Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

‘শারীরিক’ দূরত্ব

ইতিহাস বলিবে, মহামারি বা অতিমারি ঠেকাইতে দূরত্বের নিদানটি প্রাচীন। ১৯১৬ সালে যখন নিউ ইয়র্কে পোলিয়ো মহামারি ছড়াইয়া পড়ে, তখন যাবতীয় জনসমাবেশ ও বৈঠক স্থগিত হইয়া গিয়াছিল।

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০০:২৪
Share: Save:

এই মুহূর্তে মহামারির কবল হইতে ধরিত্রীকে বাঁচাইবার একটিই উপায়— দূরত্ব বজায় রাখা। জানাইয়াছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সকল দেশই সেই মোতাবেক ব্যবস্থা লইতেছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক প্রধানও বারংবার ছবি আঁকিয়া এবং রাস্তায় দাগ কাটিয়া দূরত্বের সংজ্ঞা সম্পর্কে জনতাকে অবহিত করিতেছেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইহাও জানাইতেছে যে দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ব্যবহৃত সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বা সামাজিক দূরত্ব পরিভাষাটি আর ব্যবহার না করাই শ্রেয়। উহার পরিবর্তে ফিজিক্যাল ডিস্ট্যান্সিং বা শারীরিক দূরত্ব উপযুক্ত। কেন? এই রোগের হাত থেকে বাঁচিতে সকলকে স্বগৃহে থাকিবার পরামর্শ দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সহিত যোগাযোগ ছিন্ন করিতে বলা হয় নাই। বরং এই দুঃসময়ে একে অপরের পার্শ্বে দাঁড়াইবার প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়াছে। এমনকি অবাধ মেলামেশার ফলে কী ভাবে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটিতে পারে, তাহাও একে অপরকে বুঝাইয়া দেওয়া বাঞ্ছনীয়। অতএব দূরত্বটি সামাজিক নহে, শারীরিক।

ইতিহাস বলিবে, মহামারি বা অতিমারি ঠেকাইতে দূরত্বের নিদানটি প্রাচীন। ১৯১৬ সালে যখন নিউ ইয়র্কে পোলিয়ো মহামারি ছড়াইয়া পড়ে, তখন যাবতীয় জনসমাবেশ ও বৈঠক স্থগিত হইয়া গিয়াছিল। বন্ধ হইয়াছিল প্রেক্ষাগৃহ, প্রমোদ উদ্যান, সুইমিং পুল, সমুদ্রসৈকত। পোলিয়ো হইতে বাঁচিতে সকলকে স্বগৃহে থাকিবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছিল। ইহার পর ১৯১৮-র ইনফ্লুয়েঞ্জা অতিমারি ও ২০০৩ সার্স-ও এই ভাবেই ঠেকাইবার প্রচেষ্টা দেখা যায়। ‌রোগীর সংখ্যা যাহাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষমতাকে অতিক্রম করিয়া না যায়, সেই কারণে এই পরামর্শ। দেখা গিয়াছে, মেলামেশা বন্ধ হইলে অসুস্থের সংখ্যাবৃদ্ধির হারটিও হ্রাস পাইবার সম্ভাবনা থাকে। প্রযুক্তি-পূর্ব যুগে শারীরিক দূরত্ব সামাজিকও ছিল বটে, তবে বর্তমানে আর যোগাযোগ স্থাপন করিতে কাহারও সম্মুখে উপস্থিত হইবার প্রয়োজন নাই। বরং উল্টা একটি বিষয় লক্ষণীয়। যে সমাজমাধ্যম চিরাচরিত বন্ধুত্ব ভাঙিয়া দিতেছিল বলিয়া এত দিন অভিযোগ উঠিত, করোনাভাইরাসের কালে তাহাই সকল বন্ধুর সহিত যোগাযোগের এক এবং একমাত্র নিরাপদ মাধ্যম হইয়া উঠিয়াছে।

সর্বক্ষণের গৃহবন্দিত্ব সকলের পক্ষেই দুঃসহ। বিশেষত, যাঁহারা একাকী দিনযাপন করেন, তাঁহাদের মানসিক সঙ্কটও উপস্থিত হইবার আশঙ্কা রহিয়াছে। এতখানি সময় লইয়া কী করিবেন, অনেকেই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছেন না। সুতরাং, দৈনন্দিন কাজের চাপে যে সকল বন্ধু বা পরিজনের সহিত কথা বলিবার অবকাশ মিলিত না, ইত্যবসরে তাঁহাদের সহিত আলাপ জমিতেছে। মধ্যবিত্ত ঘরে আরও একটি ঘটনা ঘটিয়াছে। গৃহকর্মীদের ছুটি দেওয়ার ফলে গৃহের সকল দায়িত্বই আপনাপন সদস্যদের পালন করিতে হইতেছে। যাঁহারা কোনও দিন রান্নাঘরের দিকে যাইতেন না, কিংবা ঘর মুছিবার কথা ভাবিতেন না, তাঁহারাই আজ সযত্নে সেই সকল কাজে রত হইয়াছেন। সকলে মিলিয়া এক আশ্চর্য যৌথযাপনের সূচনা ঘটিয়াছে, যাহা সম্ভবত রূপকথারও অসাধ্য ছিল। অতএব, দূরত্ব বজায় রাখিবার ফলে যেমন করোনাভাইরাস রুখিয়া দেওয়া যাইতে পারে, তেমনই সামাজিক যোগও বাড়িতে পারে। ইহা আশার কথা।

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CoronaVirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE