Advertisement
০৮ মে ২০২৪
East Bengal

ডার্বির মাঠে টিফো ঝোলানো নিয়ে এক মত দুই প্রধানের অনুগামীরাই

মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ছাড়া বাঙালির ফুটবল নেই। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে বাঙালির ভালমন্দের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ‘মোহনবেঙ্গল’ আর ‘ইস্টবাগান’।

বাঁ দিকে নির্মল ভৌমিক ও ডান দিকে জয় মজুমদার

বাঁ দিকে নির্মল ভৌমিক ও ডান দিকে জয় মজুমদার

নির্মল ভৌমিক ও জয় মজুমদার
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৫৮
Share: Save:

নির্মল ভৌমিক

প্রাক্তন ফুটবলার, মোহনবাগান সমর্থক

বাঙালি নাকি ফুটবল নিয়েই বাঁচে। তাই গান বাঁধা হয়েছিল, ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ছাড়া বাঙালির ফুটবল নেই। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে বাঙালির ভালমন্দের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে ‘মোহনবেঙ্গল’ আর ‘ইস্টবাগান’। হ্যাঁ, এই দু’টি ক্লাবের একের অন্যের উপর নির্ভরশীলতা নিয়ে এ ভাবেই মজা করেন ফুটবলপ্রেমীরা। আমাদের সমাজজীবনে ফুটবলের ভূমিকা নতুন নয়। মনে করুন সেই ইতিহাস, দেশের অন্যতম প্রাচীন ক্লাব মোহনবাগান ১৯১১ সালে গোরাদের হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতল। মাঠ থেকে দূরের মানুষদের সেই বিজয়বার্তা জানাতে ওড়ানো হয়েছিল মেরুন ঘুড়ি। সেটাও কি সে দিনের প্রেক্ষিতে এক ধরনের ‘টিফো’ ছিল না? সে দিন খালি পায়ে ফুটবল খেলে ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছিলেন যে এগারো জন, তাঁরা কি সে দিনের খেলাকে শুধুই খেলা হিসাবে নিয়েছিলেন? সেটাই ছিল তাঁদের স্বাধীনতা সংগ্রাম। প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসাবে আইএফএ শিল্ড জেতার সেই ২৯ জুলাই এখনও ‘মোহনবাগান দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। তা হলে ডার্বির মাঠে প্রতিবাদী টিফো থাকায় অস্বাভাবিকত্ব কোথায়? যাঁরা মাঠে ফুটবল খেলেন, তাঁরা কি এই বাস্তব পৃথিবীর বাইরের মানুষ? ডার্বির মাঠের মতো এত বড় মঞ্চ আর কোথায় আছে? সংবিধান আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। এই সময়ের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে মাঠ উত্তাল হবে না, সিএএ বিরোধী ব্যানার ঝুলবে না— এ আবার হয় না কি! আমার তো মনে হয়, ডার্বির মাঠই টিফো ঝোলানোর ঠিক জায়গা।

জয় মজুমদার


প্রাক্তন ফুটবলার, ইস্টবেঙ্গল সমর্থক

উচ্চ মাধ্যামিক পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ডার্বি দেখতে যাওয়া শুরু করেছিলাম। কৃষ্ণনগর থেকে এক সঙ্গে দল বেঁধে গিয়ে সল্টলেক স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তায় টিকিট বদলাবদলি করে দু’ভাগ হয়ে পড়তাম। আমরা যেতাম ইস্টবেঙ্গলের গেটে আর বাকিরা তখন থেকে দেড় ঘণ্টা শত্রু, এগোত মোহনবাগানের জন্য নির্দিষ্ট গেটের দিকে। খেলার পর আবার একজোট হয়ে, যাঁরা হেরে গিয়েছেন তাঁদের পিছনে লাগতে লাগতে ফেরা। আর খেলা ড্র হলে কারা ভাল খেলেছে, এ নিয়ে নিরন্তর তর্কাতর্কি। জানি, কম-বেশি এখনও ব্যাপারটা একই রকম। তবে সদ্য শেষ হওয়া এ বারের ডার্বি কিন্তু এই চেনা ছন্দের নয়। এই প্রথম বার খেলা শুরুর আগেই শুরু হয়েছিল এক অন্য খেলা। এক দলের তরফে যখন টিফো লিখে মনে করিয়ে দেওয়া হল স্বাধীনতার যুদ্ধে তাদের অবদানের কথা, অন্য দিকে আর এক দল, তারাই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? তারাও টিফো টাঙাল— এ দেশের জমি তাদের রক্তের বিনিময়ে কেনা— সেই কথা বিজ্ঞাপিত করে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, নাগরিকতা সংক্রান্ত বিভিন্ন হাতে-গরম বিতর্কিত বিষয় এই সব অচেনা কর্মকাণ্ডের আসল চালিকাশক্তি। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা, আসল খেলা নয়, আজ অবধি রেশ রয়ে গিয়েছে সেই পোস্টার-যুদ্ধের। এমনটা আগে কখনও হয়নি। বাঙালির মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল নির্ভর ফুটবল খেলার আবেগে রাজনীতির অনুপ্রবেশে বহু মানুষই তাই শঙ্কিত হয়েছেন। খেলার ভালমন্দ নিয়েই কথা কম হচ্ছে। দিনের শেষে ভুললে চলবে না, খেলা কিন্তু খেলাই। আনন্দ পাওয়া আর আনন্দ দেওয়াই খেলার মুখ্য উদ্দেশ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

East Bengal Mohun Bagan Tifo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE