Advertisement
E-Paper

বাপ রে কী ডানপিটে

যেখানে দেশের আদ্ধেক লোক ইংরিজির কথা ভাবলেই হেঁচকি তুলে মরছে, আর বাকি আদ্ধেক লোক ভুল ইংরিজির ফাঁক বোজাতে অ্যাকসেন্ট মেরে আলু দর করছে, সেখানে আমি ইংল্যান্ডে গিয়ে চোস্ত ইংরিজিতে খোদ ইংরেজদের মুখের ওপর তাদের চোরের বেহদ্দ চোর বলে এলাম, অ্যাঁ!

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০০:০৩

যেখানে দেশের আদ্ধেক লোক ইংরিজির কথা ভাবলেই হেঁচকি তুলে মরছে, আর বাকি আদ্ধেক লোক ভুল ইংরিজির ফাঁক বোজাতে অ্যাকসেন্ট মেরে আলু দর করছে, সেখানে আমি ইংল্যান্ডে গিয়ে চোস্ত ইংরিজিতে খোদ ইংরেজদের মুখের ওপর তাদের চোরের বেহদ্দ চোর বলে এলাম, অ্যাঁ! যেমন সাহস, তেমনি হিউমার, তেমন কথা-বোনা! সাধে কি দেশ জুড়ে হাততালি ননস্টপ! দেশটা বেশ লাগে আমার। এখানে রোজ রোজ নতুন জীবন শুরুর চান্স। এই হয়তো আমাকে চালিয়াত বলল, টিভি বাইটে পারলে কামড়ে খায়, কাল আবার বিপ্লবী বলে মাথায় তুলে নাচল, বাথরুম যাব বললেও নামাল না। দিনমান সায়েবদের পা চাটছে, তাদের নাকখোঁটাও নকল করে ফাটিয়ে দিচ্ছে, আবার নেটিভের হাতে সাহেবের খাবি খাওয়া দেখে অ্যায়সা উল্লাস-হিস্টিরিয়ায় লাফাচ্ছে, আমার বক্তিমে ভয়াবহ ভাইরাল! একবগ্গা নীতিবাগীশ জেঠুমার্কা দেশে মজা নেই। ইন্ডিয়ায় ফ্লেক্সিব্‌ল ফিলসফি। সলমন খানকে মার্ডারার বলে গাল পাড়ব, তা বলে কি প্রেম দেব না? আলবাত, হুড়িয়ে তার সিনেমা দেখতে যাব, বক্স অফিসে তাকে রাজা করে দেব! কারণ একটা মানুষ তো আসলে অনেকগুলো মানুষ, তা ছাড়া সকালের নীতি রাত্তিরে বাসী মনে হয়। আমার বেশ ক’টা ঝঞ্ঝাটে কাল কাটছিল, এখন আচমকা পেট্রিয়ট নাম্বার ওয়ান, হপ্তাদুয়েকের জন্য নিশ্চিন্দি।

আসলে, ইতিহাস-ফিতিহাস কেউই পড়েনি, কিন্তু বাপ-দাদাদের চাবুক খাওয়ার এক-আধটা মিহি দাগ তো থেকে যায় রে বাবা। লন্ডন গিয়ে টিকিট কেটে কোহিনুর দেখার সময় সব ভারতীয়র মনে চিনচিন বেজে ওঠে: আমার গয়নাটা আলমারি থেকে হাতিয়ে নিয়ে, আমাকেই বলছে, খাঁজকাটা ডিজাইন দেখে শেখ! অভ্যেস আছে বলে আমরা তাড়াতাড়ি অপমান গিলে ফেলি, কিন্তু একটা ফ্যান্টাসি আলগা মাথা তোলে, ব্যাটাদের বেশ মুখের ওপর প্রহার দেওয়া যেত কিঞ্চিৎ! হিন্দি সিনেমার ভিলেনের নানা বজ্জাতি সয়ে যে বহু ক্ষণের পুষে রাখা ধোলাইটা হিরো শেষ সিনে আছড়ায়, সেটা আসলে দর্শকদের সব্বার সম্মিলিত মানসিক ঢিশুয়াঁ। আমিও এখন ইচ্ছাপূরণের নায়ক। যে কিনা খোদ গ্যাটম্যাটগণকে ঠেস দিয়ে এই অনবদ্য রসবাক্যও বানাতে পারে: ব্রিটিশ রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না, কারণ ঈশ্বরও ইংরেজদের অন্ধকারে বিশ্বাস করতে পারেন না!

অবশ্য শুধু ইংরেজের বিরুদ্ধে রাগঝালের ব্যাপার নয়। সারা জীবনটাই তো সক্কলের কাটছে নাগাড়ে ইনসাল্ট সইতে সইতে। বস-কেও সে কিছু বলতে পারে না, বউকেও না। সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরতে ভয় করে বলে বার-এ বসে চেঁচিয়ে একটু মুখ খারাপ করছে, পাশের টেবিল থেকে কে খেঁকিয়ে দিল। আর ফেরার পথে যদি অটোওলার খপ্পরে পড়ো, হয়ে গেল! নাকে ব্যান্ডেজ, হৃদয়ে প্লাস্টার। হাতকাটা মস্তান, কানকাটা নেতা, ফুটকাটা ফেসবুক-লোফারদের কাছে ক্লকওয়াইজ আর অ্যান্টি-ক্লকওয়াইজ ঠ্যাঙানি খেতে খেতে হোলসেল উচ্ছের মতো সত্তা নিয়ে ঘুরছেফিরছে। তাই দিগন্তে কেউ কাউকে মুঠ্‌ঠি পাকিয়ে ঠিকঠাক কিলোচ্ছে দেখলেই প্রত্যেকের ভেতরে একটা লাল টকটকে পিস রিভেঞ্জাসনে স্ট্রেচ করতে থাকে। আর সেই খারটাকে যদি গোটা দেশের দুশো বছরের অত্যাচারিত হওয়ার চালচিত্রের সঙ্গে, পড়ে পড়ে মার খাওয়ার দীর্ঘ অপমানের সঙ্গে গেঁথে দেওয়া যায়, বিশাল জোশে ফিরতি-রদ্দার তৃপ্তি-জুস গোটা জাতের কলজে ঠান্ডা করে দেয়।

এই হ্যাপি সিজনে মাঝখান থেকে সনিয়াজির কাছে তেড়ে বকুনি খেয়ে গেলাম। যাকে বলে ব্লাস্ট। একটা ঘরোয়া মিটিঙে বলেছিলাম, নিত্যি হাউকাউ করে পার্লামেন্ট আটকে দেওয়াটা খুব ঠিকঠাক কাণ্ড নয়। যদি পরের বার কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে আর বিজেপি এ ভাবে দিনের পর দিন সমস্ত পণ্ড করে, আমরা কি ভাল চোখে দেখব? না কি বলব, আলোচনা করাই গণতন্ত্রের একমাত্র ভদ্র-কাজ? কোত্থেকে কোন পেঁচো এটা লিক করে দিয়েছে মিডিয়ায়, ব্যস, নেত্রী ফায়ার। আমার এই একটা মুশকিল। ফটরফটর কথা বলে ফেলা থেকে নিজেকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারি না। হ্যাঁ, ঠিকই, এটা বেফাঁস কমেন্টেরই কান্ট্রি। এখানে ফটাস বলে দেওয়া যায়, মেয়েরা জিন্‌স পরে বলেই ছেলেরা তাদের রেপ করে। এও বলা যায়, চাষিরা প্রেমে ব্যর্থ হয়েছিল, বা যৌনতায় অক্ষম হয়ে পড়েছিল বলেই আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আমার কথাগুলো খটখটাস হলেও, এমন গামবাট-বিবৃতি তো নয়। তীব্র, কিন্তু ভিত্তিহীন নয়। আমি তো পড়েছি শুনেছি, ভেবেছি। আমি তো চিনের পাঁইপাঁই উন্নয়নের চেয়ে ভারতের গদাইলস্কর উন্নয়নকে অনেক মানবিক, তাই শ্রেয় বলে পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখি রে ভাই। আসলে এখানে, পলিটিক্সের আর শিক্ষিত মনোভঙ্গির অ্যাক্কেরে দেখাসাক্ষাৎ নেই। টুকি দিয়েও নয়। ইন ফ্যাক্ট, ম্যান্ডেট দিয়ে সেই মোলাকাত ব্যান করা হয়েছে। দলিতের সঙ্গে ঠাকুরের বিয়েও সই, তবু বিদ্যেবুদ্ধির সঙ্গে রাজনীতির প্রণয়? নেভার!

এই লিউকোপ্লাস্টের মেলায় আমি আবার মোদী সম্পর্কে ফস বলেছিলাম, ছিল একটা ঘৃণিত লোক, হল কিনা আধুনিকতা আর প্রগতির অবতার! ইমেজ-লম্ফনের জন্যে স্যালুট প্রাপ্য। যায় কোথা, ক্যাঁওম্যাও! আরে, বিরোধী টিমের লোক রিভার্স সুইপে ছক্কা মারলে হাততালি দেব না? সেটাই তো স্পোর্টসম্যান স্পিরিট! এরা বলবে, ও-সব স্পিরিট উবিয়ে দাও! নিজ কোলেই শুধু সুপ টানব। তাতে থাই পুড়ে গেলে যাবে। আমি অবশ্য খাস এলিট কায়দায় সুপ খেতে জানি। তাই, এই ফুটনোটও খোদাই করে যাব, এক দিন ইংরেজরা এসেছিল বলেই আজ আমার এই চোস্ত ইংরিজি, আর আপনার ভেংচি-মুখ আপুনি দেখার ডিবেট অর্গানাইজ করার ধক ওদের আছে বলেই আমার রেলাবান রেভোলিউশন!

লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়

shashi tharoor congress upa england history
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy