ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য বিমা যোজনাটি বিশ্বের ‘বৃহত্তম স্বাস্থ্য প্রকল্প’ বলিয়া ঘোষণা করিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দশ কোটি দরিদ্র পরিবার তথা পঞ্চাশ কোটি মানুষের অন্তর্ভুক্তি, এবং পরিবার-পিছু বৎসরে পাঁচ লক্ষ টাকা অবধি বিমা, শুনিতে মন্দ নয়। কিন্তু ক্ষুদ্র একটি প্রশ্ন রহিয়াই যায়। ইহা কি যথেষ্ট? দরিদ্রের চিকিৎসার প্রয়োজন কি এই যোজনার দ্বারা মিটিবে? ভারতে প্রচলিত স্বাস্থ্য বিমাগুলির ন্যায়, এই যোজনাতেও কেবল হাসপাতালের খরচ মিলিবে। রোগের খরচ কিন্তু কেবল হাসপাতালে সীমিত নহে। সংবৎসর ঔষধ ও চিকিৎসকের টাকা জুগাইতে গিয়া কোনও পরিবার দারিদ্রসীমার নীচে চলিয়া যায়, কেহ বা চিকিৎসার আশা ছাড়িয়া মাদুলি-তাবিজে সান্ত্বনার সন্ধান করে। অবশ্য হাসপাতালের খরচও নেহাত কম নহে। কিন্তু সে আশাই বা কতটুকু? ভারতে ইহাই প্রথম স্বাস্থ্য বিমা, এমন নহে। ২০০৮ সালে রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা শুরু হইয়াছিল। দারিদ্রসীমার নীচে মানুষদের জন্য এই বিমা প্রকল্প রূপায়ণের থেকে কিছু অভিজ্ঞতা লাভ হইয়াছে। যথা, সকল অসুখের জন্য বেসরকারি হাসপাতাল বিমার অধীনে ভর্তি করিতে নারাজ। কেবল অস্ত্রোপচার করিতে তাহারা আগ্রহী, অন্যান্য অসুস্থতায় নহে। বহু অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের সাক্ষ্য মিলিয়াছে। অকারণে ছানি কাটিবার, কিংবা জরায়ু বাদ দিবার দৃষ্টান্ত কম নাই। অর্থাৎ বিমা দরিদ্রকে বিপন্নও করিতে পারে। তৃতীয়ত, দরিদ্র এলাকায় উচ্চমানের হাসপাতাল কোথায়? বেসরকারি পরিষেবার ৭০ শতাংশই বৃহৎ শহরগুলিতে।
কিন্তু যে ব্যাপক বিস্তারের পরিকল্পনা, তাহার জন্য যথেষ্ট টাকা কি বরাদ্দ হইয়াছে? নরেন্দ্র মোদী সরকারের কার্যসূচি প্রায়ই ঋষিশ্রাদ্ধের ন্যায়। আড়ম্বরে তাহার আরম্ভ এবং লঘু কার্যে সমাপন। বিশেষত টাকার বরাদ্দ কখনওই ঘোষণার সহিত তাল মিলাইতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনাতেও তেমনই কার্পণ্য দেখিতেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বৎসর নূতন স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের জন্য দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হইয়াছে। কোনও হিসাবেই দশ কোটি পরিবারের পঞ্চাশ কোটি মানুষের জন্য তাহা যথেষ্ট নহে। তাহারা প্রাপ্য পাঁচ লক্ষ টাকার সামান্য অংশ খরচ করিলেও বরাদ্দ ছাড়াইয়া যাইবে। অন্তত দশ হাজার কোটি টাকা মিলিবার প্রত্যাশা করিতেছেন প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্তারা, কিন্তু এখনও সে অর্থ মিলে নাই। কত দিনে মিলিবে তাহাও জানা নাই। টাকা যদি অল্প এবং অনিশ্চিত হয়, বিমা সংস্থা তাহার যথাসাধ্য ন্যায্য বণ্টন করিলেও তাহাতে গরিবের প্রয়োজন কিছুতেই মিটিবে না।
এই সংশয় অন্যত্রও দেখা দিয়াছে। মোদীর ঘোষিত ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে স্বাস্থ্য বিমা ব্যতীত অপর লক্ষ্যটি হল দেড় লক্ষ আধুনিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ। তাহার জন্য এ বৎসর বারোশো কোটি টাকা বরাদ্দ হইয়াছে। অর্থাৎ এক-একটি কেন্দ্রের জন্য আশি হাজার টাকা মিলিবে। প্রশ্ন হইল, প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজে এই বরাদ্দ কতটা পরিবর্তন আনিতে পারিবে? স্বাস্থ্যপ্রকল্পের বিস্তার বাড়িয়াছে। কিন্তু বরাদ্দের নিরিখে দেখিলে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সংস্কারের এই প্রকল্পকে ‘বৃহৎ’ বলিতে দ্বিধা হয়। বরং চিন্তার বহুবিধ সঙ্কীর্ণতা এবং আগ্রহের স্বল্পতা যেন প্রকল্পটিকে ক্ষুদ্রতাতেই বাঁধিয়াছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy