Advertisement
E-Paper

সন্ত্রাসের ঢাল হয়ে ক্ষতি আসলে নিজেদেরই, বোধোদয় জরুরি

জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পথে ফের চিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রথম বার নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্ত্রাসের গালে চপেটাঘাতের চেষ্টা আটকে গেল আরও এক বার। আটকে দিল সেই চিনই এ বারও। নেপথ্যে অবশ্যই নিকটতম মিত্র পাকিস্তানকে স্বস্তিতে রাখার তাড়না এবং অস্বস্তিদায়ক প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে স্বস্তিতে থাকতে না দেওয়ার বাসনা।

জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পথে ফের চিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রথম বার নয়। রাষ্ট্রপুঞ্জে যতবার এই প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, ততবারই চিনের প্রাচীর মাথা তুলেছে। মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নেওয়ার প্রয়াস অবশ্য তাতে থেমে যাবে না। নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে ভারত, ভবিষ্যতেও বার বার মাসুদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি রাষ্ট্রপুঞ্জে পেশ হবে, আন্তর্জাতিক মতামতকে এই প্রস্তাবের পক্ষে আরও সংহত করার প্রয়াস হবে। চিনের তরফ থেকে বাধা যে আসতেই থাকবে, তাও সম্ভবত ধরেই নিয়েছে ভারত। অতএব, সে বাধার কথা মাথায় রেখেই ভবিষ্যতের ঘুঁটিগুলো নয়াদিল্লি সাজাবে। সাফল্য কবে আসবে, সে নিয়ে তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু এই টানাপড়েনে চিন-পাকিস্তান যে খুব স্পষ্ট ভাবেই নেতিবাচক প্রান্তটায় অবস্থান করছে আর ভারতের অবস্থানটা যে ইতির দিকে, সে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল খুব একটা সংশয়ে নেই।

আরও পড়ুন: মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণায় ফের চিনের বাধা

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হাত থেকে একটা মাসুদ আজহারকে আড়াল করতে পারলেই কি খুব বিপাকে ফেলে দেওয়া যায় ভারতকে? না, তেমন কিছু হয় না। রাষ্ট্রপুঞ্জ মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারুক বা না পারুক, ভারতের কাছে সে নিষিদ্ধই। আমেরিকার কাছে বা ভারতের অন্য অনেক মিত্র দেশের কাছেও সে নিষিদ্ধই। অতএব, মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে বা তার সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোরতম অবস্থান বজায় রাখতে ভারতের সামনে কোনও বাধা নেই। মাসুদকে এই মুহূর্তে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা না গেলে ভারতের ক্ষতিবৃদ্ধির কোনও আশঙ্কাও নেই। কিন্তু এই গোটা ঘটনাপ্রবাহে চিন-পাকিস্তান খুব বড় নৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। সমগ্র বিশ্বের কাছে কুখ্যাত এক জঙ্গি সংগঠনের প্রধান যে, সন্ত্রাসের ঘোষিত সাধক যে, তার ঢাল হিসেবে নিজেদের ব্যবহৃত হতে দিয়ে চিন-পাকিস্তান নিজেদেরই অপমান করছে।

অপমানের মূল্যে যদি স্বস্তি মিলত, তা হলে না হয় কিয়ৎ যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যেত চিনের এই ভূমিকায়। কিন্তু আদৌ কি স্বস্তিতে থাকতে পারছে চিনের নিকটতম মিত্র? সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেই হবে ইসলামাবাদকে, পাক ভূখণ্ডে মাথাচাড়া দিয়েছে সন্ত্রাসের যত কাঠামো, সেই সব কাঠামোকেই নিঃশেষে উপড়ে ফেলতে হবে— এই মর্মে রোজ চাপ বাড়াচ্ছে আমেরিকা। মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসীকে যখন নির্লজ্জ ভাবে আগলে রাখতে চাইছে চিন, ঠিক তখনই আমেরিকার তরফ থেকে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ২০টি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তালিকা, যাতে এই মাসুদের সংগঠন জইশের নাম তো রয়েইছে, রয়েছে লস্কর-ই-তৈবা, হরকত-উল-মুজাহিদিনের নামও। পাক ভূখণ্ডকে কাজে লাগিয়ে এই সব সংগঠন নাশকতা চালাচ্ছে ভারতে, আরও কিছু সংগঠন নাশকতা চালাচ্ছে আফগানিস্তানে, এমনকী নাশকতা চালাচ্ছে পাকিস্তানেও— জানাচ্ছে আমেরিকা। অবিলম্বে এই সংগঠনগুলিকে ধূলিসাৎ করা হোক— বার্তা দিচ্ছে ওয়াশিংটন। এর পরেও কি স্বস্তিতে থাকতে পারবে ইসলামাবাদ?

চিনের শরণ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের রোষানল থেকে না হয় রক্ষা মিলল। কিন্তু সুদীর্ঘ সময়ের মিত্র আমেরিকা যে ভাবে কঠোরতর করে তুলছে অবস্থান, তার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে কী উপায়ে? উত্তর হাতড়াতে হচ্ছে পাকিস্তানকে।

Terrorism Pakistan Newsletter Anjan Bandyopadhyay পাকিস্তান অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy