Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

রবীন্দ্রনাথ বিপ্লবী সমিতির সভ্য ছিলেন

দেশোদ্ধার, স্বনির্ভরতা অর্জন, আত্মশক্তির উদ্বোধন— এই সব উদ্দেশে কলকাতার কানাগলিতে গড়ে উঠেছিল এক গুপ্ত সমিতি— হামচূপামূ হাফ্— পরাধীন দেশে প্রথম বিপ্লবী সংগঠন। আদি সেই সমিতির অন্যতম সভ্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথ! কবির এই বিপ্লবী চেতনা, অভিজ্ঞতা, তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব, সমকালীন ইতিহাস প্রামাণিক হয়ে উঠেছে পাঁচুগোপাল বক্সির কলমে: হামচূপামূ হাফ্ ও রবীন্দ্রনাথ (পুনশ্চ, ১৫০.০০)।

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

দেশোদ্ধার, স্বনির্ভরতা অর্জন, আত্মশক্তির উদ্বোধন— এই সব উদ্দেশে কলকাতার কানাগলিতে গড়ে উঠেছিল এক গুপ্ত সমিতি— হামচূপামূ হাফ্— পরাধীন দেশে প্রথম বিপ্লবী সংগঠন। আদি সেই সমিতির অন্যতম সভ্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথ! কবির এই বিপ্লবী চেতনা, অভিজ্ঞতা, তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব, সমকালীন ইতিহাস প্রামাণিক হয়ে উঠেছে পাঁচুগোপাল বক্সির কলমে: হামচূপামূ হাফ্ ও রবীন্দ্রনাথ (পুনশ্চ, ১৫০.০০)। লেখক মনে করেন “রবীন্দ্রনাথ এক সময় শুধু বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি ‘হামচূপামূ হাফ’-এর সভ্যই ছিলেন না,... রবীন্দ্রনাথ উপলব্ধি করেন, ইংরেজ সরকারের দীর্ঘকালব্যাপী ভারতবাসীর ওপর বেপরোয়া শোষণ নির্যাতন অবিচারের অনিবার্য প্রতিক্রিয়া সুতীব্র গণ-অসন্তোষ যার স্বতঃস্ফূর্ত বিস্ফোরণ সশস্ত্র বিপ্লব।”

দেবব্রত চক্রবর্তী তাঁর জার্মানির প্রাজ্ঞতীর্থে রবীন্দ্রনাথ-এর (এম সি সরকার, ১০০.০০) মুখবন্ধে জানিয়েছেন ‘শান্তিনিকেতনে কিংবা জার্মানিতে রবীন্দ্রনাথ জার্মানির বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন।... ফলে তাঁরা যেমন সমৃদ্ধ হয়েছিলেন, তেমনি যোগাযোগ ও ভাববিনিময়ের আন্তঃপ্রক্রিয়ায় রবীন্দ্রনাথেরও দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছিল। এই সব ব্যক্তিত্বের মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে বা তাঁর জার্মানি সফরের সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর পরিচিতির পটভূমিকা নিয়ে এই প্রবন্ধগুলি লিখেছি মাত্র।’

তরুণ ঘটক স্প্যানিশ ভাষায় রবীন্দ্রনাথ-এ (ক্যাম্প, ১৮০.০০) স্প্যানিশভাষী স্রষ্টাদের রবীন্দ্রবিষয়ক রচনাগুলি সংকলন-অনুবাদের সঙ্গে দুর্লভ তথ্যও একত্র করেছেন। স্পেনীয় লেখকদের এই রবীন্দ্রচর্চার অনুবাদ সম্পর্কে তিনি জানিয়েছেন ‘লেখকরা যেমন বুঝেছেন তেমনি লিখেছেন, হুবহু তা মূল রচনার সঙ্গে মেলাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি থেকে বিরত থেকেছি। ওঁরা যেমন বলেছেন আমি তার বাংলা অনুবাদটুকু করেছি মাত্র।’ সম্পাদক অনিকেত মহাপাত্রর মতে ‘ভিক্তোরিয়া ওকাম্পো-র লেখা গ্রন্থটিকে দিয়েছে প্রাণ। ইলদা চেন আপুই, পুরা-ভাসকেস্, হোসে গার্সিয়া নিয়েতো এদুয়ার্দো গোনসালেস লানুসা প্রমুখ বিভিন্ন প্রক্ষেপণ উৎস থেকে রবীন্দ্রনাথের ওপর আলো ফেলেছেন।’

নারীর স্বাধিকার, পল্লি উন্নয়ন, কৃষি, সমবায়, সমাজ, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, বিজ্ঞান, শিক্ষা, পরিবেশ, গ্রন্থাগার ইত্যাদি নানা বিষয়ে রবীন্দ্র ভাবনা নিয়ে লিখেছেন বিশিষ্ট জন— অর্থনীতি সমাজনীতি: রবীন্দ্রচিন্তার অভিমুখ (দে পাব, ৩০০.০০, সম্পা: সেবক জানা)।

শান্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতির আলোয় শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন-এর (রচয়িতা, ৯০.০০) তৃতীয় খণ্ড বেরিয়েছে। এই খণ্ডে প্রাক্তন ছাত্রের দৃষ্টিতে কবির গ্রাম-জীবনের দৈনন্দিনের উন্নয়ন সম্পর্কিত ভাবনা ব্যক্ত করেছেন লেখক। যে বিষয়গুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি, সে সম্পর্কে জানিয়েছেন হরপ্রসাদ সমাদ্দার: ‘কোটায় তাঁর বাল্যজীবনে দেখা সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, আচার-আচরণ, গ্রামীণ জীবনে মানুষে-মানুষে পরস্পরের সম্পর্ক, এলাকার পূজা-পার্বণ, কৃষিকাজে এলাকার মানুষের নৈপুণ্য ও জীবনযাত্রায় গ্রামীণ মানুষের সরলতা...।’

সোহিনী সেনের আলোকচিত্রে সেজে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের ‘লেখন’ অবলম্বনে যাত্রা পথে রবি (আনন্দ, ২৫০.০০)। সোহিনীর স্কুলজীবনে বাংলা হস্তাক্ষরচর্চার জন্যে তাঁর বাবা তাঁকে এনে দিয়েছিলেন কবির লেখন। বহু বছর পরে, যখন ঘুরে বেড়াবার ও ছবি তোলার নেশা পেয়ে বসল তাঁকে, তখনই চলার পথে নতুন করে মানে খুঁজে পেলেন লেখন-এর: “সতেরো হাজার ফুট উঁচুতে উত্তর সিকিম-এর গুরুদোঙমার লেক-এর পাশে দাঁড়িয়ে শ্বাসকষ্টের সঙ্গে অনুভব করলাম হয়তো এর-ই কথা কবি লিখেছেন: দাঁড়ায়ে গিরি, শির/ মেঘ তুলে,/ দেখে না সরসীর বিনতি...’। সারাহান-এর গাঁয়ে ছোট শিব মন্দিরের পাশে গাঁদার ঝোপে প্রজাপতির নাচন মনে করিয়ে দিল যে ‘সে তো নিমেষ গণিয়া বাঁচে, সময় তাহার যথেষ্ট তাই আছে’।... আমার একান্ত নিজস্ব কিছু স্মরণীয় যাত্রা পথের ছবির সঙ্গে ‘লেখন’-এর কিছু কবিতা মিশিয়ে এই দুঃসাহসিক গঙ্গাজলে গঙ্গার-ই অর্চনা।’’

‘জীবদ্দশায় যিনি স্নেহপরায়ণ বউঠান ও তরুণ কবির অনুরাগী প্রেরণাদাত্রী, মৃত্যুর পর তিনিই হলেন কবির প্রধানতম ভাবের প্রথম অনুপ্রেরণা। লরা যেমন পেত্রার্কের ‘মিউজ’ ছিলেন, বা বিয়াত্রিচে ছিলেন দান্তের— ঠিক তেমনি রবীন্দ্রনাথের ছিলেন কাদম্বরী। আর তাই সারা জীবন ধরে রবীন্দ্রনাথ তাঁর গান-কবিতা-ছবির মধ্যে দিয়ে তাঁর হারিয়ে যাওয়া নতুন বউঠানকে খুঁজে গেছেন— নরনারীর সাধারণ প্রণয়-সম্পর্ক হিসেবে এই অন্বেষণকে ব্যাখ্যা করা নিতান্তই বাতুলতা।’— সন্দীপন সেনের অত্যন্ত সুলিখিত রচনা ‘রবীন্দ্রনাথের কাদম্বরী’। কবিকে গুরুদেব-মূর্তির অন্তরাল থেকে বের-করে-আনা তাঁর প্রবন্ধের সংকলন আহাম্মকের রবীন্দ্রচর্চা-র (অনুষ্টুপ, ২৫০.০০) কৈফিয়ত-এ তিনি জানিয়েছেন ‘ভুলে যাওয়া কথাগুলো আবার নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা...।’

রবীন্দ্রনাথের গানের সুরকাঠামো নিয়ে লেখালেখির চল ততটা নেই, যতটা তাঁর ভাব বা কথা নিয়ে হয়। সেই দুরূহ কাজেই কলম ধরেছেন সুধীর চন্দ: রবীন্দ্রসুরের দিগন্ত (প্যাপিরাস, ১৫০.০০)। ‘রবীন্দ্রনাথের গান অবশ্যই মার্গসংগীত— আধুনিক মার্গসংগীত।... তার গীতপ্রকরণ সুনির্দিষ্ট, তার সুরকাব্য যথাযথ গ্রন্থিত, তার প্রকাশভঙ্গি বা গায়কি প্রতিষ্ঠিত— যেমন হয়ে থাকে পাশ্চাত্য ক্ল্যাসিকাল সংগীতে, হয়ে থাকে আমাদের শাস্ত্রীয় সংগীতেও।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

book review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE