Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Newsletter

উদ্দেশ্য যা-ই হোক, মনটা সংবেদনশীল নয়

সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত সক্রিয় ঋষি কপূর। সেখানে তাঁর বিভিন্ন মন্তব্য আগেও আলোড়ন ফেলেছে। কখনও ইতিবাচক কারণে, কখনও নেতিবাচক। কিন্তু এ বারের বিতর্ক ইতি-নেতির লড়াই ছাপিয়ে গিয়ে ঋষির দায়িত্ববোধ এবং সংবেদনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, ঋষিকে অশ্লীলতা বা কুরুচির দায়ে অভিযুক্ত করেছে।

টুইট বিতর্কে ঋষি কপূর। ছবি:সংগৃহীত।

টুইট বিতর্কে ঋষি কপূর। ছবি:সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৫:৩৪
Share: Save:

সেলিব্রিটিদের বিষয়ে সাধারণের উত্সাহ সব সময় বেশি থাকে। তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি কার্যকলাপ, প্রতিটি উচ্চারণ সম্পর্কে সাধারণের মধ্যে কৌতূহল থাকে। কারণ তাঁরা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অনন্য, ব্যক্তিত্বের পরিমাপে তাঁরা যেন জীবনের চেয়েও বড়, তাঁদের ঘিরে সব সময় যেন আলোকের মোহময় বিচ্ছুরণ। এই আলোক-বৃত্তে পৌঁছনো সহজ কাজ যে নয়, সে কারও অজানা নয়। কিন্তু আলোক-বৃত্তটায় পৌঁছে গেলেই যে অবশিষ্ট জগত্ সম্পর্কে বেপরোয়া হয়ে যাওয়ার অধিকার জন্মায়, তেমনও নয়। দায়িত্বশীলতা এবং সংবেদনশীলতা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। অনেকেই বোধহয় ভুলে যান এই শিক্ষা।

ঋষি কপূরকে নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে সে বিতর্ক সাধারণ জনপরিসরে চলে এসেছে। ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠায় ঋষি টুইট করেছিলেন। ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে জয়ের পর লর্ডসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন টি-শার্ট খুলে মাথার উপর ঘুরিয়েছিলেন, এ বারও তেমনই হোক— ঋষির টুইটের সারবত্তা অনেকটা এমনই ছিল। অবধারিত ভাবে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। মেয়েদের ক্রিকেট দল খেলতে নামছে জেনেও, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম দেওয়া দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি কী ভাবে চাইলেন ঋষি? প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সে সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টাও ঋষি কপূর করেছেন। কিন্তু সে জবাব খুব যথাযথ বা অকাট্য বা সন্তোষজনক ঠেকেনি অধিকাংশের কাছেই।

সোশ্যাল মিডিয়ায় অত্যন্ত সক্রিয় ঋষি কপূর। সেখানে তাঁর বিভিন্ন মন্তব্য আগেও আলোড়ন ফেলেছে। কখনও ইতিবাচক কারণে, কখনও নেতিবাচক। কিন্তু এ বারের বিতর্ক ইতি-নেতির লড়াই ছাপিয়ে গিয়ে ঋষির দায়িত্ববোধ এবং সংবেদনশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, ঋষিকে অশ্লীলতা বা কুরুচির দায়ে অভিযুক্ত করেছে।

এমন হতেই পারে যে ঋষি কপূর আক্ষরিক অর্থে কথাগুলো ব্যবহার করেননি। এমন হতেই পারে যে তিনি প্রতীকী অর্থে ন্যাটওয়েস্ট ফাইনালের কথা তুলেছেন। কিন্তু কারণ যা-ই হোক, উদ্দেশ্য যা-ই হোক, ঋষি কপূরের টুইট যে অসংবেদনশীল ছিল তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। নির্যাতনে, খুনে, ধর্ষণে বা অবজ্ঞায় নারীকে বার বার বিদ্ধ করে যে দেশের সমাজ আজও, সেই দেশে বসে নারী সম্পর্কে মন্তব্য করার আগে আরও অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত। ঋষি কপূরের মতো সেলিব্রিটিও যদি এ কথা না বোঝেন, তা হলে সে দুর্ভাগ্যজনকই।

আলোচনাটা আজ ঋষি কপূরকে নিয়েই হল। কিন্তু সমস্যাটা শুধু ঋষি-কেন্দ্রিক নয়। আমরা অনেকেই নিজেদের মনটাকে যথেষ্ট সংবেদনশীল করে তুলতে পারিনি। যথেষ্ট সংবেদনশীল যে আমরা অনেকেই নই, তা উপলব্ধিও করিনি। এ বার কিন্তু উপলব্ধিটা আসা উচিত। আর কারও মধ্যে না আসুক,
ঋষি কপূরদের মধ্যে আসা উচিত। এ বার থেকে কি-বোর্ডে হাত দেওয়ার আগে ঋষি কপূরের এবং তাঁর সমগোত্রীয়দের কিন্তু দ্বিতীয়বার ভেবে দেখা উচিত, ঠিক কী লিখতে চলেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE