Advertisement
E-Paper

মামলা না তুললে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হবে, সালিশি সভায় হুমকি ধর্ষিতাকে

মামলা না তুললে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হবে রাস্তায়— জেলাশাসকের কাছে গিয়ে গ্রামের সালিশি সভার এমনই হুমকির কথা জানালেন গণধর্ষণের শিকার এক আদিবাসী বধূ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৩০

মামলা না তুললে বিবস্ত্র করে ঘোরানো হবে রাস্তায়— জেলাশাসকের কাছে গিয়ে গ্রামের সালিশি সভার এমনই হুমকির কথা জানালেন গণধর্ষণের শিকার এক আদিবাসী বধূ।

তাঁর নালিশ, মামলা তোলাতে জো়ট বেঁধেছেন ধর্ষণে অভিযুক্তদের পরিজনেরা। সালিশি সভা ডেকে নির্যাতিতাকে একঘরে করে দেওয়া, তাঁর সঙ্গে কথা বললে জরিমানা করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

রবিবার বিকেলে গ্রামে ওই সালিশি সভা বসার পরে বিহিত চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন মহম্মদবাজারের চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ওই বধূ। সোমবার তিনি দেখা করেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুবিমল পালের সঙ্গে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, দুই শীর্ষ আধিকারিকই এ বিষয়ে তাঁকে সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

নির্যাতিতার নালিশ, ‘‘আমাকে যারা ধর্ষণ করেছে, তাদের আত্মীয়েরা আমার বিরুদ্ধে গ্রামের লোকদের খেপিয়ে তুলেছেন। সালিশি সভা ডেকে আমাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে— এক নয় মামলা তোলো, না হলে তোমাদের বাড়ির সবাইকে গণপিটুনি দেওয়া হবে। আমাকে বিবস্ত্র করে গ্রামে ঘোরানো হবে।’’ সরকারি দুই আমলাকে ওই মহিলা জানিয়েছেন, তাঁকে গ্রামের নলকূপ ও নদী থেকে পানীয় জল নিতে দেওয়া হচ্ছে না। গ্রামের লোকের সঙ্গে কথা বললে, ৫ হাজার টাকা জরিমানা করাও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘ওই মহিলা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। গ্রামে যাতে তাঁর কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখতে বিডিও-কে নির্দেশ দিয়েছি।’’ প্রশাসনিক সূত্রে খবর, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নির্য়াতিতাকে জানিয়েছেন— ‘স্থানীয় থানায় গিয়ে অভিযোগ করুন। আইনের মধ্যে থেকে যা কিছু করার, তা পুলিশ করবে।’

নির্যাতিতা ও তাঁর স্বামী জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ডে ওই মহিলার শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু তিনি থাকেন ভুতুরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বাপের বাড়িতে। দুই সন্তানের মা ওই বধূর অভিযোগ, গত ১১ জুলাই তিনি গণধর্ষণের শিকার হন। ভূতুরার আরও ৬ জন মহিলার সঙ্গে গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চরিচার উদয়দিহির জঙ্গলে গিয়েছিলেন শালপাতা ও ছত্রাক কুড়োতে। মহিলার অভিযোগ, সে দিন দুপুরে ওই জঙ্গলে মদের আসর বসিয়েছিল জনাছয়েক আদিবাসী যুবক। কোনও ভাবে জলছুট হয়ে পড়েছিলেন ওই মহিলা। তাঁকে একা পেয়ে গণধর্ষণ করে তিন জন। দীর্ঘক্ষণ পরে আলুথালু পোশাকে জঙ্গল ছেড়ে খয়রাডিহি গ্রামে পৌঁছন ওই মহিলা। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। মেডিক্যাল পরীক্ষায় গণধর্ষণের প্রমাণও মেলে।

মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে আমগাছির বাসিন্দা আনন্দ সরেন, বাবলু সরেন এবং বাবুরাম মুর্মূকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পরেই আদিবাসী গাঁওতা এই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে সরব হয়। গাঁওতার বক্তব্য, মহিলার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা নিন্দনীয়। কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে। পুলিশের বক্তব্য ছিল, অভিযোগ করেছেন মহিলা। তাঁরই বয়ানকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই চার্জশিটও দাখিল করার কথা।

নির্যাতিতার অভিযোগ, তার আগেই মামলা তুলতে তাঁর উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছে। ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ারও প্রস্তাব এসেছিল। তা তিনি মানেননি।

গত কাল বিকেলে আদৌ কি ভুতুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে এমন সালিশি সভা বসেছিল? আদিবাসী গাঁওতার সম্পাদক রবীন সরেন বলেন, ‘‘এ রকম কোনও খবর নেই। তবে সত্যিই এমন হয়ে থাকলে গ্রামের লোকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে মহিলার অভিযোগের সত্যতাও খতিয়ে দেখা উচিত পুলিশের।’’

Threat Kangaroo Court Rape Victim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy