Advertisement
E-Paper

এ গণতন্ত্র পরিণত হচ্ছে না

এখনও এমনটাই ধরে নিতে চাইছি যে, উত্তরপ্রদেশে রাজনৈতিক সমীকরণের ভাঙাগড়ার সঙ্গে সে রাজ্যের খনি কেলেঙ্কারির অভিযোগ কেন্দ্রীয় এজেন্সির আচমকা তৎপরতার কোনও সম্পর্ক নেই

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫০
অখিলেশ যাদব। —ফাইল চিত্র।

অখিলেশ যাদব। —ফাইল চিত্র।

এই ঘটনা পরম্পরা যদি কাকতালীয় হত, তাহলেই সবচেয়ে খুশি হতাম। এখনও এমনটাই ধরে নিতে চাইছি যে, উত্তরপ্রদেশে রাজনৈতিক সমীকরণের ভাঙাগড়ার সঙ্গে সে রাজ্যের খনি কেলেঙ্কারির অভিযোগ কেন্দ্রীয় এজেন্সির আচমকা তৎপরতার কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু আমরা তো ঘরপোড়া গরু, মেঘে রক্তিম আভা দেখলে আমাদের মনে সংশয় জাগে বই কি!

গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল জয়ের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিল উত্তরপ্রদেশে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্য। সেই সাফল্যের রেশ ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও ছিল। অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে উত্তরপ্রদেশে সরকার গড়েছিল বিজেপি। কিন্তু তার পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্যে। বিরোধী শিবিরে এক বিরল ঐক্য বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ধরাশায়ী করেছে বিজেপি-কে। সাফল্যের সেই সূত্র এখন আগলে রাখতে চায় উত্তরপ্রদেশের দুই মূল বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টি। অখিলেশ যাদব এবং মায়াবতীর মধ্যে আসন সমঝোতা প্রায় চূড়ান্ত। এই আসন সমঝোতাই যে বিজেপির পুনর্বার দিল্লি দখলের পথ কঠিন করে তুলতে পারে। তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে সংশয় কমই। সেই কারণেই কি উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ যাদবের বিরুদ্ধে তৎপর হলেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা? সেই কারণেই কি খনি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে আচমকা এত হই চই? এ দেশের রাজনীতির পরিচিত কু-অভ্যাসগুলোই উস্কে দিচ্ছে এ সব প্রশ্ন।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র তার বৃহত্তম গণতান্ত্রিক উৎসবের দিকে এগোচ্ছে। অত্যন্ত ইতিবাচক একটা অবকাশ, সন্দেহ নেই। প্রাক-লক্ষণগুলোও ইতিবাচকই হওয়ার কথা। কিন্তু ভারতে ঘটে ঠিক উল্টোটাই। এ দেশে সারা বছরই শাসকের বিরুদ্ধে নানা ভাবে প্রশাসনের অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। ভোট এলে সে সব অভিযোগ কয়েক গুণ বেড়ে যায়, তাই প্রশাসনিক ক্ষমতার অসাংবিধানিক প্রয়োগ করে বিরোধী পক্ষকে কোণঠাসা করার এই শাসকীয় অগণতান্ত্রিকতা যে শুধু অভিযোগ তা কিন্তু নয়। অনেক বারই প্রমাণিত হয়েছে এই ধরনের অভিযোগের সত্যতা। রাজ্যের পুলিশ হোক কিংবা কেন্দ্রের হাতে থাকা এজেন্সি, ভোটের আগে বা ভোটের মরসুমে এদের বিস্ময়কর এবং আচম্বিত তৎপরতা যে আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, ভোট মেটার পরে তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে যেতে দেখেছি আমরা অনেক বারই। উত্তরপ্রদেশের খনি কেলেঙ্কারি নিয়ে সিবিআইয়ের যে তৎপরতা ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ২০১৯ সালের মে মাসের পরেও তৎপরতার বহর বা অভিমুখ তেমনই থাকবে তো? যদি ভোটের আগেই ভেস্তে যায়, অখিলেশ-মায়াবতীর সমঝোতা, তা হলে সিবিআইয়ের তৎপরতাও আচম্বিতে ভেস্তে যাবে না তো? জনসাধারণের মনে, এই সব প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে না, এমনটা যদি কেউ ভেবে নেন, তা হলে গুরুতর ভুল হয়ে যাবে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

গণতন্ত্রে নির্বাচন আসবে, নির্বাচন যাবে। কারও উত্থান ঘটবে, কেউ ধরাশায়ী হবে। নাগরিক চাইলে সে পরিস্থিতিও ফের বদলে যাবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দিন দিন সমুন্নত হবে, গণতন্ত্র ক্রমশ পরিণত হবে-এমনটাই কাম্য। সেটাই অগ্রগমনের লক্ষণ। নরেন্দ্র মোদীর ভারত হোক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ হোক, বিপ্লব দেবের ত্রিপুরা হোক, অমরেন্দ্র সিংহের পঞ্জাব হোক, পিনারাই বিজয়নের কেরল হোক-গণতন্ত্রের উপরে প্রহার কোথাওই কাম্য নয় এ কথাটা সকলেরই মাথায় রাখা দরকার।

আরও পড়ুন: সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে তৈরি অখিলেশ

Akhilesh Yadav Newsletter Anjan Bandyopadhyay অখিলেশ যাদব CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy