Advertisement
১০ মে ২০২৪
National news

বিষ রয়েছে বলেই অধরা থেকে যাচ্ছে উপলব্ধিটা

সেই অবাঞ্ছিত পথে হাঁটাটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে না তো? থমকে দাঁড়িয়ে একটু ভাবা দরকার।

নাসিরুদ্দিন শাহ। —ফাইল চিত্র।

নাসিরুদ্দিন শাহ। —ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪২
Share: Save:

সাধারণের একটু ঊর্ধ্বে যাঁরা বা চিন্তা-ভাবনার ব্যপ্তিতে এবং তীক্ষ্ণতায় সাধারণের চেয়ে এগিয়ে যাঁরা, তাঁদের দেখানো পথটাকে অনুসরণ করাই কর্তব্য। তাঁদের মতামতকে বা সমাজ-রাজনীতি-পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে তাঁদের বিশ্লেষণকে পত্রপাঠ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হিসেবে দেগে দেওয়া একটু অবাঞ্ছিত। সেই অবাঞ্ছিত পথে হাঁটাটা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে না তো? থমকে দাঁড়িয়ে একটু ভাবা দরকার।

নাসিরুদ্দিন শাহ ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট নাগরিক— এ বিষয়ে কেউ সংশয় প্রকাশ করবেন না আশা করা যায় নিশ্চয়ই। নাসিরুদ্দিনের শিল্পী সত্ত্বা গোটা দেশে দশকের পর দশক ধরে সমাদৃত। তিনি যদি ভারতীয় সমাজে কোনও ‘বিষের’ অস্তিত্ব অনুভব করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, তা হলে সে উদ্বেগকে কৃত্রিম বা সঙ্কীর্ণতা থেকে প্রণোদিত হিসেবে দেখাটা কাম্য নয়। সে উদ্বেগকে গোটা সমাজটার জন্য একটা সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখা উচিত। শিক্ষায়, শিল্পে, সাহিত্যে, চারুকলায়, দৃশ্যকলায়, সংস্কৃতিতে, বিজ্ঞানে যাঁরা সামনের সারিতে, তাঁরাই মার্গদর্শক, যুগে যুগে এ সভ্যতাকে পথ দেখিয়েছেন তো তাঁরাই। তাঁদের প্রত্যেকটা দর্শনকে, প্রত্যেকটা পরামর্শকে যদি অবিশ্বাস এবং সংশয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতাম আমরা, তা হলে সভ্যতা সম্ভবত এত দূর আসত না, অনেক পিছনে থমকে থাকত। একটু স্থিতধী হয়ে ভাবলেই এই সরল সত্যের উপলব্ধি সম্ভব। তা সত্ত্বেও যে আমাদের অনেকের কাছেই অধরা থেকে যাচ্ছে উপলব্ধিটা, এতেই প্রমাণ হয় সমাজে একটা বিষ চারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। মুক্ত চিন্তার সক্ষমতাকেই সর্বাগ্রে শেষ করছে সে বিষ।

সামাজিক বিভাজনের রেখাটা ভারতে যে ক্রমশ বাড়াচ্ছে তার স্পষ্টতা, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর বিভাজন বা ফাটল যে কোনও সমাজকেই সমৃদ্ধ করে না, বলশালী করে না, সে সত্যের পুনরুচ্চারণ বাহুল্য মাত্র। ওই বিভাজনটার বিরুদ্ধেই বার্তা দিতে চেয়েছেন নাসিরুদ্দিন শাহ। কিন্তু এই বার্তার নেপথ্যে কোনও সঙ্কীর্ণ উদ্দেশ্যের প্রণোদনা দেখছেন কেউ কেউ। রাজনীতিকরা তপ্ত মন্তব্য করছেন, নাসিরুদ্দিনকে ঘোর পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত করছেন। আমজনতাও সেই গেল-গেল রবে সামিল হচ্ছেন। সমবেত রৈ-রৈ ধ্বনি দেশজোড়া ঝড় তোলার আয়োজন সাজাচ্ছে। মনে রাখা দরকার, ধর্ম বা সম্প্রদায় বা রাজনীতির সাধারণ মাপকাঠি দিয়ে কিন্তু নাসিরুদ্দিন শাহদের মতো অগ্রবর্তী নাগরিকদের মাপা যায় না। ওই ভাবে মাপতে গিয়েই আমরা সবচেয়ে বড় ভুলটা করে ফেলছি। যা আসলে আমাদের সকলের জন্য একটা সতর্কবার্তা, তা প্রতিভাত হচ্ছে সঙ্কীর্ণ উদ্দেশ্যের প্রণোদনা হিসেবে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: চিত্ত হেথা ভয়শূন্য নয়: নাসির

ধারণায় যদি গলদ থেকে থাকে কোনও, তাহলে দ্রুত সংশোধন করে নেওয়াই শ্রেয়। তাই নাসিরুদ্দিন শাহের যে রকম ভাবমূর্তি তৈরি করে দেওয়া চেষ্টা চলছে, তা থেকে দূরে থাকা বা তাতে বিশ্বাস না রাখাই শ্রেয়। আবার বলছি, নাসিরুদ্দিন শাহেরা পথ দেখানোর ক্ষমতা রাখেন। কোনও সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাঁদের বিচার করতে যাওয়া ভাল নয়— রাষ্ট্র, সমাজ বা সাধারণ নাগরিক, কারও পক্ষেই ভাল নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE