Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Pond

প্রশাসনের নাকের ডগায় পুকুর ভরাট, ভয়ে মুখ বন্ধ বহরমপুরবাসীর

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসন কোনও জলাশয় ভরাট করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলেও বহরমপুরে এই সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ।

প্রশাসনিক ডামাডোলের সুযোগ নিয়ে চলছে পুকুর ভরাটের কাজ। নিজস্ব চিত্র।

প্রশাসনিক ডামাডোলের সুযোগ নিয়ে চলছে পুকুর ভরাটের কাজ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ১২:৪৫
Share: Save:

মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ-প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রানিবাগান-পিলখানা এলাকায় একটি এক বিঘার থেকেও বড় পুকুর ভরাটের কাজ রমরমিয়ে চলছে। অভিযোগ, পুকুর ভরাটকারী প্রোমোটার ‘অত্যন্ত প্রভাবশালী’ হওয়ার কারণে এলাকাবাসীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসন কোনও জলাশয় ভরাট করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলেও বহরমপুরে এই সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। বহরমপুর পুরসভার মেয়াদ প্রায় বছর দুয়েক আগেই শেষ হয়েছে। আর তার পর রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক ডামাডোলের সুযোগ নিয়ে শহরে শুরু হয়েছে একের পর এক পুকুর ভরাটের কাজ। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, এই প্রোমোটাররা এতটাই প্রভাবশালী যে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে অভিযোগ জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যায় না।

রানিবাগানের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘২০১৯ সালে বহরমপুর শহরের এক প্রোমোটার পিলখানা এলাকায় মনোবীক্ষণ কেন্দ্রের গলিতে ওই পুকুর ভরাটের কাজ প্রথম শুরু করেন। তারপর ‘জলাভূমি রক্ষা কমিটি’-র চাপে পুকুর ভরাটের কাজ সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু গত প্রায় এক মাস ধরে আবার ওই পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। দিনে রাতে যখনই প্রোমোটারের লোকজন সুযোগ পান, ভ্যান বা ছোট গাড়ি করে রাবিশ ফেলে পুকুরটিকে ভরাট করে চলেছেন।’’

ওই এলাকার আরও কিছু বাসিন্দা জানান, প্রথম পর্যায়ে যখন পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয়েছিল তখন রাতের দিকেই বেশি কাজ হত এবং সেই সময় আশেপাশের সমস্ত গলির মুখ বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হত যাতে এলাকার কোনও বাসিন্দা পুকুর ভরাট দেখতে না পান।

ওই ব্যাক্তিদের আরও বক্তব্য, প্রথম পর্যায়ে ওই পুকুরে প্রচুর পরিমাণে রাবিশ ফেলা হয়েছিল, তার ফলে ওই পুকুরের গভীরতা প্রায় ৮০-৮৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। এখন গোপনে ওই পুকুরের একটি পাঁচিলের ধার থেকে রাবিশ ফেলে ভরাটের কাজ চলছে। এর আগে প্রশাসন পুকুর ভরাট বন্ধ করলেও, পুকুরটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন,‘‘আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, এই পুকুর ভরাটের সঙ্গে অমিতাভ পাল নামে বহরমপুরের এক ব্যক্তি সরাসরি জড়িয়ে রয়েছেন। পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ মহলে তাঁর অবারিত যাতায়াত। তাই নতুন করে আবার যখন পুকুর ভরাটের কাজ চলছে তখন স্থানীয় লোকজন আর সাহস করে মুখ খুলতে পারছেন না।’’

বহরমপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলরতন আঢ্য বলেন, ‘‘পুকুর ভরাট কোনও রকম ভাবেই বৈধ নয়। এলাকার পুকুর এবং জলাশয়গুলি ভরাট হয়ে গেলে শহরের জল কোথা দিয়ে যাবে? আমি আগেই বলেছি বহরমপুরে তৃণমূল এবং পৌরসভার এক শ্রেণির লোক লুটেপুটে খাচ্ছে। টাকা রোজগারের জন্য তারা পুকুর এবং জলাশয় ভরাটে মদত দিচ্ছেন।’’ বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে বহরমপুর পৌরসভা এলাকায় এত ব্যাপকভাবে পুকুর ভরাটের অভিযোগ ছিল না। এখন দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করার জন্য আমি এই দল এবং পৌরসভা থেকে সরে এসেছি।’’ নীলরাতনবাবু জানান, বহরমপুর শহরে অবৈধ ভাবে পুকুর এবং জলাভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে কিছুদিনের মধ্যেই বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চলেছেন তিনি।

অভিযুক্ত প্রোমোটার আমিতাভ পাল বলেন , ‘‘আমি বহরমপুর শহরের একজন সম্মাননীয় ব্যাবসায়ী, আমার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করবার জন্য কিছু লোক মিথ্যে প্রচার করছেন। আমি ওই পুকুরে এক বস্তা মাটিও ফেলিনি, পুকুর ভরাট তো দূরের কথা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pond Baharampur Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE