অমিত শাহ
বিজেপি এক নতুন স্বর্ণযুগের ডাক দিল। সে স্বর্ণযুগে বিরোধীদের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। সেখানে নীচে থেকে উপরতলা পর্যন্ত সমস্তটাতে থাকবে শুধুই বিজেপি-র একচ্ছত্র প্রতাপ। ভুবনেশ্বরে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে অমিত শাহের মুখে এই কথাগুলো শোনা গেল।
আপাতদৃষ্টিতে এর মধ্যে অন্যায়ের কিছু নেই। দলীয় সভাপতি হিসাবে নিজের দলকেই শ্রেষ্ঠ আসনে দেখতে চাইবেন, সর্বব্যাপী প্রভাবে দেখতে চাইবেন, এটা স্বাভাবিক বলেও মনে হতে পারে। কিন্তু, এর মধ্যে একটা বিপদের ইঙ্গিত আছে। ইতিহাসবিদদের একটা বড় অংশ আক্ষেপ করেন, এ দেশের প্রামাণ্য দলিলের চিত্র নৈর্ব্যক্তিক তথা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মূলত রাজানুগ্রহে সমসাময়িক যে বর্ণনা পাই, তাতে প্রজাদের দৈনন্দিন জীবনের চেয়েও রাজকীর্তনের প্রাবল্য বেশি। ফলে, সেই বর্ণনাতে যে স্বর্ণযুগের উল্লেখ পাই, তাতে প্রজানুরঞ্জনের বর্ণনা পাই মূলত রাজদৃষ্টিকোণে। এবং কোনও বর্ণনাতেই বিরোধী কোনও স্বরের কোনও উল্লেখ মাত্র থাকে না।
গণতন্ত্র আমাদের বিরোধী স্বরের তাত্পর্যের স্বাদ বুঝিয়েছে। শাসকের সর্বব্যাপী একচ্ছত্র আধিপত্য গণতন্ত্রের পক্ষে অনুকূল নয় বুঝেই দূরদর্শী সংবিধান প্রণেতারা বিরোধীদের মর্যাদার উপর জোর দিয়েছিলেন প্রথমাবধি। বিরোধী এবং শাসকের সমালোচনামূলক সঙ্ঘাতের সহাবস্থানেই এই গণতন্ত্রের শিকড়— এই বাক্য বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের বাহকরা মান্য করে এসেছেন। বিরোধী বিহীন এক পরিস্থিতি বস্তুত শাসককে শিথিল হওয়ার অবকাশ করে দেয়। করে তোলে দায়বদ্ধতা-পরান্মুখ।
শুধু বিজেপি-ই নয়, একচ্ছত্র আধিপত্য কামনার দোষে দুষ্ট সব শাসকদলই। ৩৪ বছরে সিপিএম, ৬ বছরে তৃণমূল কংগ্রেস, অথবা অন্য শাসকদলের ভাবনাতেও এই এক জায়গায় আশ্চর্য মিল। ইতিহাস মনে করিয়ে দেবে, তার ফল না গণতন্ত্র, না সেই দল, কারও পক্ষেই স্বস্তিদায়ক হয়নি। বিরোধীকণ্ঠ থাকুক। সমালোচনা থাকুক। আর সেই সমালোচনার আগুনে দগ্ধ হয়েই ক্রমাগত শুদ্ধ হোক এই ব্যবস্থা। শাসকের কাঙ্খিত হওয়া উচিত এটা। কারণ, তাতে সুফল মেলে সাধারণ মানুষের। আর সেটাই যদি হয়, তা হলে আখেরে লাভ ওই শাসকদলেরই। এতএব, একচ্ছত্র একাধিপত্যের বাসনা ত্যাগ করে ভিন্নস্বর সমন্বিত বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই আস্থা ফেরাক শাসক। এই মুহূর্তের দাবি একমাত্র এটাই।