নীতির প্রশ্নে আপস করলেন নীতীশ। ফাইল চিত্র।
নীতীশ কুমারের প্রতি বিহার তথা দেশবাসীর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। অবশেষে যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটালেন তিনি। নাটকীয় নানা উচ্চাবচ ঘাত প্রতিঘাতের শেষে রহস্য ধূম্রজালের আবরণ ভেদ করে পুনর্বিজেপি ভব রূপে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে আবার ফিরলেন নীতীশ। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মানুষ। সংশয়ের অবসান হল, জন্ম হল নতুন প্রশ্নের। নীতীশ শব্দের অর্থ বস্তুতই নীতিশ্রেষ্ঠ তো?
আপাতদৃষ্টিতে নীতীশ কুমার যে ছবিটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তাতে মনে হতেই পারে, দুর্নীতির প্রশ্নে কোনও রকম আপসের পথে যেতে প্রস্তুত নন তিনি। বস্তুতই যদি এটা হত, তবে এ দেশে বরেণ্য রাজনীতিকদের তালিকায় নিজের নামটা তুলে ফেলার দাবিদার হতেন ধুরন্ধর এই নেতা। বিশ্বাস করতে অসুবিধাও ছিল না, যদি না লালুপ্রসাদ হাটে হাঁড়ি ভাঙতেন। লালুপ্রসাদের প্রশ্ন, নীতীশ যদি এতই নীতিবাগীশ, তবে ২০১৫ সালে তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন কী ভাবে? এটা জেনেও যে, লালুপ্রসাদের কাঁধে রয়েছে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির দায়? ধন্ধটা লাগে তখনই।
প্রশ্নটা জাগে, যে মানুষের রায় শিরোধার্য করে ক্ষমতার মসনদে বসেছেন নীতীশ, সেই মানুষের কথা শোনার ভাবনা এল না কেন তাঁর মনে? পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির জেরে একদা যে মানুষ লালুকে সিংহাসন থেকে টেনে নামিয়েছিলেন, সেই মানুষই গত নির্বাচনে ঠিক কী কারণে তাঁর দলকে বৃহত্তম দলের মর্যাদার ফিরিয়ে আনলেন, সেই বিবেচনা কেন মাথায় এল না নীতীশের? সেই দলের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় জনরায় মাথায় পেতে নিলেন, অথচ বিচ্ছেদের পর মানুষের কাছে ফিরে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না কেন? কেন আসলে কিছু অঙ্কের খেলা, যে খেলা চলছিল নেপথ্য পটভূমিতে বেশ কিছু দিন ধরেই, তার ভিত্তিতে পালাবদল হয়ে যাবে এরকম নিপুণ ভঙ্গিতে? মধ্যযুগীয় রাজ-অন্তপুরের কাহিনি তো লেখা হচ্ছে না এখন, যেখানে অন্তরালের ষড়যন্ত্র জাল ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনা হয়। এ কাহিনি তো গণতন্ত্রের, এখানে মানুষই শেষ কথা বলবেন?
বস্তুত বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রচার করে জনমত তৈরি করেছিলেন লালু-নীতীশ জোট, সংশয়ের অবকাশ থাকার কথা নয় সেখানে। যার বিরুদ্ধে জনরায়, তারই হাত ধরার মধ্যে একটা নীতি-আপস রয়েছে। দুর্নীতির প্রশ্নে আপস না করার আবরণে নীতির প্রশ্নে আপস করলেন নীতীশ।
মানুষ আপনার ভাবনায় কোথায় থাকলেন, নীতীশ কুমার?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy