Advertisement
E-Paper

গোড়ায় গলদ

মূল সমস্যা কাঠামোগত। মাধ্যমিকের ন্যায় পরীক্ষার যে গুরুত্ব সমাজে রহিয়াছে, তাহা বহুলাংশেই নির্মিত ও আরোপিত। দশম শ্রেণির পরীক্ষাটি অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার তুলনায় ভিন্ন বা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ কেন হইবে, শিক্ষার তত্ত্বে তাহার কোনও কারণ খুঁজিয়া পাওয়া মুশকিল।

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
ফাঁস হওয়া অঙ্ক প্রশ্নপত্র।—নিজস্ব চিত্র।

ফাঁস হওয়া অঙ্ক প্রশ্নপত্র।—নিজস্ব চিত্র।

প্রত্যহ নূতন রেকর্ড স্থাপিত হইতেছে। মাধ্যমিকের বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা আরম্ভ হওয়ার কত কম সময়ের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে তাহা ছড়াইয়া পড়িতে পারে, তাহার রেকর্ড। সমস্যাটি শিক্ষামন্ত্রীকে বিচলিত করিয়াছে। তিনি বিবিধ নির্দেশ দিয়াছেন। কিন্তু নিট ফল, শূন্য। প্রশ্ন যেমন ফাঁস হইবার, হইতেছে। হোয়াটসঅ্যাপের ঘাড়ে সবখানি দোষ চাপাইয়া দেওয়া মুশকিল। কারণ, যখন দুনিয়া স্মার্টফোনের নাম শুনে নাই, তখনও প্রশ্ন ফাঁস হইত। আবার, শুধু পশ্চিমবঙ্গকেও দায়ী করা অন্যায় হইবে। গত বৎসরই সিবিএসই-র প্রশ্ন ফাঁস হইয়া একটি সর্বভারতীয় কেলেঙ্কারি হইয়াছিল। অর্থাৎ, সমস্যাটি কোনও প্রযুক্তি বা বিশেষ কোনও রাজ্যের নহে, সমস্যা পরীক্ষা ব্যবস্থায়। সেই প্রসঙ্গে যাওয়ার পূর্বে উল্লেখ করা বিধেয় যে এই অব্যবস্থায় সমাজের একটি বড় ভূমিকা রহিয়াছে। স্থানীয় স্তরের মেজো-সেজো নেতারা প্রশ্ন ফাঁসে কী ভূমিকা লহেন, রাজ্যবাসী সেই কথা অভিজ্ঞতায় জানেন। কিন্তু, তাহাও উপসর্গ মাত্র।

মূল সমস্যা কাঠামোগত। মাধ্যমিকের ন্যায় পরীক্ষার যে গুরুত্ব সমাজে রহিয়াছে, তাহা বহুলাংশেই নির্মিত ও আরোপিত। দশম শ্রেণির পরীক্ষাটি অন্যান্য শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার তুলনায় ভিন্ন বা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ কেন হইবে, শিক্ষার তত্ত্বে তাহার কোনও কারণ খুঁজিয়া পাওয়া মুশকিল। এই পরীক্ষাটিকে গুরুত্বপূর্ণ করিয়া তোলা ছাত্রদের স্বার্থে নহে, শিক্ষাব্যবস্থার কাজ সহজ করিয়া তুলিবার জন্য। বোর্ডের পরীক্ষা, সমস্ত পরীক্ষার্থীর জন্য একই প্রশ্ন— যেন ছাত্রদের গুণমান বিচারের জন্য একেবারে ‘ল্যাবরেটরি কন্ডিশন’ তৈরি করিয়া লওয়া। যুক্তি সহজ— একই প্রশ্নে একই সময়ে পরীক্ষা দিলে কে ভাল আর কে মন্দ, তাহা প্রশ্নাতীত ভাবে প্রমাণ হইয়া যাইবে। কোনও এক জন ছাত্র সারা বৎসর ঠিক ভাবে শিখিতেছে বা পড়িতেছে কি না, একটি পরীক্ষার মাধ্যমে তাহার বিচার সম্ভব, এই ধারণটিই সমস্যার। সেই সমস্যাকে আরও বহু গুণ বাড়াইয়া তোলে কেন্দ্রীয় পরীক্ষার ভাবনা। তাহাতে বোর্ডের সুবিধা, একটি পরীক্ষা লইলেই দায় মিটিয়া যায়। শিক্ষকদেরও সুবিধা, সারা বৎসর ছাত্রদের মূল্যায়ন করিবার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকে না। ফলে, ছাত্রদের নিকটও এই বোর্ডের পরীক্ষা জীবনমরণের প্রশ্ন হইয়া উঠে। সারা বৎসর যাহাই হউক, যে কোনও মূল্যে বোর্ডের পরীক্ষাটিকে উতরাইয়া দেওয়ার জন্য তাহারা মরিয়া হয়। বাকি সমস্যাগুলি অনুসারী মাত্র।

পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোনের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকুক। কিন্তু, তাহার জোরে প্রশ্ন ফাঁস বা টোকাটুকির ন্যায় সমস্যা দূর হইবে না। তাহার জন্য শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন। বোর্ডের পরীক্ষা নামক ধারণাটিকেই দূর করিতে হইবে। প্রতিটি স্কুলের নিজস্ব মূল্যায়ন পদ্ধতি থাকুক। উচ্চতর শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিও ছাত্র বাছাই করিবার সময় নিজস্ব মাপকাঠি ব্যবহার করুক। প্রায় সকল অগ্রগণ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নিজস্ব ভর্তিপরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র বাছে। অর্থাৎ, বোর্ডের মূল্যায়নে তাহাদের ভরসা নাই। স্কুলগুলিকেও বার্ষিক পরীক্ষার বদলে বৎসরভর মূল্যায়নের পথে হাঁটিতে হইবে। প্রশ্নও এমন হওয়া প্রয়োজন, যাহাতে মুখস্থবিদ্যা বা টুকলিতে বৈতরণি পার হওয়া অসম্ভব হয়। ছাত্ররা কতখানি শিখিল, তাহাই মূল্যায়নের মূল উদ্দেশ্য, যে কোনও মূল্যে মাধ্যমিকের ঘাট উতরাইবার ক্ষমতা যাচাই নহে।

Madhyamik Exam Question Paper
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy