Advertisement
E-Paper

সৌন্দর্যের ভিতর থেকেই জাগে কবিতার অনুরণন

গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় অনুষ্ঠিত হল রিনি দত্তের একক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষগগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় সম্প্রতি ‘যে জাগায় চোখে নূতন দেখার দেখা’ শিরোনামে আলোকচিত্রের প্রদর্শনী করলেন তরুণ শিল্পী রিনি দত্ত। এটি তাঁর প্রথম একক। শিরোনাম থেকে আভাসিত হয় যে ছবিগুলির ভিতর তিনি রাবীন্দ্রিক অনুষঙ্গ রাখতে চেষ্টা করেছেন। ছবি তোলা তাঁর নতুন প্যাশন।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৪ ০০:০৩
শিল্পী: রিনি দত্ত

শিল্পী: রিনি দত্ত

গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় সম্প্রতি ‘যে জাগায় চোখে নূতন দেখার দেখা’ শিরোনামে আলোকচিত্রের প্রদর্শনী করলেন তরুণ শিল্পী রিনি দত্ত। এটি তাঁর প্রথম একক। শিরোনাম থেকে আভাসিত হয় যে ছবিগুলির ভিতর তিনি রাবীন্দ্রিক অনুষঙ্গ রাখতে চেষ্টা করেছেন। ছবি তোলা তাঁর নতুন প্যাশন। প্রকৃতির সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করে। সেই মুগ্ধতাকে তিনি নিজের ক্যামেরায় ধরে রাখতে চান। সৌন্দর্যের ভিতর থেকে কবিতার অনুরণন বের করে আনা তাঁর ছবি তোলার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।

একটি পরম মুহূর্তের সন্ধান এক জন আলোকশিল্পীর প্রধান সাধনা। ইংরেজিতে যাকে বলে ‘ডিসিলিভ মোমেন্ট’। আমাদের সামনে প্রকৃতি ও জীবন সব সময়ই নানা রূপে, নানা ভাবে ছড়িয়ে থাকে। কিন্তু সব দৃশ্যই সফল আলোকচিত্রের জন্য উপযুক্ত দৃশ্য নয়। এক জন আলোকচিত্রীকে সেই পরম মুহূর্তটির সন্ধান করে যেতে হয়। রিনি তাঁর প্রকৃতি মুগ্ধতা থেকে এই সফল নির্বাচনটি করতে পেরেছেন অনেক ছবিতেই।

প্রদর্শনীটিকে তিনি করে তুলতে চেয়েছেন রবীন্দ্র জন্মসার্ধশতবর্ষে কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। সে জন্য তিনি ১৫০টি ছবি নির্বাচন করেছেন। প্রতিটি ছবিকে যুক্ত করতে চেয়েছেন রবীন্দ্রনাথের কবিতার গান বা কবিতার একটি বা দু’টি লাইনের অন্তর্গত বাণীর সঙ্গে। কবিতা থেকে তিনি ছবিতে আসেননি। ছবিকে যুক্ত করতে চেয়েছেন কবিতার সঙ্গে। অর্থাৎ কবিতার সচিত্রকরণ পদ্ধতির বিপরীত তাঁর পরিক্রমা। দর্শক নিজের মতো করে তার নান্দনিকতা অনুধাবন করতে পারেন। শিল্পী তাকে গানের বাণীর ভাবের ভিতর বিস্তৃত করে তাতে স্বতন্ত্র এক নান্দনিকতা আরোপ করতে চেয়েছেন। এটা তাঁর ছবিগুলিকে বিশেষ তাৎপর্যে উদ্ভাসিত করে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও নিয়ে আসে। রবীন্দ্রনাথের গানের বাণীর অন্তর্গত কবিতায় প্রকৃতির অফুরন্ত ছবি প্রবাহিত হতে থাকে। শিল্পী চেষ্টা করেছেন তাঁর আলোকচিত্রের দৃশ্যতার সঙ্গে উপযুক্ত একটি বাণীকে যুক্ত করে দিতে।

যেমন একটি ছবিতে আমরা দেখি সবুজ পত্রপুঞ্জের প্রেক্ষাপটে দু’টি নীল অপরাজিতা ফুটে আছে। এই ছবিটিকে শিল্পী যুক্ত করেছেন গানের এই বাণীর সঙ্গে “দু’টি প্রাণ এক ঠাঁই তুমি তো এনেছ ডাকি,/ শুভ কার্যে জাগিতেছে তোমার প্রসন্ন আঁখি।” শিল্পী অপরাজিতার এই দৃশ্যটির সঙ্গে একে যুক্ত করে উভয়কেই যেমন নন্দিত করেছেন, তেমনি বাণীটিকে সীমাবদ্ধও করে দিয়েছেন। শিউলি গাছে একটি পূর্ণ প্রস্ফুটিত শিউলিকে শুধু ধরেছেন ক্যামেরায়। সঙ্গে যুক্ত করেছেন গানের সুর “শিউলি বনের মধুর স্তরে/ জাগবে শরৎলক্ষ্মী যবে...।” এই বাণীর খানিকটা আভাস হয়তো ধরা পড়ে ছবিতে। ছবি ও কবিতার সম্পর্কের এই একটি সীমাবদ্ধতা। ছবি একটি মুহূর্তে স্থির। কবিতা সময়ের ভিতর প্রবহমান। এই দুই বিপরীতের মধ্যে কেমন করে সমন্বয় সাধন করা যায় রবীন্দ্রসাহিত্যের চিত্রায়ণে তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সফলতার অনেক ক্ষেত্রের মধ্যে দু’টি দৃষ্টান্তকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। ১৯১২তে প্রকাশিত গগনেন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ চিত্রায়ণ এবং ১৯৩০-এ নন্দলাল বসুর ‘সহজ পাঠ’ প্রথম ভাগের জন্য করা ছবি।

রিনি কোথাও কোথাও এই সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনাকে ছুঁতে পেরেছেন। যেমন, ‘নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল...সর্ষে ক্ষেতে ফুল হয়ে তাই জাগল’ এই সুরের সঙ্গে তিনি যখন যুক্ত করেন দিগন্ত বিস্তৃত ফুটে থাকা সর্ষে ফুলের সৌন্দর্য তখন তা গভীরতর তাৎপর্য পেয়ে যায়। যে ক’টি ছবির কথা উল্লেখ করা হল এখানে সেগুলি সবই ‘ফুল’ পর্যায়ের। এ ছাড়াও শিল্পী ছবিগুলিকে অনেকগুলি পর্যায়ে ভাগ করে বিন্যস্ত করেছেন। যেমন ‘আকাশ’, ‘নৌকা’, ‘দেবতা’, ‘সবুজ’, ‘কাশ’, ‘প্রাণী’ ইত্যাদি। ‘দেব-দেবী’ পর্যায়ের একটি ছবিতে তিনি ধরেছেন গৃভাভ্যন্তরে একটি প্রজ্বলিত দীপশিখাকে। সঙ্গে গানের বাণী “আমি সন্ধ্যাদীপের শিখা/ অন্ধকারের ললাট মাঝে পরানু রাজটীকা।” এই বাকপ্রতিমা সুপ্রযুক্ত। কিন্তু দু’টি গণেশ মূর্তির উপস্থাপনাকে তিনি যখন যুক্ত করেন এই গভীর বাণীর সঙ্গে ‘সত্যমঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে’ তখন বাণীর নিহিত সত্যটি খুবই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।

তা সত্ত্বেও শিল্পীর আলোকচিত্রীয় দক্ষতা, কবিতার বোধ অধিকাংশ ছবিতেই গভীরের ব্যঞ্জনা এনেছে। তবে আরও সুসম্পাদিত হলে, উপস্থাপনায় আর একটু পেশাদারিত্ব থাকলে, আরও অভিনব হয়ে উঠতে পারত প্রদর্শনী।

mrinal gosh photo gallary
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy