Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সুযোগ

ভারতীয় রাজনীতিকে বিজেপি যে কদর্যতায় টানিয়া লইয়া গিয়াছে, কংগ্রেসও সেই অতলে নামিয়াই তাহার পাল্টা দেওয়ার চেষ্টায় মশগুল।

—ছবি এএফপি।

—ছবি এএফপি।

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ২২:২৯
Share: Save:

জওহরলাল নেহরু কাশ্মীরি ব্রাহ্মণই ছিলেন বটে, তাঁহার গোত্রও দত্তাত্রেয়ই ছিল। কিন্তু, রাহুল গাঁধী তো তাঁহার বংশধর নহেন, দৌহিত্রের পুত্র। অতএব, পিতার মাতামহের গোত্র তাঁহার হইতে পারে না।’— এই অত্যাশ্চর্য বিশ্লেষণটি যাঁহার, তিনি বিজেপির খুচরা নেতা নহেন। ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। অবশ্য, যে সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আসিয়া অর্থনীতির যুক্তি পেশ করিয়া যান, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেন অর্থমন্ত্রী, সেই সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী নিশ্চয় জাতি-বর্ণ-গোত্র লইয়া গবেষণা করিতে পারেন। তাঁহারা সম্ভবত এই বিশ্লেষণকেই রাজনৈতিক আক্রমণের পরাকাষ্ঠা জ্ঞান করেন। তাঁহাদের দোষ নহে, দোষ রাহুল গাঁধীর। কংগ্রেসের। ভারতীয় রাজনীতিকে বিজেপি যে কদর্যতায় টানিয়া লইয়া গিয়াছে, কংগ্রেসও সেই অতলে নামিয়াই তাহার পাল্টা দেওয়ার চেষ্টায় মশগুল। রাহুল এক মন্দির হইতে অন্য মন্দিরে ছুটিয়া বেড়াইতেছেন। নিজের উপবীত প্রদর্শন করিতেছেন। তবে, বিজেপির খেলায় বিজেপিকে হারানো দুষ্কর। হর্ষ বর্ধনের টুইট যদি একটি উদাহরণ হয়, নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী ভাষণ অন্য উদাহরণ। তিনি রাহুলের ভাষণ বিকৃত করিয়া জনসভায় বলিলেন, ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগানে রাহুলের আপত্তি। মুখে কথা বসাইয়া দেওয়ার খেলাটি পুরাতন, কিন্তু কথার জোগানটি রাহুল গাঁধীই দিয়াছেন। ‘ভারত মাতা’ বিজেপির সম্পত্তি নহে, সত্য, কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে ভারত মাতার ধারণাটির একটি সরলীকৃত রূপকে বিজেপি যে রাজনৈতিক ভাবে বহুল (অপ)ব্যবহার করিয়াছে, তাহা রাহুলও বিলক্ষণ জানেন। এই অবস্থায় নিজের ভাষণে ভারত মাতার প্রসঙ্গ টানিয়া আনিবার অর্থ, বিজেপির ফাঁদে পা দেওয়া। রাহুল ভুলটি করিয়াই চলিয়াছেন।

অথচ, কোনওটিরই প্রয়োজন ছিল না। গত কয়েক বৎসরে রাহুলের বেশ কিছু উক্তি, আচরণ বারে বারেই তাঁহার প্রপিতামহের কথা স্মরণ করাইয়া দিয়াছে। দেশের উপর, ভোটারদের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখিতে নেহরুকে নরম হিন্দুত্বের শরণ লইতে হয় নাই। শশী তারুর যে যুক্তিই দিন, মন্দিরে মন্দিরে ছুটিয়া না বেড়াইলে বিজেপির ক্লেদাক্ত রাজনীতির প্রত্যুত্তর করিবার উপায় কংগ্রেসের বা রাহুলের নাই, এই কথাটি যুক্তির ধোপে টিকিবে না। রাহুল এবং কংগ্রেসের অপরাপর নেতারা বরং এই সুযোগটিকে কাজে লাগাইতে পারিতেন— ভারতীয় রাজনীতি বলিতে যে শুধু হনুমানের জাতবিচার আর মন্দির নির্মাণের হুঙ্কার বোঝায় না, রাজনীতির রেটরিকের পরিসরেও যে এখনও ধর্মনিরপেক্ষতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, প্রগতিবাদের জায়গা আছে, তাহা প্রমাণ করিতে পারিতেন। বিজেপি যে তর্ককে টানিয়া কাদায় নামাইতে উদ্গ্রীব, কংগ্রেস তাহাকেই শালীনতার স্তরে, যুক্তির স্তরে ফিরাইয়া লইয়া যাইতে পারিত। রাজনীতির সেই রেটরিক কেমন হইতে পারে, তাহার নমুনা খুঁজিতে বেশি দূরে যাইতে হইত না। জওহরলাল নেহরুর যে কোনও বক্তৃতা পাঠ করিলেই যথেষ্ট হইত। ধর্মকে ব্যক্তিপরিসরে থাকিতে দিয়া, জাতীয়তাবাদ হইতে উগ্রতার বাতাস কাড়িয়া, উদারপন্থাকে ভারতীয় রাজনীতির মূল ধারা হিসাবে স্বীকার করিয়া একটি নূতন (অথবা, অর্ধশতকেরও বেশি পুরাতন) ভাষ্য নির্মাণের সুযোগ রাহুল গাঁধীর ছিল। বস্তুত, এখনও আছে। সুযোগটিকে কাজে লাগান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress BJP Hiduism Religious Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE