Advertisement
E-Paper

দায়ভাগ

অন্যায়ের যথাসাধ্য প্রতিবাদ করিবার দায় নাগরিকেরও কম নহে, এবং তাহার উপায়ও কম নাই। মার্কিন অভিনেতা কেভিন স্পেসি বহু মহিলাকে যৌন হয়রান করিয়াছেন, এই সত্য সম্মুখে আসে গত বৎসর।

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০

নজির সৃষ্টি করিতেছেন গুগল সংস্থার কর্মীরা। তাঁহাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বাক্‌স্বাধীনতাকে বিপন্ন করিতে পারে, জানিয়া সম্মিলিত প্রতিবাদ করিতেছেন। গুগল-এর পণ্য ও পরিষেবা কাহাদের জন্য, কী শর্তে গুগল কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করিতেছে, সে বিষয়ে স্বচ্ছতা দাবি করিয়া সম্প্রতি চৌদ্দশো গুগল কর্মী কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখিয়াছেন। চিনের জন্য গুগলের নূতন ‘সার্চ ইঞ্জিন’ নির্মাণের বিষয়টি লইয়া তাঁহাদের উদ্বেগ। সরকার-বিরোধী কোনও ওয়েবসাইট, কোনও মতামত নাকি সেই সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা পাওয়া সম্ভব হইবে না। চিনের সরকার নানা তথ্যকে সাধারণ নাগরিকের নাগালের বাহিরে রাখিতে চাহে। চিনের তথ্যজগতে সরকারের সমালোচকদের কোনও স্থান নাই। অতএব নেটদুনিয়া হইতেও তাহা মুছিয়া দিতে সরকার সদা তৎপর। গুগল-এর দর্শন ইহার বিপরীত। তাহারা সকল জ্ঞানকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করিবার আদর্শে বিশ্বাসী। চিন সরকারের আরোপিত ‘সেন্সরশিপ’ মানিতে অস্বীকার করিয়া গুগল আট বৎসর পূর্বে চিনে তাহাদের পরিষেবা বন্ধ করিয়াছিল। এখন চিনের শর্ত মানিতে গুগল কর্তৃপক্ষ রাজি হইলে তাহা মানবাধিকার এবং বাক্‌স্বাধীনতার অধিকারকে বিপন্ন করিবে। কর্মীরা সেই অনৈতিক কাজের অংশীদার হইতে অসম্মত। কিছু দিন পূর্বে তাঁহারা মার্কিন সামরিক বাহিনীর সহিত গুগলের চুক্তির প্রতিবাদ করিয়াছিলেন। ‘ড্রোন’ যাহাতে আরও নির্ভুল ভাবে লক্ষ্যে আঘাত হানিতে পারে, সে উদ্দেশ্যে গুগল-এর প্রযুক্তি ব্যবহারে আপত্তি করেন প্রায় চার হাজার কর্মী।

গুগলের গবেষকরা শপথ লইয়াছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিকে তাঁহারা সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করিতে দিবেন না। ইহার জেরে গুগলকে পেন্টাগনের সহিত চুক্তি বাতিল করিতে হয়। অনেকে বলিবেন, একটি সংস্থা আপত্তি করিলেই কি চিন বাক্‌স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা, কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক অস্ত্র নির্মাণের প্রকল্প হইতে সরিয়া আসিবে? মাইক্রোসফট, অ্যামাজ়ন প্রভৃতি গুগলের প্রতিযোগী সংস্থা সামরিক বাহিনীর জন্য কাজ করিতেছে, তাহাদের কর্মীরা আপত্তি করেন নাই। গুগলের ক্ষতিতে তাহাদের লাভ হইবে, সরকারের ক্ষতি হইবে না। কথাটি মিথ্যা নহে, কিন্তু নীতির দৃষ্টিতে তাহার সারবত্তা সামান্যই। নৈতিক নির্দেশ মানিলে প্রাণও যাইতে পারে, জানিয়াই মানুষ তাহা মানিয়া থাকে। লাভ-অলাভ, জয়-পরাজয়কে সমান জ্ঞান করিয়া ধর্ম পালন করিতে হইবে, প্রাচীন ভারতের যুদ্ধক্ষেত্রে এক রাজপুত্রকে এমন উপদেশই দিয়াছিলেন তাঁহার সারথি।

গুগল-কর্মীদের সাধুবাদ জানাইতে হয়, তাঁহারা নৈতিক প্রশ্নগুলি এড়াইয়া যান নাই। অধিকাংশ কর্মী মনে করেন, ‘‘কাজ করিবার দায়টুকু আমার। উৎপাদিত পণ্য বা পরিষেবার প্রয়োগ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের, অতএব দায় তাঁহাদেরই।’’ নীতির বিচারে এই অবস্থান বৈধ নহে। গণহত্যার মতো অপরাধে যাঁহারই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কোনও ধরনের ভূমিকা রহিয়াছে, তিনিই সেই অপরাধের নৈতিক দায়িত্ব এড়াইতে পারেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ন্যুরেমবার্গের বিচারে এমনই সিদ্ধান্ত হইয়াছিল: নাৎসি বাহিনীর অভিযুক্তেরা সাফাই দিয়াছিলেন যে, তাঁহারা বাধ্য হইয়া উচ্চতম স্তরের কর্তাদের নির্দেশ পালন করিয়াছিলেন, তাঁহাদের যুক্তি গ্রাহ্য হয় নাই। অন্যায়ের যথাসাধ্য প্রতিবাদ করিবার দায় নাগরিকেরও কম নহে, এবং তাহার উপায়ও কম নাই। মার্কিন অভিনেতা কেভিন স্পেসি বহু মহিলাকে যৌন হয়রান করিয়াছেন, এই সত্য সম্মুখে আসে গত বৎসর। এ বৎসর তাঁহার একটি ছবি মুক্তি পাইয়াছে। প্রথম দিনে ব্যবসা সাকুল্যে ১২৬ ডলার! এমন সার্বিক প্রত্যাখ্যানই প্রত্যুত্তর। অর্থ বা ক্ষমতা থাকিলেও সমর্থন জুটিবে না দুষ্কৃতীর— এই বার্তা ন্যায্য সমাজ গড়িতে সাহায্য করিবে।

Protest Google China Secrecy Google Employees
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy