Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Poila Baishakh

নববর্ষে আপনার মনোহরণের অপেক্ষায় ধোকা

নববর্ষে নিজের অভিনব রেসিপির ঝুলি নিয়ে হাজির পার্ক হোটেলের দ্য ব্রিজ রেস্তোরাঁর শেফ কৌশিক সাহা। নববর্ষে নিজের অভিনব রেসিপির ঝুলি নিয়ে হাজির পার্ক হোটেলের দ্য ব্রিজ রেস্তোরাঁর শেফ কৌশিক সাহা।

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৭ ১৫:২৫
Share: Save:

নবর্ষের সকাল সকাল ধোঁকা খেতে কেমন লাগবে! এই ধোঁকা বছরভর খেতে হলেও যে কারওর আপত্তি থাকবে না এ কথা হলফ করে বলা যায়। ভ্রূ কুঁচকে যাচ্ছে কেন? আরে বাবা এ ধোঁকা সে ধোঁকা নয়। আদ্যপান্ত সুস্বাদু অভিনব কড়াইশুঁটির ধোঁকা খেলে হাসিটা অনেক চওড়া হয়ে যাবে এই ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে পারি। সত্যি বলতে কী পাঠককুলকে বিভ্রান্ত করার ইচ্ছে বিন্দুমাত্র নেই। বোঝাবার ভুল মাত্র। আসলে এ বারের পয়লা বৈশাখে দ্য পার্কের শেফ কৌশিক সাহা এক অসাধারণ স্বাদের কড়াইশুঁটির ধোঁকা বানিয়েছেন। আছে আরও অনেক কিছুই। ছোট্ট ছোট্ট ফুলকো লুচি ছোলার ডাল সহযোগে, কলকাতা ভেটকির ফিঙ্গার, কাঁচালঙ্কা মুরগি, মাটন কষা, স্টিমড ছানার পুডিং-সহ আরও অনেক কিছুই।

কাঁচা আমের জল জিরা

আগুন গরমে তেতে পুড়ে ঠান্ডা ঘরে ঢুকতেই সামনে এল সুদৃশ্য কাঁচের গ্লাসে বরফ ঠাসা কনকনে ঠান্ডা সবজেটে এক শরবত। দেখে খুব একটা আহামরি মনে না হলেও এক চুমুকেই তৃষ্ণার্ত প্রাণটা জুড়িয়ে যাবে। কাঁচা আমের সঙ্গে আছে টাটকা পুদিনার স্নিগ্ধ গন্ধ। আর টাটকা জিরে ভাজার মিলমিশে আমের শরবত প্রাণ মন ঠান্ডা করার সঙ্গে সঙ্গে খিদের বোধও জাগিয়ে তুলবে।

উপকরণ:
কাঁচা আম: ৫ টা (মাঝারি সাইজের)

আম পানা: ১০০ মিলি
চিনির সিরাপ: ৭৫ মিলি
বরফ কুচি: ২ কাপ
পুদিনা বাটা: ২ চামচ
বিট নুন: ১ চামচ
জিরে ভাজা গুঁড়ো: ২ চা চামচ

প্রণালী: কাঁচা আম সেদ্ধ করে নিয়ে ব্লেন্ডারে পুদিনা পাতার সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে বরফ দিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। বিট নুন ও জিরে ভাজা গুঁড়ো মিশিয়ে কাঁচের গ্লাসে ঢেলে ওপর থেকে আম পানা ঢেলে ভাল করে নেড়ে নিয়ে পরিবেশন করতে হবে। প্রয়োজনে আরও কিছুটা বরফ দেওয়া যেতে পারে।

কড়াইশুঁটির ধোঁকার ডালনা

ছোলার ডাল ছেড়ে ধোঁকায় হঠাত্ কড়াইশুঁটি কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শেফ কৌশিক লাজুক হেসে জানালেন ‘বাই মিসটেক!’ আকাশ থেকে পড়া চোখের দিকে তাকিয়ে শেফের সলাজ হাসি। আসলে এক অনাবাসী বাঙালির সাধ হয়েছিল ধোঁকার ডালনা খাওয়ার। শেফের কাছে আবদারও ধরেছিলেন। কিন্তু খাবার পরিবেশনের আগে শেফ দেখলেন এক মহা ভুল করে ফেলেছেন। ধোঁকার জন্যে ছোলার ডাল ভেজাতে বেমালুম ভুলে গেছেন। তখনই বুদ্ধিটা মাথায় এল। কড়াইশুঁটির ধোঁকা বানিয়ে পরিবেশন করলেন। মনে কিঞ্চিৎ দুঃশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু প্রথম চোটেই কিস্তি মাত। তখন থেকেই হিট শেফের কড়াইশুঁটির ধোঁকার ডালনা।

ধোকার উপকরণ

ছাড়ানো কড়াইশুঁটি: ২০০ গ্রাম
জিরে: ১চামচ
হিং: এক চিমটি
আদা: এক টুকরো
কাঁচালঙ্কা: ৪/৫ টা
নারকেল কোরা: ৩ টেবল চামচ
নুন, চিনি: স্বাদ মতো
সর্ষের তেল: ভাজার জন্যে

গ্রেভির উপকরণ

হিং, তেজপাতা, জিরে, কাঁচালঙ্কা: ফোড়নের জন্যে
পেঁয়াজ বাটা: ২ টেবল চামচ
আদা ও রসুনবাটা: ২ টেবল চামচ
কাশ্মিরী লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চামচ
টোম্যাটো বাটা: ৪ টেবল চামচ
জিরে বাটা: ১ চামচ
পোস্ত ও কাজুবাদাম বাটা: ২ টেবল চামচ করে
গরম মশলা গুঁড়ো: সামান্য
নুন, চিনি: স্বাদ অনুযায়ী
ভাজার জন্যে সর্ষের তেল
গাওয়া ঘি – ১ চামচ

প্রণালী: ফুটন্ত জলে সামান্য খাবার সোডা দিয়ে কড়াইশুঁটি দিয়ে পাঁচ মিনিট রেখে জল ঝরিয়ে ফেলুন। আদা, কাঁচালঙ্কা, নারকেল কোরা দিয়ে কড়াইশুঁটি মিক্সারে পেস্ট করে নিন। কড়াইতে তেল দিয়ে জিরে ও হিং ফোড়ন দিয়ে কড়াইশুঁটি বাটা দিয়ে হাল্কা আঁচে নেড়ে শুকনো করে নিন। নুন চিনি মেশাতে ভুলবেন না। ট্রেতে তেল মাখিয়ে কড়াইশুঁটির পেস্ট ভাল করে ছড়িয়ে নিয়ে ধোকার আকারে টুকরো করে কেটে ছাঁকা তেলে ভেজে রাখুন। গ্রেভির জন্যে কড়াইতে তেল দিয়ে হিং, জিরে, কাঁচালঙ্কা ও তেজপাতা ফোড়ন দিন। এর মধ্যে পেঁয়াজ, আদা রসুনের পেস্ট দিয়ে ভাল করে কষে নিতে হবে। এরপর টোম্যাটো পেস্ট, লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে কষে নিয়ে সামান্য গরম জল ঢালতে হবে। এর পর কাজু বাটা আর পোস্ত বাটা দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে গরম মশলা ও ঘি ছড়িয়ে নামিয়ে নিন। গরম ভাত বা রুটি দিয়ে জমে যাবে।

কাঁচালঙ্কা মুরগি

কাঁচা লঙ্কাও খাবেন এক গাদা অথচ ঝাল লাগবে না। এমন সোনার পাথর বাটি বানানো শেফ কৌশিকের পক্ষেই সম্ভব। ঘিয়ে ভাজা মুরগির টুকরোর পরতে পরতে মৃদু কাঁচা লঙ্কার সুবাস। মিহি কাজুবাদামের স্বাদে ভরা এই চিকেন প্রিপারেশনে আছে টাটকা জিরে বাটার স্বাদ আর অপূর্ব গন্ধের মিলমিশ। এক বার খেতে শুরু করলে থামা মুশকিল। যারা চিকেন অপছন্দ করেন তারাও কাঁচা লঙ্কা মুরগির অনবদ্য স্বাদে মোহিত।

উপকরণ

চিকেন ড্রামষ্টিক: ৬ পিস
সেদ্ধ পেঁয়াজ বাটা: ১৫০ গ্রাম
আদা ও রসুন বাটা: ২ টেবল চামচ
কাঁচালঙ্কা: ১০০ গ্রাম ( বীজ ছাড়িয়ে নুন জলে সেদ্ধ করে পেষ্ট করে রাখতে হবে)
কাজুবাদাম বাটা: ১০০ গ্রাম
জিরে বাটা:১ চামচ
নুন: স্বাদ অনুযায়ী
ঘি: ৫০ গ্রাম
গরম মশলা গুঁড়ো: সামান্য
তেজপাতা: ২টো
সাজানোর জন্যে: কাঁচালঙ্কা

প্রণালী: চিকেনের টুকরো পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকনো করে রাখুন। কড়াইতে ঘি দিয়ে তেজপাতা ফোড়ন দিন। সুগন্ধ ছাড়লে আদা ও রসুন বাটা দিয়ে ভাল করে কষুন। জিরে বাটা দিয়ে নেড়েচেড়ে চিকেন ড্রামষ্টিকগুলো দিয়ে ভাল করে নেড়েচেড়ে কষে নিন। চিকেন আধ সেদ্ধ হলে এতে সেদ্ধ পেঁয়াজ বাটা দিয়ে আবার কষতে থাকুন। মিনিট দুয়েক পর কাজুবাদাম বাটা মিশিয়ে ঢিমে আঁচে নাড়াচাড়া করে গরম জল ঢেলে দিন। চাপা দিয়ে মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে নিলে চিকেন সেদ্ধ হয়ে যাবে। এর ওপর বাটা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে সামান্য গরম মশলা ছড়িয়ে সামান্য ঘি দিয়ে গরমা গরম ফুলকো লুচি সহযোগে পরিবেশন করুন।

তথ্য: সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

ছবি: অনির্বাণ সাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE