Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Uttar Pradesh

ধোঁয়ার আড়ালে এ কোন বিপদ?

দাদরিতে আকলাখ হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার ছিল এই সুবোধ কুমার সিংহের হাতে। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার প্রশ্নে সুবোধ আপোস করতে চাইছিলেন না। সেই কারণেই কি কারও নিশানায় পরিণত হয়েছিলেন?

বুলন্দশহরে ঘটনার পর তদন্তে পুলিশ বাহিনী। —ফাইল চিত্র

বুলন্দশহরে ঘটনার পর তদন্তে পুলিশ বাহিনী। —ফাইল চিত্র

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৮
Share: Save:

পরিস্থিতির জন্ম যিনি দিলেন, পরিস্থিতি তাঁরই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে এক ধরনের বিপদের উদ্রেক হয়। আর নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকা পরিস্থিতির উপর জোর করে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাইলে আর এক ধরনের বিপদ হয়। ভারত এই মুহূর্তে ঠিক কোন ধরনের বিপদের সামনে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে বিপদ যে ঘনাচ্ছে, তা নিয়ে কোনও ধোঁয়াশা নেই।

উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহর জেলায় অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠেছে। ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে সম্ভবত ঢেকে গিয়েছে গোটা জেলার আকাশ। সেই ধূমাচ্ছন্ন পরিস্থিতি কি আসলে কোনও সত্যকে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করছে? ইনস্পেক্টর সুবোধ কুমার সিংহের মৃত্যু এবং সেই মৃত্যুর সঙ্গে জুড়ে থাকা ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু ধোঁয়াশারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

দাদরিতে আকলাখ হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার ছিল এই সুবোধ কুমার সিংহের হাতে। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করার প্রশ্নে সুবোধ আপোস করতে চাইছিলেন না। সেই কারণেই কি কারও নিশানায় পরিণত হয়েছিলেন? সুবোধ কুমার সিংহকে কি পরিকল্পনামাফিক সরিয়ে দেওয়া হল? এমন নানা প্রশ্ন উঠছে ধোঁয়াশায় ঢাকা বুলন্দশহরে। সম্প্রতি বুলন্দশহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে গোমাংস রাখা শুরু হয়েছিল বলে শোনা যাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক আগুন অক্সিজেন পেতে পারে, এমন নানা আয়োজন নাকি জেলায় দেখা যাচ্ছিল। আগুনটা অবশেষে জ্বলেই উঠল। সেই আগুনেই দাদরির তদন্তকারী পুলিশকর্তা শেষ হয়ে গেলেন। ঘায়েল সুবোধ কুমার সিংহকে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য ঘটনাস্থলেই ফেলে রাখা হয়েছিল, ফেলে না রাখলে প্রাণ বাঁচানো যেত— এমন তত্ত্বও সামনে আসছে। অতএব নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠতে শুরু করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: বুলন্দশহরে পুলিশ খুনের পিছনে বজরং-ভিএইচপি যোগ! গ্রেফতার পাঁচ, শহরে ১৪৪ ধারা

এই রকম একটা আবহ তৈরি হওয়া কি আদৌ কাঙ্খিত? একটা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে প্রশ্ন উঠছে যে, কারও রাজনৈতিক ফায়দার জন্য এই সংঘর্ষটা বাধানো হয়নি তো? সেই প্রশ্নচিহ্নকে খুব বড় আকার দেওয়ার মতো। বেশ কিছু অভিযোগও ঘটনাস্থল থেকে কেমন অকাট্যভাবে উঠে আসতে চাইছে। ষড়যন্ত্রের যে ইঙ্গিত উঠে আসছে বুলন্দশহরের মাটি থেকে, তা গণতন্ত্রের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না, দাদরির ঘটনার অভিযুক্তদের আর আগলে রাখা যাচ্ছে না, সুতরাং নতুন করে ঘুঁটি সাজানোর এবং ঘুঁটি সরানোর ছক কষা শুরু হোক— বিষয়টা যদি এই রকম হয় আদতে তা হলে সে অত্যন্ত বিপজ্জনক এক প্রবণতা।

রাজনীতির ময়দানে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ যে দেশের বর্তমান শাসককুলের হাতিয়ার হয়ে ওঠে বার বার, সে কথা অস্বীকার করার উপায় কম। সেই মেরুকরণের রাশ কি এ বার শাসকদলের হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কি অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে? এমন সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বুলন্দশহরের ঘটনার পরে। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে তত অন্য রকম একটা তত্ত্ব মাথাচাড়া দিচ্ছে। আসলে অন্য কোথাও একটা পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছিল এবং তা রুখতেই বুলন্দশহরে অশান্তির আয়োজন সাজানো হল— বিষয়টা যদি এমন হয়, তা হলে আমাদের বিপদ আরও বেশি। ঠিক কোন ধরনের বিপদটার সম্মুখীন হতে চলেছি আমরা, বুলন্দশহরের আকাশে জমে থাকা ধোঁয়া তা স্পষ্ট হতে দিচ্ছে না। স্পষ্ট হতে দিচ্ছে না বলেই বাতাসটা ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE