহিত্য চর্চার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত লোস ইস্পানোফিলোস প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি স্প্যানিশ থেকে বাংলায় অনুবাদের নানা উদ্যোগে ব্রতী। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মালবিকা ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা ভাবনায় ও অনুবাদে (অনুষা)। গার্সিয়া লোরকার অনেকগুলি কবিতা এবং দুটি প্রবন্ধের অনুবাদ ছাড়াও আছে তাঁকে নিয়ে বেশ কয়েকটি মূল্যবান আলোচনা। লেখকরা স্প্যানিশ ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় ব্রতী, ফলে তাঁদের আলোচনায় ব্যবহৃত বহু পঙ্‌ক্তি এবং মন্তব্যও সরাসরি স্প্যানিশ থেকে অনূদিত। আছে গার্সিয়া লোরকার গ্রন্থপঞ্জি ও জীবনবৃত্তান্ত। আশা, স্পেন এবং লাতিন আমেরিকার উনিশটি দেশের প্রধান ভাষাটির সঙ্গে বাংলার সরাসরি লেনদেন নিবিড়তর করে তুলতে লোস ইস্পানোফিলোস অগ্রণী ভূমিকা নেবে।

‘চেহারায় তিনি যতটা শীর্ণ, শরীর ওঁর অতটা অশক্ত নয়। দুর্গাকে মারার দৃশ্যে সর্বজয়াকে বাধা দেবার সময় উনি প্রথমবার এমন বজ্রমুষ্টিতে আমার হাত চেপে ধরেছিলেন যে সে হাত এক ঝটকায় ছাড়ানো আমার সাধ্য ছিল না। সংসারে তিনি তখনও অনেক কাজ করেন।’ চুনিবালা দেবী ওরফে ইন্দির ঠাকরুণকে নিয়ে লিখেছেন সর্বজয়া-র চরিত্রাভিনেত্রী করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘পথের পাঁচালী-কে কেন্দ্র করে নবতমা আর প্রাচীনতমা— খুব কাছাকাছি এসেছিলাম। সেই দিনগুলো আমার কাছে স্মরণীয় আরো এই কারণে যে আমি দেখেছি এক অশীতিপরা অভিনেত্রী শিল্পসৃষ্টির আবেগে অগ্রাহ্য করেছেন তাঁর জরাকে, উপেক্ষা করেছেন শারীরিক ক্লান্তি, উপহাস করেছেন মৃত্যুকে।’ এমনই আরও বিভিন্ন জনের দুর্লভ লেখায় উঠে আসে ‘পথের পাঁচালী’র পরিশ্রমী প্রস্তুতিপর্ব, সত্যজিৎ আর তাঁর কর্মসঙ্গীরা কী ভাবে বদলে দিয়েছিলেন ভারতীয় ছবির ভূগোল, তৈরি করেছিলেন শিল্পের ইতিহাস। ‘প্রসঙ্গ সত্যজিৎ’ নামাঙ্কিত পর পর তিনটি সংখ্যায় প্রকাশ পেল চলচ্চিত্র চর্চা (সম্পা: বিভাস মুখোপাধ্যায়)। উপরোক্ত লেখাটি প্রথম সংকলন ‘পথের পাঁচালী ৬০’ থেকে। এতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষ্ণু দে’র রচনাটিও: ‘কেন এই অসাধারণ পরিচালক বই থেকে নানা বিচ্যুতি করেছেন। মনে হয় যেমন বিভূতিভূষণের জীবনদর্শন ও গ্রামীণ আবেগ এঁরা নিয়েছেন সমালোচনার মধ্যে দিয়ে... কারণ বিভূতিভূষণের ভাবালু কিন্তু সৎ জীবনবোধ সত্যজিৎ রায়ের মত দক্ষ শিল্পীর অনায়ত্ত একথা ভাবা নিষ্প্রয়োজন, ভাবতে হয় যে ঐ জীবনবোধ এই শিল্পীর কাছে অসার, অগ্রাহ্য।’ এক সাক্ষাৎকারে নীতীন বসু বলেছেন ‘‘আমার মনে হয় না ‘পথের পাঁচালী’-র আগে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যে সব ছবি হয়েছে সেই সব ছবিগুলো ‘পথের পাঁচালী’ ছবির স্রষ্টাকে কোনোভাবে অনুপ্রাণিত করেছে।’’ দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের রচনায় ‘পথের পাঁচালী’ সংক্রান্ত তথ্য-নথির সম্ভার— তৈরির সময় টুকরো খবর থেকে ব্যবসায়িক হিসাবপত্র, প্রথম প্রদর্শনী, পুরস্কার, সংবর্ধনা অবধি। দ্বিতীয়টিতে রয়েছে সত্যজিৎকে নিয়ে ‘বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন’; আর তৃতীয়টিতে তাঁর প্রতিটি ছবির ‘চলচ্চিত্র সমালোচনা’। নতুন লেখার থেকে গুরুভার পুরনো লেখার পুনর্মুদ্রণে, এবং তাতেই সংখ্যা তিনটি শুধু প্রামাণ্য হয়ে ওঠেনি, নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সত্যজিৎ-চর্চার দরজা খোলার চাবি। রাধাপ্রসাদ গুপ্তের ‘সত্যজিৎ রায় আর কিছু পুরনো দিনের কথা’, চিদানন্দ দাশগুপ্তের ‘সত্যজিৎ ও রবীন্দ্রনাথ’, মৃণাল সেনের ‘সত্যজিৎ ও অপরাজিত’, সমরেশ বসুর ‘নষ্টনীড় ও চারুলতা’, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘অভিনয়-শিক্ষাদানে সত্যজিৎ রায়’, রাজ্যেশ্বর মিত্রের ‘সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গীতমানস’, পূর্ণেন্দু পত্রীর ‘সত্যজিৎ রায়ের রেখাচিত্র’, গাস্তঁ রোবের্জের ‘সত্যজিৎ রায়: চলচ্চিত্রে মানবতাবাদ’, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘সত্যজিৎ রায়: একজন সমাজ-সচেতন শিল্পী’, উৎপল দত্তের ‘বিদ্রোহী সত্যজিৎ’, এবং শঙ্খ ঘোষের ‘জনঅরণ্য— প্রতিবাদের ছবি’ রীতিমতো নতুন করে ভাবাবে বাঙালিকে, উস্কে দেবে নতুন তর্ক। সম্পাদক স্বয়ং তৈরি করেছেন ‘সত্যজিৎ রায়: তথ্যনামা’, তাতে তাঁর জীবনপঞ্জি, চলচ্চিত্রপঞ্জি, পুরস্কার ও সম্মান।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy