Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মাঝ রাতে চলল গুলি, জখম যুবক

পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ যুবকের নাম রাহুল সিংহ (ওরফে আপ্পু)। তাঁর দিদি রূপাদেবী জানান, রাত ১২টার খানিক আগে একটি বিয়েবাড়ি থেকে ভাই বাড়ি ফিরেছিলেন।

ঘটনাস্থলে। নিজস্ব চিত্র

ঘটনাস্থলে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০১:২৯
Share: Save:

মাঝরাতে চলল গুলি। জখম হয়েছেন এক যুবক। তৃণমূলের দাবি, ওই যুবক দলীয় কর্মী। শনিবার, দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের এ-জোনের আকবর রোড এলাকার ঘটনা। অভিযুক্ত দু’জন ও তাঁদের সঙ্গীরা স্থানীয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গুলিবিদ্ধ যুবকের নাম রাহুল সিংহ (ওরফে আপ্পু)। তাঁর দিদি রূপাদেবী জানান, রাত ১২টার খানিক আগে একটি বিয়েবাড়ি থেকে ভাই বাড়ি ফিরেছিলেন। অভিযোগ, ওই সময়ে অভিষেক রায় (ওরফে রকি) ও অশোক রায় (ওরফে কাঞ্চা) মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি আসেন। আপ্পুকে তাঁরা জানান, তাঁদের দলের এক জনকে মারধর করেছেন আপ্পুর সঙ্গীরা। আপ্পু তাঁদের জানান, পরে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। অভিযোগ, এর পরেই আপ্পুকে পাশের রাস্তায় ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করা হয়। আপ্পুর দাদা রাজেশ বলেন, ‘‘আমিও ঘটনাস্থলে ছিলাম। রকি ও কাঞ্চার হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। ভেবেছিলাম ভয় দেখাতে বার করেছে। গুলি চালিয়ে দেবে, বুঝতে পারিনি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, রকির পরিবারের অবৈধ মদের কারবার রয়েছে। আরও অভিযোগ, লোকালয় থেকে দূরে জঙ্গলের মাঝে একটি ক্লাব গড়ে সেখানে নানা অসামাজিক কাজকর্ম চালান অভিষেক ও তাঁর সঙ্গীরা।

পুলিশ জানায়, একটি গুলি রাহুলের পেটের বাঁ দিক ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ডিএসপি হাসপাতালে ও পরে গাঁধী মোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত রাহুলের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।

অভিষেকের পরিবারের অভিযোগ, রাতেই রাহুলের সঙ্গীরা পুলিশের সামনেই বাড়িতে ভাঙচুর করেন। অভিষেকের স্ত্রী সুস্মিতা বলেন, ‘‘বাড়িতে একা ছিলাম। রাহুলের পক্ষ নিয়ে কয়েক জন বাড়িতে হামলা করে। ছেলেকে কোল থেকে ফেলে দেয়। মহিলারাও ছিলেন দলে। স্কুটি ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। আবার কখন হামলা হবে ভেবে আতঙ্কে আছি।’’ তাদের সামনেই হামলা হয়েছে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। এর পরে রবিবার সকালে অভিষেক ও অশোক যে ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত সেখানে লোকজন চড়াও হন বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রবিবার সকালে আকবর রোডের ১৯ নম্বর স্ট্রিটে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, চারদিকে আতঙ্কের পরিবেশ। পড়ে রয়েছে একটি গুলির খোল। নর্দমার পাশে পড়ে একটি চপ্পল। তা রাহুলের বলে অনুমান বাসিন্দাদের। স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাতে একটা আওয়াজ শুনতে পান আমার স্ত্রী। সকালে বাজারে বেরিয়ে জানতে পারি, গুলি চলেছে। তার পরে থেকেই খুব আতঙ্কে আছি।’’ অভিষেকের পাশের বাড়িতেই থাকেন চম্পা ছাপাইত। তিনিও বলেন, ‘‘রাতে গুলির শব্দে জেগে উঠি। ভয়ে মেয়েকে বলি, দরজা-জানলা বন্ধ করে দিতে। মনে হচ্ছে, এখানে আর থাকা যাবে না।’’ তিনি আরও জানান, খানিক বাদে বেশ কয়েক জন শাবল, গাঁইতি, ভোজালি নিয়ে এসে অভিষেকের বাড়িতে চড়াও হন। সেই সময় পাশে থাকা তাঁর গাড়িতেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ করেন চম্পাদেবী।

স্থানীয় ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রাজীব ঘোষ জানান, দু’টি ক্লাবের কয়েক জনের মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় সামান্য অশান্তি হয়। দু’পক্ষকে নিয়ে রবিবার সকালে বসে বিষয়টি মিটিয়ে দেবেন বলেছিলেন। কিন্তু তার আগে রাতেই দু’পক্ষের মধ্যে ফের গোলমাল বাধে। রাহুল ও অভিষেক, দু’জনের পরিবারের তরফেই দাবি করা হয়েছে তাঁরা তৃণমূল কর্মী। কাউন্সিলর বলেন, ‘‘এখন সবাই নিজেদের তৃণমূল বলেন। তবে আপ্পু আমাদের দীর্ঘদিনের কর্মী।’’ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ (সড়ক) অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা গুলি করেছেন তাঁদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চয়ই উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।’’ পুলিশ জানায়, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Injury Firing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE