কলকাতার গুরুসদয় সংগ্রহশালায় পটের কর্মশালা হবে। পটুয়ারা সংগ্রহশালার পুরনো দিনের পট নতুন করে আঁকবেন। ‘বাংলা নাটক ডট কম’এর আয়োজনে এই কর্মশালায় যে যাঁর মতো পট বেছে নিচ্ছেন। সেগুলিই নতুন করে আঁকা হবে। প্রতিটি পটের শিক্ষণীয় বিষয় প্রচার করা হবে। দুই মেদিনীপুর জেলার নামী পটুয়ারা অংশ নিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়ার সেরামুদ্দিন চিত্রকরের মন ভার। তিনি তাঁর পছন্দের মনোহর ফাঁসুড়ের পট আঁকতে চান। কত রকমের পট রয়েছে। সেসব বাদ দিয়ে সেরামুদ্দিনের মনোহর ফাঁসুড়ের পটে আগ্রহ কেন? কারণ ছোটবেলা থেকেই বাবা রঞ্জিত চিত্রকরের কাছে ‘মনোহর ফাঁসুড়ে পট’এর কাহিনি শুনে আসছেন। কিন্তু আঁকা হয়নি।
পৌরাণিক কাহিনিকে আশ্রয় করে আঁকা পটের বাইরে রূপকথা নির্ভর কিছু পট এক সময়ে আঁকা হয়েছিল। এর মধ্যে মনোহর ফাঁসুড়ে পট বা মনোহর ফাঁসিরার পট আকর্ষণীয়। কাহিনি অনুযায়ী, মনোহর ফাঁসুড়ের সাত ছেলে আর রূপবতী কন্যা রাহুতি। বৃদ্ধ মনোহর এবং তার ছেলে মেয়েরা বিত্তবান বণিক কিংবা রাজপুত্রদের ভুলিয়ে ঘরে নিয়ে আসত। রাতে রাহুতি অতিথির সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে সবকিছু অপহরণ করত। খুন করা হত অতিথিকে। কিন্তু পট পরিবর্তন হল। তরুণ সওদাগর মানিক দত্ত মনোহরের ফাঁদে ধরা পড়ে। কিন্তু রাহুতি মানিককে খুন করতে এসে বিচলিত হয়। সে রূপবান মানিকের প্রেমে পড়ে। সেই রাতেই দু’জনে ঘোড়ায় চড়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দাদারা বাধা দেয়। তাতে লড়াই বাধে। মনোহর বাড়িতে বসে জাদুবলে সব দেখতে পায়। সে-ও মেয়ে আর মানিককে হত্যা করতে যায়। কিন্তু দেবতার আশীর্বাদে রাহুতি এবং মানিক লড়াইয়ে জয়ী হয়। রাহুতি তার বাবা-দাদাদের হত্যা করে পালায়।
চলতে চলতে ক্লান্ত দু’জনে। এখানে কাহিনি আবার বাঁক নেয়। রাহুতিকে গাছতলায় বসিয়ে মানিক পুকুরে স্নান করতে যায়। পথে দেখা হয় মালিনীর সঙ্গে। মালিনী জাদুমন্ত্রে মানিককে ভেড়া বানিয়ে দেয়। অসহায় রাহুতি পুরুষের ছদ্মবেশে স্থানীয় এক রাজার দরবারে কাজ নেয়। সেই সময় রাজ্যে গন্ডারের উপদ্রব শুরু হয়। রাজা ঘোষণা করেন, গন্ডারকে যে বধ করতে পারবে, তাকে তিনি অর্ধেক রাজত্ব এবং রাজকন্যা দেবেন। রাহুতি গন্ডার হত্যা করে রাজার প্রিয় হয়ে ওঠে। রাহুতি বলে, কালী প্রতিমার কাছে ভেড়া বলি দিয়ে সে রাজকন্যা এবং অর্ধেক রাজত্ব গ্রহণ করবে। কালী পুজোর দিন মালিনীর বাড়ি থেকে মানিক দত্ত-রূপী ভেড়া আনা হয়। ভেড়ার গলা থেকে মালা খুলে নিলে মানিক দত্ত স্বরূপ ফিরে পায়। চোখে জল আসে রাহুতির। সে রাজাকে সব কথা খুলে বলে। এই কাহিনি পটুয়ারা শোনান এই ভাবে, ‘পুরুষ নয় আমি রাহুতি কুমারী, পুরুষ হইয়া আমি নিলাম চাকুরি, রাহুতি বলেন শুন রাজা মহাশয়, ইহার লাগি বাপভাই সবংশে কাটিয়া, দেশান্তরী ইইয়াছি ইহার লাগিয়া, ইহার জন্য যে আমি গন্ডারে মারিয়া, তোমার কন্যা রাজত্ব দিয়ে আমায় দিলে বিয়া, এই দুই কন্যা তুমি উহারে দিবে, তবেত আমার মনে শান্তি জন্মাইবে’। রাজা মানিক দত্তকে রাহুতি এবং তাঁর কন্যা সম্প্রদান করেন। সঙ্গে অর্ধেক রাজত্ব। এর পর পুজোর আয়োজন হয়।