Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

ভাঙল প্রাচীন গাছ, যশোর রোডে শুধু সবুজের দেহ

রাস্তার ধারে ঘাড় গুঁজে পড়ে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন গাছগুলি।

ধরাশায়ী: প্রাণ হারাল বহু প্রাচীন গাছ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

ধরাশায়ী: প্রাণ হারাল বহু প্রাচীন গাছ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৫:৪১
Share: Save:

মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। বিষয়, যশোর রোডের ধারে প্রাচীন গাছ কেটে সড়ক সম্প্রসারণ। গাছ বাঁচাতে শুরু করেছিলেন বনগাঁর পরিবেশপ্রেমীরা।

সেটা ছিল বছর তিনেক আগের ঘটনা। আমপান পরবর্তী যশোর রোডের চেহারা দেখে ভেঙে পড়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা। রাস্তার ধারে ঘাড় গুঁজে পড়ে রয়েছে শতাব্দী প্রাচীন গাছগুলি। যত দূর চোখ যায় সেই একই দৃশ্য। ভেঙে না পড়ে যশোর রোডের ধারে ফের নতুন করে বৃক্ষরোপণের ডাক দিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।

ক্ষতিগ্রস্ত গাছের সংখ্যা কত, তা জানতে সমীক্ষা করছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএএইচআই)। সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শনিবার পর্যন্ত জানা গিয়েছে, বারাসত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটার পথে শতাধিক গাছ ভেঙে পড়েছে। গাছের ডাল ভেঙেছে অসংখ্য। সঠিক সংখ্যাটা জানতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।’’

অতীতে যশোর রোডের প্রাচীন গাছগুলিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি তুলেছিলেন বৃক্ষপ্রেমীরা। সেই দলে ছিলেন বনগাঁ শহরের বাসিন্দা, কবি বিভাস রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘শতবর্ষ প্রাচীন গাছগুলি ধ্বংস হয়েছে জেনে মন ব্যথায় ভরে আছে। বেআইনি ভাবে যখন কাটা হচ্ছিল, তখনও কষ্ট পেয়ে অন্যদের সঙ্গে পথে নেমেছিলাম। পরিবেশের উপরে এর প্রভাব পড়বেই।’’

যশোর রোড (৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক নামেও পরিচিত) সম্প্রসারণের জন্য বছর তিনেক আগে বারাসত, অশোকনগর, হাবড়া এবং বনগাঁয় পাঁচটি উড়ালপুল বা রেলসেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। সমীক্ষায় বলা হয়েছিল যশোর রোডের ধারের গাছ কাটা প্রয়োজন। বনগাঁয় গাছ কাটার কাজ শুরুও হয়। এরপরেই গাছ বাঁচিয়ে সড়ক সম্প্রসারণের দাবিতে সরব হন বৃক্ষপ্রেমীরা। পথে নেমে গান-কবিতা-নাটক, মূকাভিনয়, মৌনী মিছিলের মাধ্যমে তাঁরা গাছ বাঁচানো আর্জি জানান। গাছ বাঁচানোর দাবি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়, একটি মানবাধিকার সংগঠন। বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারধীন। যশোর রোডে গিয়ে দেখা গেল বহু গাছ ভেঙে মাটিতে শুয়ে আছে। কিছু গাছ ডালপালা খুইয়ে কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যত দূর চোখ যাচ্ছে শুধুই সবুজের দেহ। বনগাঁর পরিবেশপ্রেমীরা মনে করেন যশোর রোডের কয়েকশো বছরের পুরনো গাছগুলি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। গাছ ভেঙে পড়ায় এলাকার বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশের উপরে তার প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাচীন ওই গাছগুলিতে দেশি-বিদেশি পাখিরা এসে ভিড় করত। খেতের পোকা-মাকড় খেয়ে পাখিরা ফসল রক্ষা করত। শিরীষ গাছ ‘রেন-ট্রি’ নামে পরিচিত। এই ক্ষতি অপূরণীয় বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

এ দিকে, গাছ ভেঙে পড়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতেও চর্চা শুরু হয়েছে। বনগাঁর এক তরুণী লিখেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে নিজেদের একটু সামলে নিয়ে সকলকে নতুন করে গাছ লাগাতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, গাছগুলি আমাদের প্রাণ বাঁচিয়েছে।’’ অবশ্য, পাল্টা পোস্টও উঠে এসেছে। লেখা হয়েছে, ‘‘প্রাচীন গাছগুলি নিয়ে আন্দোলন করে রেলসেতু তৈরি রুখে দিয়ে কী লাভ হল? সেই তো ঝড়ে ভেঙেই পড়ল। শুধু শুধু উন্নয়নটা আটকে দেওয়া হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE