Advertisement
E-Paper

রাজনীতি রেহাই দিল না যাযাবরকেও!

কবি ভুলে যাও কাব্য, গো-রক্ষা হবে। সাহিত্যিক এ বার চিন্তা-ভাবনা বিসর্জন দাও, গো-রক্ষা হবে। তুলিটা এই বেলা নামিয়ে রাখো শিল্পী, গো-রক্ষা হবে। কিন্তু যাযাবর! তুমি কী ভুলবে? তুমি তোমার জীবনটাই ভুলে যাও।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৪

কবি ভুলে যাও কাব্য, গো-রক্ষা হবে। সাহিত্যিক এ বার চিন্তা-ভাবনা বিসর্জন দাও, গো-রক্ষা হবে। তুলিটা এই বেলা নামিয়ে রাখো শিল্পী, গো-রক্ষা হবে। কিন্তু যাযাবর! তুমি কী ভুলবে? তুমি তোমার জীবনটাই ভুলে যাও। এখন গো-রক্ষা হবে।

জম্মু-কাশ্মীরে স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের হাতে আক্রান্ত এ বার যাযাবর পরিবার। ঘর-গেরস্থালি, তল্পিতল্পা, সম্বল-সংসার— সর্বস্ব গুটিয়ে নিয়ে আজ এ মুড়োয় তো কাল সে মুলুকে— পাহাড়ি রাজ্যের যাযাবর সম্প্রদায় শত শত বছর ধরে অভ্যস্ত এতেই। গবাদি পশুর খাবার জোটাতেই এ মরসুমে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাড়ি দেওয়া ফি বছর। কিন্তু, শত শত বছরে কী-ই বা যায় আসে? দেশে যে এখন গো-রক্ষার কাল! তল্পিতল্পা গুটিয়ে যেখানে খুশি যাও, সঙ্গে গরু থাকা চলবে না। গরু নিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্যত্র যেতে দেখলেই স্বঘোষিত গো-রক্ষকদের মনে হবে, যাযাবররা গরু পাচারকারী। সুতরাং সশস্ত্র হামলা হবে, আক্রোশ আছড়ে পড়বে, কোনও বালক নিখোঁজ হবে, কোনও নাবালিকা রক্তাক্ত হবে, আর যাবতীয় গবাদি পশু গায়েব হয়ে যাবে।

এ কোন ধরনের দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছে দেশে? গো-রক্ষার নামে প্রায় রোজ কোথাও না কোথাও অশান্তি, হিংসা, আইন হাতে তুলে নেওয়া, নির্মম আক্রমণ, রক্তপাত। এঁদের হাতে গো-রক্ষার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন কে? যদি কেউ দিয়ে না থাকেন, তা হলে কীসে বলীয়ান হয়ে এঁরা এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন রোজ রোজ? আইন হাতে তুলে নেওয়ার একের পর এক জঘন্য দৃষ্টান্ত, তা-ও প্রশাসন চুপ কেন? এর শেষ কোথায়?

গো-রক্ষা কোনও রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার হতে পারে কি না, সে প্রশ্নের নানা উত্তর হতে পারে। সে তর্কে যদি না-ও যাই আপাতত, তা হলেও কিন্তু অস্বস্তি চাপা থাকছে না। গরুকে রক্ষা করার নামে প্রতি দিন আমরা সহ-নাগরিকদের হেনস্থা করছি। ভারতবাসী হয়ে রোজ অন্য কোনও ভারতবাসীকে গো-সেবার নামে চরম লাঞ্ছনা দিচ্ছি। গরু পাচার হল কি হল না, তা স্পষ্ট করে জানার আগেই রক্তস্রোত উন্মাদ হয়ে উঠছে। কিন্তু, একটা বছর নয়েকের মেয়েকে রক্তাক্ত হতে দেখে হৃদয় বাষ্পাকুল হচ্ছে না। এর নাম রাজনীতি? এর নাম সমাজসেবা? এর নাম জাতীয়তা বোধ? এর নাম হিন্দুত্ব? এর নাম মনুষ্যত্ব? না, এর নাম দুর্বৃত্তায়ন। কে এই দুর্বৃত্তায়ন রুখবেন, কী ভাবে নৈরাজ্য থামবে? উত্তর মিলছে না আপাতত।

উত্তপ্রদেশের নতুন পুলিশ প্রধান বলেছেন, তাঁর রাজ্যে কোনও ধরনের দুর্বৃত্তায়ন তিনি বরদাস্ত করবেন না। গো-রক্ষার কী হবে? ডিজি বলেছেন, আইন হাতে তুললে গো-রক্ষকও রেহাই পাবেন না। শুনতে বেশ ভাল লাগল কথাগুলো। কাজটাও কথার সঙ্গে মিলবে তো? দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Gau Rakshak Nomad Family Attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy