‘শীতের শিউলিরা’ (৩০-১১) শীর্ষক দীপক দাসের লেখাটি ভাল লাগল। এ বিষয়ে দু’-এক কথা বলতে চাই। লেখাটিতে তিনি এ রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলা উল্লেখ করেছেন, তার মধ্যে আমাদের জেলার বহড়ুর হাটেরও উল্লেখ আছে। ছোটবেলায় আমাদের এখান থেকে দশ-বারো কিমি দূরত্বে ‘বড়ুর হাট’-এ বাঁক কাঁধে গুড় নিয়ে যেতে দেখেছি প্রতিবেশীদের। পরে ভ্যান ও সাইকেলে। আমাদের এ দিকে রসের ‘হাঁড়ি’ থেকে ভাঁড়, ডাবরি, কলসির মতো শব্দই বেশি ব্যবহার করা হয়। টিনের পাত্র বা প্লাস্টিকের ভাঁড়ে কখনও ভাল মানের রস বা গুড় পাওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে নলেন রস-গুড়ের যে সুবাস তা মেলা ভার, কেননা টিন বা প্লাস্টিক পোড়ানো যায় না। গরম ধোঁয়ায় ভাঁড় পোড়ানোর পর তা বেশ খানিক ক্ষণ উপুড় করে রাখার ফলে তাতে যে রস সংগ্রহ করা হয়, তার সুবাস অন্য রকম। প্লাস্টিকের ভাঁড় ব্যবহারকারী পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার শিউলিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ও-দিকের মাটিতে খুব ভাল মানের ভাঁড় হওয়া মুশকিল, তা ছাড়া ভেঙে যাওয়ার ভয় টিন বা প্লাস্টিকের ভাঁড়ের চেয়ে অনেক বেশি, দামও বেশি। সচরাচর গাছের রসের আন্দাজ করে তার পর ভাঁড় কেনা হয় না। শিউলিদের এমনিতেই মরসুমের শেষে অনেক কলসি-ভাঁড় থেকে যায়। সেগুলো রেখে দেওয়া হয় পরের বছরের জন্য। গাছের রসের পরিমাণ বুঝে কোন আকারের ভাঁড় কোন গাছে পাতা হবে, ঠিক করেন শিউলি। তবে গুড় বিক্রির নাগরি বা ডাবরি প্রতি বছরই নতুন কেনা হয়।
অনেকে মনে করেন, তিন কাটের, নদিয়া ঘেঁষা বর্ধমানে বলে জের কাটের, রসে সামান্য টক গন্ধ হতে পারে— লিখেছেন প্রবন্ধকার। না, ভাল শীত থাকলে তে-কাটের রসেও টক গন্ধ আসে না। এই প্রসঙ্গে রসের একটা প্রধান অংশের কথা বলা হয়নি। প্রতি দিন সকালে ‘গাছ নামানো’র সময় আবার ভাঁড় পেতে দেওয়া হয়, দুপুর বা বিকেলে গাছ কাটার সময় সেই ভাঁড় নামানো হয়, এটাই ঝারা বা ঝারা রস। তিন দিনের কাটার পালা শেষ হলে, সকালবেলা রস সংগ্রহের পরে পাতা ভাঁড় দুপুর বা বিকেলে ঝারা তো হলই, আবার ভাঁড় পেতে দেওয়া হয় এবং পরের দিন সকালে যে ঝারা হয় তাকে বলা হয় ‘অ্যাঁড়া ঝারা’। তখনও ভালই রস ঝরছে দেখলে আবারও ভাঁড় পেতে দেওয়া হতে পারে। পরের দিন সকালে যে রস পাওয়া যায় তা ‘নিম ঝারা’। ভাল শীতের সময় ঝারা রস এবং তার থেকে চমৎকার গুড় সম্ভব। আবার গরম পড়লে, গাছে ‘মেদা’ জমে কাটা রসেও টক ভাব আসতে পারে। টক রস জ্বাল দিয়ে কুল বা চালতার চাটনি হয় চমৎকার।
অরবিন্দ পুরকাইত, গোকর্ণী, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
রাষ্ট্রের দায়িত্ব
ইন্দ্রাণী চক্রবর্তীর ‘বিনা মজুরির দিনমজুর’ প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, মেয়েদের ক্ষমতায়ন কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তবে বেশ কিছু বিষয় এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। প্রথমত, নারী শিক্ষা প্রসার ঘটাতে হবে। এখনও অনেক কন্যাসন্তান উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না। দ্বিতীয়ত, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করতে হবে। তৃতীয়ত, নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কেবলমাত্র সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করলে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। বেসরকারি নানা বিভাগে নারীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, অসংগঠিত নারী-শ্রমিকদের অবস্থা শোচনীয়। বছরের পর বছর তাঁরা নানা অসুবিধা নিয়ে কাজ করছেন। চতুর্থত, রাজনীতিতে নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণ করতে হবে। আজকাল আমরা গ্রামাঞ্চলে কিংবা মফস্সল এলাকায় মহিলা জনপ্রতিনিধিদের দেখতে পেলেও বোঝা যায়, বাড়ির পুরুষ সদস্য তাঁদের পরিচালনা করছেন। তা ছাড়া গণপরিবহণে নারীরা এখনও নির্ভয়ে চলাচল করতে পারেন না। রাস্তার পাশে পর্যাপ্ত গণশৌচাগার নেই। সরকারি টাকা মহিলাদের অ্যাকাউন্টে দিলেও বাড়ির পুরুষ সেই টাকা বেশির ভাগ সময় আত্মসাৎ করেন। এ সবের প্রতিকারের দায়িত্ব কোনও ব্যক্তিবিশেষের নয়, রাষ্ট্রের।
সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
খরচের স্বাধীনতা
‘নারীর ক্ষমতায়ন’ বিষয়টি বহুচর্চিত হলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সাধারণ মহিলাদের জীবনযাপনে খুব একটা উন্নতি পরিলক্ষিত হয়নি। মহিলাদের কাজে যোগদানের হারের নিরিখে পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলি তো বটেই, চিন, জাপান, এমনকি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের তুলনায় ভারত এখনও বেশ পিছিয়ে আছে। ইন্দ্রাণী চক্রবর্তীর ‘বিনা মজুরির দিনমজুর’ (১৩-১১) শীর্ষক প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্য আমার শুরুর বাক্যটিকেই মান্যতা দেয়।
শহরাঞ্চলের শিক্ষিত মেয়েদের কর্মজগতে প্ৰবেশ না করার পিছনে কারণ হিসাবে এক দিকে যেমন তিনি উল্লেখ করেছেন, অনেকের বাড়িতে সন্তানদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্ব পালনের উপর বেশি গুরুত্ব প্ৰদান, অপর দিকে এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ওই শিক্ষিত মহিলাদের দরকষাকষির ক্ষমতা আপেক্ষিক ভাবে কম। আর একটি কারণের কথাও আমার মনে পড়ছে। ছোঁক: অন ফুড, ইকনমিক্স অ্যান্ড সোসাইটি বইতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় মহিলাদের যথেষ্ট হারে শ্রমশক্তির অংশ না হওয়ার প্রসঙ্গে ‘উইমেন অ্যান্ড ওয়ার্ক’ শিরোনামের একটি প্ৰবন্ধে তাঁর মা অধ্যাপক নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গবেষণার ভিত্তিতে লিখেছেন, “যে বয়সে উন্নত দেশের মেয়েরা শ্রমশক্তিতে যোগদানের প্ৰস্তুতি নেয়, সেই বয়সে ভারতীয় মেয়েরা বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। তাই শ্রমশক্তিতে প্ৰবেশ করা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এর ফলে হাজার রকম গৃহকর্মে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা, কিছুটা সংসারের অর্থ সাশ্রয়ের জন্য, কিছুটা বাধ্য হয়ে (কারণ তাঁদের প্রায়ই শুনতে হয় ‘বাইরে বেরিয়ে রোজগার তো করো না, অন্তত সংসারটা সামলাও’)। এই কাজগুলির মধ্যে যেমন পড়ে রান্না করা, বাসন মাজা, তেমনই পড়ে মাঠঘাট, বনবাদাড় থেকে আনাজ সংগ্রহ করা, খেতের খাল থেকে শাড়ির আঁচল ব্যবহার করে কুচো চিংড়ি ধরা ইত্যাদি। সেই আনাজ আর কুচো চিংড়ি দিয়ে সুস্বাদু ঘণ্ট রাঁধেন হয়তো তাঁরা, তবে সে রান্না যে তাঁদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিনিময়ে, সেটা ভুলে গেলে চলবে না।”
আমাদের ছোটবেলায় বাবার দেওয়া হাতখরচের টাকায় মা শুধু আমাদের তিন ভাইবোনের আবদারই মেটাতেন না, পাড়া-প্রতিবেশীদেরও প্রয়োজনে অর্থ-সাহায্য করতেন। পরিচিত এক মহিলাকে দেখেছি ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর জমানো টাকা দিয়ে কী ভাবে স্বামীর চিকিৎসা চালিয়েছেন। অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ধরনের শর্তহীন ‘সর্বজনীন মৌলিক আয়’ সম্পর্কেই বলেছেন, লক্ষ লক্ষ মহিলাকে মর্যাদা ও সুস্থিতি প্রদানের মাধ্যমে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ সামাজিক গতিশীলতাকে এক নতুন রূপ দিতে সাহায্য করেছে। প্ৰবন্ধকারও সঠিক ভাবে, মহিলাদের কর্মনিযুক্তির বিকল্প হিসাবে একে না দেখে পরস্পরের পরিপূরক হিসাবেই দেখতে পরামর্শ দিয়েছেন।
গৌতম নারায়ণ দেব, কলকাতা-৭৪
অস্পষ্ট
আমরা বিভিন্ন দ্রব্যের যে মুখবন্ধ করা প্যাকেট কিনে থাকি, তার মোড়কের গায়ে উৎপাদনের তারিখ, ব্যবহারের সময়সীমা, মূল্য, পরিমাণ, ব্যাচ নম্বর ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য স্পষ্ট ভাবে ও পাঠযোগ্য বড় হরফে উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু বাস্তবে, এই নিয়ম সঠিক ভাবে মানা হয় না। বহু ক্ষেত্রে তথ্যগুলি অত্যন্ত ছোট ও অস্পষ্ট ভাবে লেখা থাকে। অনেক সময় মোড়কের একটা অংশ তথ্যগুলিকে আড়াল করে রাখে। আরও একটা সমস্যা হল— লেখাগুলির ব্যাকগ্রাউন্ড কালার ও ফন্ট কালার প্রায় একই হওয়ায় সহজে চোখে পড়ে না। যাঁদের এই বিষয়গুলি দেখা দরকার, তাঁরা সকলেই জেগে ঘুমোচ্ছেন।
ইন্দ্রনীল ঘোষ, লিলুয়া, হাওড়া
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)