Advertisement
E-Paper

শিল্পের বিচিত্র পথে অনায়াস যাত্রী

প্রায় পাঁচ দশক তাঁর ছবিতে মজে থেকেছে বাঙালি। তাঁর ইংরেজি কমিক স্ট্রিপ ‘লিটল ডাকু’ অবাঙালি পাঠকের কাছেও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শৈল(নারায়ণ) চক্রবর্তীকে (১৯০৯-১৯৮৯) নির্দিষ্ট কোনও অভিধায় বেঁধে ফেলা কঠিন।

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০১

প্রায় পাঁচ দশক তাঁর ছবিতে মজে থেকেছে বাঙালি। তাঁর ইংরেজি কমিক স্ট্রিপ ‘লিটল ডাকু’ অবাঙালি পাঠকের কাছেও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শৈল(নারায়ণ) চক্রবর্তীকে (১৯০৯-১৯৮৯) নির্দিষ্ট কোনও অভিধায় বেঁধে ফেলা কঠিন। প্রথমেই মনে পড়বে শিবরামের লেখার সঙ্গে তাঁর অলংকরণের অসামান্য যুগলবন্দির কথা। কার্টুন এঁকেছেন নিয়মিত। আবার ভারতের আধুনিক পাপেট্রিরও পথিকৃৎ তিনি। কার্টুনধর্মী মজার কমিকসের জন্য সুপরিচিত হলেও সিরিয়াস কমিকসও করেছেন বেশ কিছু। ছোটদের জন্য গল্প-কবিতা-ছড়া-প্রবন্ধ কম লেখেননি। ‘সন্দেশ’ পত্রিকায় শৈল চক্রবর্তীর প্রথম অলংকরণ প্রকাশিত হয় ১৩৪০ বঙ্গাব্দে, আর ১৯৪০-এর শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ‘ল্যাবরেটরী’র ছবি আঁকেন তিনি। সত্যজিৎ তাঁর ছবির ভক্ত ছিলেন। তাঁর বহুমুখী কাজের নমুনাগুলি নিতান্তই দুর্লভ, আজকের পাঠকের হাতে তা তুলে দিতে লালমাটি প্রকাশ করেছে শৈল চক্রবর্তী সমগ্র প্রথম খণ্ড (সম্পা: বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়, ৬০০.০০)। আছে ২৩টি কমিকস, সঙ্গে ছবিতে গল্প, কার্টুন, পাপেট্রি, প্রচ্ছদ ও অলংকরণের বহু নমুনা (রঙিন সহ), নানা লেখা এবং ওঁর সম্পর্কে অনেকগুলি লেখা।

‘স মুদ্রের ওপরের তারার আওয়াজ হতে পারে।... চাঁদের তো আবার আটাশ দিনে আটাশ আওয়াজ— সেও হতে পারে।’ এমন বিরল বাক্য দেবেশ রায়ের মতো ঔপন্যাসিকই লিখতে পারেন। তাঁর উপন্যাসে কখনও উত্তরবঙ্গের বানিয়ে-তোলা শহর আর সাবেক গ্রামের আখ্যান, কখনও একুশ শতকের দুই বিশ্বকাপ ফুটবল, কখনও ঘনঘোর কলকাতা ও মৌসুমি বায়ু। এমন পাঁচটি উপন্যাস নিয়ে বেরিয়েছে তাঁর নানাবিধ আত্মরক্ষা/ দুই মলাটে পাঁচটি নভেল (দে’জ, ৩০০.০০)।

বাংলা কাহিনিচিত্র ও তার সঙ্গে যুক্ত উল্লেখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্যবহুল বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান (বাণীশিল্প, ৭০০.০০)। গৌতম চট্টোপাধ্যায়-কৃত এ অভিধানে তাঁর নির্বাচন অনুযায়ী সূচনাকাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত বাংলা ছবির ব্যক্তিত্ব বা সংস্থা ঠাঁই পেয়েছে ঐতিহাসিক, শৈল্পিক, বা বাণিজ্যিক গুরুত্বানুযায়ী। এ যেন এক ইতিহাসের রূপরেখা। ‘তথ্যের শুধু দলিলীকরণ নয়, আখ্যায়নও ঘটেছে... কিন্তু কল্পকাহিনি নয়, তথ্যমূলক।’ মৃণাল সেন লিখেছেন ‘কথামুখ’-এ।

সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনের কর্মসঙ্গী হিসেবে আশীষ বর্মনকে সিনেমার সঙ্গে ওতপ্রোত করে দেখার ফলে তাঁর কথাসাহিত্যিক পরিচিতি নিয়ে তত আলোচনা হয় না। বইওয়ালা থেকে দু’-খণ্ডে প্রকাশিত তাঁর যাবতীয় উপন্যাস নিয়ে যামিনী রায়ের প্রচ্ছদ সংবলিত রাজেশ্বরী এবং অন্যান্য (দু’খণ্ড একত্রে ৫০০.০০) সে সুযোগ এনে দিল। শুরুতেই এক আলোচনায় রুশতী সেন জানিয়েছেন, তাঁর উপন্যাসে ‘আছে সাংসারিক-সামাজিক বিষাদ-হর্ষ নিয়ে, বিপর্যয়-উজ্জীবন নিয়ে একান্ত সভ্য এক স্বাভাবিকতা।’

‘সাহিত্যের যে সংরূপে তিনি প্রায় অর্ধশতক স্বমহিম ছিলেন তাঁর সেই ছোটগল্পই এখনও কোনও যথার্থ সমগ্রতায় বইপাড়ায় সুলভ নয়।’ সম্পাদকের ভূমিকা-য় জানিয়েছেন আশিস পাঠক। তাঁর সম্পাদিত দু’খণ্ডে প্রেমেন্দ্র মিত্রের সমস্ত গল্প (দে’জ, দু’খণ্ড একত্রে ১০০০.০০) প্রকাশ রীতিমতো সুসংবাদ।

অবিভক্ত বাংলার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত— জঙ্গলমহল। সেখানে ব্রিটিশ শাসনের সূচনায় প্রথাগত ভূমিব্যবস্থা বিলোপ করে যে শোষণ শুরু হয়েছিল, তারই বিরুদ্ধে ‘চুয়াড় বিদ্রোহ’ নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ মাহাত-র জঙ্গলমহল, চুয়াড় বিদ্রোহ ও সমকালীন ভূমিব্যবস্থা (সহজপাঠ, ২৭৫.০০)। বঞ্চনা ও বিদ্রোহের গভীর বিশ্লেষণ এ-বই।

তাঁর সমকালীন রাঢ় বাংলার সমাজ-সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডল নিয়ে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসের মধ্যে নিহিত যে সমস্ত পর্যবেক্ষণ, সে আলোচনাই সপ্তর্ষি পালের তারাশঙ্করের উপন্যাস: সমাজ ও রাজনীতি ভাবনা-য় (মুখবন্ধ: তরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। সহজপাঠ, ২৫০.০০)।

বলিউডের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খেলার ছবি ‘লগান’, ‘চক দে ইন্ডিয়া’, ‘পান সিং তোমার’-এ মূল চরিত্রগুলির সঙ্গে ভারত রাষ্ট্রের টানাপড়েনে কতটা কল্পিত সরল ‘নেশন’ বা কতটা জটিলতা ধরা পড়েছে, সেই দ্বিধা-অস্বস্তির ‘ডায়ালেকটিক’টাই শান্তনু চক্রবর্তীর ইতিহাসের সীমানা ছাড়িয়ে/ সিনেমা-সময়-সমাজ-খেলা-সংস্কৃতি (কৃষ্টি, ১৫০.০০) বইয়ে। খেলাধুলার ইতিহাসের সঙ্গে সমাজ-রাজনীতিকে সম্পৃক্ত করে দেখার একটি বিরল চেষ্টা, বাংলা ভাষায়।

যে সব চিহ্ন দিয়ে মেয়েদের একপাশে সরিয়ে প্রান্তিক করে রাখা হয়, সে সমস্ত চিহ্নকে অস্বীকার করতেই শুভেন্দু দাশগুপ্তের সম্পাদনায় চিহ্ন-বদল চিহ্ন-দখল/ বাংলা ব্যঙ্গ-চিত্র-কথায় নারী (মনফকিরা, ১২০.০০)। এ-বই বানানোর উদ্দেশ্য জানিয়েছেন সম্পাদক: ‘চিহ্নের মাধ্যমে যে আলাদা করা, চিহ্নকে যে ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে দেখানো, তার প্রতিবাদ করা।’

সত্যজিৎ রায় আর ঋত্বিককুমার ঘটকের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে নয়, সমকালীন দুই প্রতিভাবান চলচ্চিত্রকার তাঁদের পারস্পরিক শিল্প-অভিপ্রায় নিয়ে কী ভাবতেন, তা নিয়েই ঋতব্রত ভট্টাচার্যের সত্যজিতের ঋত্বিক, ঋত্বিকের সত্যজিৎ (সহজপাঠ, ১৩৫.০০)। বিষয়টি নিয়ে এমন বিশ্লেষণী বই এই প্রথম।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, সেখানকার মানুষ, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক, ঈর্ষা, ভালবাসার কথা। বৈঠকি মেজাজে লিখেছেন হীরেন সিংহরায় নিজের প্রবাসজীবনের কথা: কুঁদুলে প্রতিবেশী ও অন্যান্যরা (সিটাডেল, ২০০.০০)।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy