Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ১

উত্থান

বিনিয়োগের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে যাহা গুরুত্বপূর্ণ, এই সূচক শুধু সেই দিকেই তাকায়। ভারতের রেটিং এক ধাপ উন্নত হওয়ার পিছনেও সেই কারণগুলিই রহিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৫
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদীর জন্য আরও একটি সুসংবাদ। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডিজ ভারতের ক্রেডিট রেটিং এক ধাপ বাড়াইয়াছে। ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে উন্নতির সংবাদটির ন্যায় বর্তমান সংবাদটিরও রাজনৈতিক তাৎপর্য প্রচুর, কারণ ক্রেডিট রেটিং বস্তুটি খায় না মাথায় মাখে, সে বিষয়ে দেশবাসীর ধারণা ভারতের বর্তমান বৃদ্ধির হারের তুলনাতেও কম। ক্রেডিট রেটিং বস্তুটিও, ইজ অব ডুয়িং বিজনেস-এর ন্যায়, অর্থনীতির সার্বিক সুস্বাস্থ্যের নির্দেশক নহে। দেশের আর্থিক বৃদ্ধি কতখানি সুষম হইল, এত দিন যাঁহারা উন্নয়নের আওতার বাহিরে ছিলেন তাঁহাদের কত শতাংশের নিকট বৃদ্ধির সুফল পৌঁছাইয়া দেওয়া গেল, আর্থিক অসাম্য বাড়িল না কমিল, এই প্রশ্নগুলির উত্তর এই গোত্রের সূচকে থাকে না। অতএব, মুডিজ ভারতের রেটিং বাড়াইয়াছে মানেই ভারতীয় অর্থনীতি সম্বন্ধে আর কোনও দুশ্চিন্তার কারণ নাই, এমন সরলীকরণ বিপজ্জনক। ক্রেডিট রেটিং সূচকের কাজ হইল, কোনও একটি দেশের আর্থিক অবস্থা, এবং সংস্কারের প্রক্রিয়ার গতিবিধি, দেখিয়া নির্ধারণ করা, দেশটিকে ঋণ দেওয়া কতখানি নিরাপদ। বিনিয়োগের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে যাহা গুরুত্বপূর্ণ, এই সূচক শুধু সেই দিকেই তাকায়। ভারতের রেটিং এক ধাপ উন্নত হওয়ার পিছনেও সেই কারণগুলিই রহিয়াছে।

সেই উন্নতির জন্য নরেন্দ্র মোদীর অবশ্যই কৃতিত্ব প্রাপ্য। মুডিজ সাফল্যের যে তালিকাটি পেশ করিয়াছে, তাহাতে জিএসটি আছে, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণের বোঝা কমাইবার জন্য সংস্কারের চেষ্টা আছে, আর্থিক নীতির কাঠামোয় সংস্কার আছে, অসংগঠিত ক্ষেত্রকে বিবিধ পন্থায় ক্রমে সংগঠিত করিয়া তুলিবার চেষ্টা আছে, এমনকী নোটবাতিলও আছে। যুক্তির কাঠামোটি স্পষ্ট— যাহাতে ব্যবসায়ের লাভ, তাহাই ক্রেডিট রেটিং-এর পক্ষে অনুকূল। ফলে, যখন অভিযোগ উঠিতেছে যে গণবণ্টন ব্যবস্থাকে আধার-এর সহিত জুড়িয়া লওয়ায় একাধিক অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটিয়াছে, তখন এই নীতিটি মুডিজ-এর চোখে ইতিবাচক। নোট বাতিলের ফলে অসংগঠিত ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ধরাশায়ী হইলেও সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক, কারণ ইহার দৌলতে ক্রমে সংগঠিত ক্ষেত্রের বিস্তার ঘটিবে। এই কথাগুলি তুলিবার অর্থ সূচকটির সমালোচনা করা নহে, স্পষ্ট করিয়া দেওয়া যে, লগ্নির সুবিধাকেই একমাত্র লক্ষ্য ভাবিলে কাহার লাভ, কাহার ক্ষতি। লগ্নি অবশ্যই চাই, কিন্তু তজ্জনিত ক্ষতি যাহাতে পূরণ করা হয়, সেই দাবিটিকে জাগাইয়া রাখিবার রাজনীতিও চাই। জয়ধ্বনিতে যেন সেই প্রয়োজনের কথাটি চাপা না পড়িয়া যায়।

সংস্থাটি ভারতের রেটিং বাড়াইবার পাশাপাশি বলিয়া রাখিয়াছে, সংস্কারের পথ হইতে চ্যুত হইলেই ফের রেটিং কমিয়া যাইতে পারে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণের কথাটি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। রাজকোষ ঘাটতির পরিমাণও বিবেচ্য। তাহা ভিন্ন, মুডিজ-এর মতে, এমন বেশ কয়েকটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত এই রেটিংকে প্রভাবিত করিয়াছে, যেগুলি আলোচনার স্তরেই সীমাবদ্ধ। যেমন, জমি ও শ্রমের বাজারের সংস্কার। সেই সিদ্ধান্তগুলি কত দ্রুত বাস্তবায়িত হয়, তাহার উপরও ভবিষ্যতের রেটিং নির্ভর করিবে। জমির বাজারের সংস্কারের প্রশ্নটি কতখানি কঠিন, নরেন্দ্র মোদী ইতিপূর্বেই তাহা টের পাইয়াছেন। শ্রমের বাজারও তাহার তুলনায় সহজ নহে। ফলে, এই সংস্কারের পথে হাঁটিতে হইলে প্রকৃত সাহস চাই— শুধু স্লোগানে কাজ চলিবে না। সেই সাহস দেখাইতে পারিলে ভারতের রেটিং টিকিবে, বাড়িবেও হয়তো। কিন্তু, তাহাতেও আত্মহারা হইবার কারণ নাই। চিনের বর্তমান অবস্থান ভারতের তিন ধাপ উপরে। সেই তুলনার বোধহয় অবকাশও নাই। আপাতত আর্থিক বৃদ্ধি এবং তাহার সুষম বণ্টনের কথা ভাবিতে পারিলেই যথেষ্ট হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi India Credit rating
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE