সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে বুধবার কেন্দ্র জানিয়েছে, ‘মানবিকতার খাতিরে’ অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবি ও তাঁর আট বছরের ছেলেকে দেশে ফেরানো হবে। কিন্তু সোনালি ‘বাংলাদেশি’ বলে নিজেদের অবস্থানে অনড় নরেন্দ্র মোদী সরকার। দেশে ফিরলেও সোনালিকে প্রমাণ করতে হবে, তিনি বীরভূমের পাইকরের বাসিন্দা ভদু শেখেরই কন্যা। ঘরের মেয়ের অপেক্ষায় থাকা পরিজনের প্রশ্ন, আর কত অপমান ও হেনস্থা সহ্য করতে হবে সোনালিকে!
পাইকর দর্জিপাড়ার বাড়ি থেকে সোনালির দাদা সুরজ শেখ বৃহস্পতিবার বলেন, “বংশ পরম্পরায় আমাদের বাস এদেশে। কেন বোনেদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে? কেন্দ্র কি ওদের বাংলাদেশি হওয়ার প্রমাণ দিতে পারবে?” স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, সোনালির বাবা-মা-দাদুর নাম ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসাইআর) পর্বে মান্যতা পাওয়া ২০০২-এর ভোটার তালিকায় রয়েছে। পাইকর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আঞ্জুরা বিবি বলেন, “সোনালিদের ভারতীয় প্রমাণ করা কঠিন নয়। ওঁর বাপ-ঠাকুর্দা যে এখানে বহু বছর বসবাস করেন, তা আমরা জানি। তা হলে সোনালি কেন বাংলাদেশি হবেন?”
অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধৃত সপুত্র সোনালি, সুইটি বিবি-সহ ছ’জন বাংলাদেশের আদালত থেকে সোমবার জামিন পেয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছে, যদি সোনালি নিজেকে ভদু শেখের কন্যা বলে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তা হলে তিনি নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করতে পারবেন। তাঁর পুত্রও ভারতীয় নাগরিক হবে। সোনালি, সুইটি বিবির পরিবারের ক্ষোভ, এ দেশের বৈধ নাগরিকদের তথ্যপ্রমাণ যাচাই না করে ভিন্ দেশে বিতাড়িত করে দেওয়া কম অন্যায় নয়। সোনালির স্বামী দানিশ শেখ, সুইটি বিবি ও তাঁর দুই নাবালক সন্তানকেও একসঙ্গে ফেরানো উচিত ছিল বলে তাঁদের দাবি।
পাইকরে একই পাড়ার বাসিন্দা দানিশের মা তথা সোনালির শাশুড়ি দিলরুবা বিবি বলছেন, “বৌমা-নাতি ফিরছে, খুব ভাল। তবে আমার ছেলেকে কেন আনা হচ্ছে না? আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও সম্পর্কও নেই।” তাঁর সংযোজন, “বাংলাদেশি বলে দেগে দিলেই হবে না। সে কথা প্রমাণ করতে হবে কেন্দ্রের সরকারকে।” রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলামের দাবি, “সোনালি-সহ ছ’জনই ভারতীয়। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার এক অন্তঃসত্ত্বা, বাচ্চা-সহ নিরীহ গরিবদের কী ভাবে হেনস্থা করছে, সেটা সবাই দেখছেন।”
সোনালিদের সাহায্যে বাংলাদেশে যাওয়া মফিজুল শেখ এ দিন জানালেন, ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে তাঁকে ফেরানো হবে জানতে পেরে খুশি সোনালি। কিন্তু স্বামী, সুইটি ও তাঁর দুই সন্তানকে কেন একসঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে না, তিনি বুঝতে পারছেন না। মফিজুল যোগ করেন, “এ দিন সোনালিকে স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো হয়েছে। শরীর ভাল নয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম। সোনালি আশঙ্কা করছেন, এই টানাপড়েনের মাঝে বাংলাদেশেই না তাঁর সন্তানের জন্ম হয়!”
রুজিরুটির টানে সোনালি ও সুইটিদের পরিবারের একাধিক সদস্য বহু বছর দিল্লির বস্তিতে থাকতেন। সোনালির বোন করিশ্মা, মা জ্যোৎস্না, সোনালির মেয়ে আফরিনেরা দিল্লিতেই আছেন। দানিশের সঙ্গে সোনালির বিয়ে হয় ১১ বছর আগে। দানিশের মা-বাবাও এক সময় দিল্লিতে থাকতেন। পরে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এলেও দানিশেরা আসেননি।
বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারাধীন। সোনালি বিবি সংক্রান্ত যা কিছু তথ্য আছে, কেন্দ্র আদালতকে জানিয়েছে। আদালত যা রায় দেবে, সেটা কেন্দ্র মেনে চলবে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)