E-Paper

নিষ্ঠুরতার সংস্কৃতি

আরও মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, শিক্ষার অধিকার মোতাবেক, অভিভাবকের অনুরোধ ব্যতিরেকে কোনও শিশুকে টিসি দেওয়ার চেষ্টা করাও অসাংবিধানিক।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৫২
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অত্যধিক আধিপত্য ও কঠোরতা অভ্যাস করতে গিয়ে নৈতিক ও আইনি সীমা লঙ্ঘন করে ফেলে— তারই নিদর্শন দেখা গেল পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের কাপাসবেড়িয়ায় কেন্দ্রের জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে। থ্যালাসেমিয়ায় (ই-বিটা) আক্রান্ত বলে ও শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় নন্দীগ্রামের বাসিন্দা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা টিসি অর্থাৎ স্থানান্তর শংসাপত্র নিয়ে স্কুল ও হস্টেল ছাড়তে বলেছেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সম্ভবত স্মরণে নেই যে শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার। ৬-১৪ বছরের শিশুর শিক্ষার সুযোগ পাওয়া বাধ্যতামূলক। তাই শারীরিক অসুস্থতার কারণে শিশুকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অবৈধ, শিক্ষার অধিকারের পরিপন্থী। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংক্রান্ত আইন ২০১৬’ অনুসারে দেশে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ, তাঁদের সমান ও পূর্ণ সুযোগ দান থেকে প্রতিহত করাও বেআইনি।

আরও মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, শিক্ষার অধিকার মোতাবেক, অভিভাবকের অনুরোধ ব্যতিরেকে কোনও শিশুকে টিসি দেওয়ার চেষ্টা করাও অসাংবিধানিক। শুধু পড়াশোনা বা চরিত্র গঠনই বিদ্যালয়ের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে না, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রত্যেক শিশুকে সমান চোখে দেখা ও তাদের জীবনপথে এগিয়ে দেওয়ার পথটি মসৃণ রাখাও শিক্ষালয়েরই নৈতিক দায়িত্ব। যে ছাত্র পড়াশোনায় পিছিয়ে যাচ্ছে, তাকে সহৃদয়তার সঙ্গে সব রকমের সহায়তা তারই মধ্যে পড়ে। একই ভাবে, যে পড়ুয়া শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে সমস্যায় পড়ছে তার উপযুক্ত সহযোগিতা ও যত্নের সব রকম ব্যবস্থা করে প্রস্তুত থাকা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব যা তারা কখনওই অবহেলা করতে পারেন না। বিশেষত, এ ক্ষেত্রে ছাত্রীটি হয়তো সারা জীবনই চিকিৎসাধীন থাকবে। শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্য তার যন্ত্রণা কিছুটা হলেও ভোলার রাস্তা দর্শাতে পারে, তাকে রোগের সঙ্গে যুঝবার বাড়তি শক্তি দিতে পারে, পড়াশোনা-সহ বিদ্যালয়ের নানা কার্যক্রমে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সেই আশার আলো দেখাও গিয়েছে। ‌অধ্যক্ষার এ-হেন দুর্ব্যবহার ছাত্রী ও তার পরিবারের অপূরণীয় মানসিক যন্ত্রণার উৎস হতে পারে। বিষয়টি শিশুর অধিকার-রক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত, মানবাধিকারেরও উল্লঙ্ঘন, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি তোলার যোগ্য।

অসুস্থতার কারণে শিশু ও তার পরিবারকে হেনস্থা অত্যন্ত অমানবিক ও উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্ট বোর্ড এবং জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ও শিক্ষা পরিদর্শকের তরফে বিষয়টিকেঅত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা করে কড়া জবাবদিহির আওতায় আনা বিধেয়। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোনও রকম বৈষম্যমূলক আচরণই যে অন্যায্য, তাদের শারীরিক পরিস্থিতিকে উপেক্ষা যে অসংবেদনশীলতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং তার জন্য তার ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা উদয় হলে তা যে শুধু কোনও ব্যক্তির তরফেই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক নিষ্ঠুরতার পরিচয় হয়ে যায়— বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা মনে রাখতে হবে। বাধা বা প্রতিবন্ধকতা দূর করে প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জীবনের উত্তরণের সন্ধান নিয়ে আসাই শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। যে অসুস্থ, আর্ত, বা কোনও ভাবে দুর্বল— তার প্রতি দায়বোধ আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore Thalassemia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy