Advertisement
E-Paper

সান্তা কম পড়িয়াছে

সান্তা ক্লজ় মিলিতেছে না পূর্ব জার্মানিতে, এমনকী বিজ্ঞাপন দিয়াও না।

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০

সান্তা ক্লজ় মিলিতেছে না পূর্ব জার্মানিতে, এমনকী বিজ্ঞাপন দিয়াও না। মার্কিনদের মতো কেবল বৃহৎ বিপণিতে সান্তা ক্লজ়কে বসাইবার পক্ষপাতী নহেন জার্মান বাবা-মা। তাঁহারা ক্রিসমাসে বাড়ির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করিয়া আনেন সান্তাকে। সাধারণত ছাত্ররাই কিছু হাতখরচ পাইবার আশায় লাল জামা ও সাদা দাড়িতে সাজিয়া শিশুদের মনোরঞ্জন করিতেন। কিন্তু ইদানীং পড়ার চাপ বাড়িয়াছে, পরিবারের সহিত সময় কাটাইবার ইচ্ছা বাড়িয়াছে। তৎসহ তরুণ প্রজন্ম ধর্মীয় রীতিনীতির প্রতি আকর্ষণও হারাইয়াছে। তাই সান্তা সাজিবার লোক জুটিতেছে না। কিন্তু ধর্মে অনাগ্রহই কি একমাত্র কারণ? সান্তা ক্লজ় আর শিশুর সেই বর্ষীয়ান বন্ধু নাই, যে দরিদ্র ঘরেও চিমনি গলিয়া স্বপ্নের উপহারটি রাখিয়া যায়। বৃদ্ধ সন্ত এখন বড়দিনের বাৎসরিক উৎসবের বিপণন-যন্ত্র হইয়া উঠিয়াছেন। শিশুরা কত শীঘ্র এই সত্য আন্দাজ করিতে পারে, তাহা ভিন্ন প্রশ্ন। কিন্তু তরুণেরা তাহা যথেষ্ট বুঝিয়াছে, তাই কেবল অর্থের জন্য এই ‘অর্থহীন’ কাজ করিতে তাহারা আর রাজি নহে। যাহা ছিল পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক, এখন তাহা পরিণত হইয়াছে বাজারের দেনাপাওনার সম্পর্কে। পূর্বে পরিবারের কোনও সদস্য লাল পোশাক এবং শুভ্র গুম্ফ-শ্মশ্রুতে সজ্জিত হইয়া পরিবার-প্রতিবেশীদের বিস্তর আমোদ দিতেন এবং উপহার বণ্টন করিতেন। শিশুদের কলহাস্য সেই নির্দোষ অভিনয়কে অভিনন্দিত করিত।

তে হি নো দিবসাঃ গতাঃ। এখন ঘণ্টাপ্রতি ভাড়ায় সান্তা ক্লজ় খুঁজিতে হয়। সান্তা-অভিনেতাদের বেশ কয়েকটি সংগঠন তৈয়ারি হইয়াছে। শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে সদস্যদের পরিচয় যাচাই করিবার কাজটিও তাঁহারা করিয়া থাকেন।

প্রশিক্ষণও চালু হইয়াছে, যাহাতে শিশুর প্রতি দুর্ব্যবহারের অভিযোগ কেহ তুলিতে না পারে। অর্থাৎ শিশুদের আনন্দবিধানের কাজটি স্বতঃস্ফূর্ততা হারাইয়া পেশাদারি পরিষেবায় পরিণত হইয়াছে। মার্কিন মহাবিপণিগুলিতে সান্তা-অভিনেতারা দিনে দশ ঘণ্টা কাজ করেন, এবং দুই-তিন মাসে প্রায় ত্রিশ হাজার শিশুর সহিত কথা বলিয়া থাকেন। সম্প্রতি এক পেশাদার সান্তা বাবা-মায়েদের নিকট আবেদন করিয়াছেন, শিশুপ্রতি টাকা পাইয়া থাকেন তিনি। তাঁহার সময়ের দাম রহিয়াছে। শিশুরা সান্তার কোলে বসিয়া দিদিমার মৃত্যু কিংবা বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ লইয়া দুঃখ করিয়া সময় নষ্ট করিলে লোকসান সান্তার। পছন্দের উপহার কী, সেটুকু জানাইলেই যথেষ্ট।

আর এক সান্তার অভিযোগ, উপহার বহিয়া তিনি ক্লান্ত। আগে একটি ঝুলি হইতে চার জন শিশুকে উপহার দিতেন। এখন একটি শিশুর জন্যই চারটি ঝুলি বহন করিতে হয়। কাহারও আবেদন, শিশুকে বুড়ো আঙুল চুষিতে বারণ করিবার কাজটি সান্তার নহে, এমন অনুরোধ যেন বাবা-মা না করেন। এই সকল কথা হইতে স্পষ্ট, শিশুর স্বপ্ন বা প্রয়োজনের সহিত সান্তা-পর্বের কোনও সংযোগ আর নাই। বড়রা শিশুকে ভুলাইবার জন্যই চির কাল সান্তা সাজিয়াছে, কিন্তু তাহা ছিল মধুর ছলনা। উত্তর মেরুর মজাদার লোকটি না থাকিলেও, শিশুর সহিত সান্তারূপী মানুষটির মনের সংযোগ অবশ্যই থাকিত। আজ শিশু সান্তার ‘উপভোক্তা’ মাত্র। শিশুকে প্রতারণা করিতে কে চাহিবে?

Festive Season Festival Christmas Santa Claus Saint Nicholas
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy