Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

কর্মহীন

মার্চের শেষে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৮ শতাংশ, ওই মাসেরই শেষ সপ্তাহ হইতে শুরু করিয়া পরের দুই মাস সমগ্র দেশে লকডাউনের দরুন জীবন-জীবিকা থমকাইয়া গিয়াছে।

 শুধু এপ্রিল মাসেই কাজ হারাইয়াছেন ১২ কোটি ২০ লক্ষ ভারতীয়, ইহার মধ্যে ৭৫ শতাংশই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। ছবি: এপি।

শুধু এপ্রিল মাসেই কাজ হারাইয়াছেন ১২ কোটি ২০ লক্ষ ভারতীয়, ইহার মধ্যে ৭৫ শতাংশই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। ছবি: এপি।

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

মেঘ ঘনাইয়া আসিয়াছিল, এই বার বজ্রপাতও হইল। ‘সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’ জানাইল, কোভিড-১৯ ও তজ্জনিত লকডাউনের জেরে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম দুই মাসে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়াইয়াছে প্রায় ২৩.৫ শতাংশে। মার্চের শেষে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৮ শতাংশ, ওই মাসেরই শেষ সপ্তাহ হইতে শুরু করিয়া পরের দুই মাস সমগ্র দেশে লকডাউনের দরুন জীবন-জীবিকা থমকাইয়া গিয়াছে। শুধু এপ্রিল মাসেই কাজ হারাইয়াছেন ১২ কোটি ২০ লক্ষ ভারতীয়, ইহার মধ্যে ৭৫ শতাংশই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিক। কর্মহীন বিপুলসংখ্যক চাকুরিজীবী এবং ব্যবসায়ীও। ২০১৯-২০’এর শেষে উদ্যোগজীবীর সংখ্যা যেখানে ছিল ৭ কোটি ৮০ লক্ষ, শুধু এপ্রিল-অন্তেই তাহা আসিয়া ঠেকিয়াছে ৬ কোটিতে।

জীবিকা-বিন্যাস অনুসারে অতিমারিজনিত বেকারত্বের দুরবস্থার চিত্রটি যখন এই রূপ, বয়সভিত্তিক তথ্য-পরিসংখ্যান আরও পীড়াদায়ক। শুধু এপ্রিলেই কর্মহীন হইয়াছেন দেশের ২ কোটি ৭০ লক্ষ তরুণ, যাঁহাদের বয়স ২০-৩০ বৎসরের মধ্যে। মে মাসের শেষ দিকে কিছু কিছু কার্যক্ষেত্র চালু হইয়াছে ঠিকই, কিন্তু এই বিপুল কর্মহীন যুবশক্তির কত অংশ ইতিমধ্যে পুরাতন বা নূতন কাজে যোগ দিতে পারিয়াছেন, বলা কঠিন। প্রাক-করোনা কালেও ভারতে অল্পবয়সিদের কর্মসংস্থানের চিত্রটি আদৌ সুবিধার ছিল না। বেকারত্বের হার অর্ধশতকের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাইয়াছিল। তাহার উপর আসিয়া পড়িল অতিমারি ও লকডাউন। প্রতি বৎসর এই সময় তরুণ-যুবাদের একটি বিরাট অংশ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়া থাকে। কর্মজীবনের প্রারম্ভেই এই বিপুল সম্ভাবনাময় মানবসম্পদ বেকারত্বের ন্যায় বিভীষিকার সম্মুখীন হইলে তাহার মানসিক ও আর্থ-সামাজিক অভিঘাত কী রূপ হইতে পারে, তাহা বলিবার অপেক্ষা রাখে না। কেহ যুক্তি দিবেন, অল্প বয়স বলিয়াই বরং তাহারা বিকল্প কাজ খুঁজিয়া লইতে পারিবেন। কিন্তু ব্যাপার তত সরল নহে। কিছু ছোট ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও হকাররা যদিও বা কাজে নামিয়াছেন, কিন্তু যে তরুণ বেতনভুক চাকুরিজীবীরা কাজ হারাইয়াছেন, তাঁহাদের ঘুরিয়া দাঁড়াইবার লড়াইটি যারপরনাই কঠিন।

অতিমারি চলিয়া যাইবার পরে কি কর্মসংস্থান ও কর্মক্ষেত্রের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইবে? সেই আশার রেখাটি ক্ষীণ বলিয়াই বোধ হইতেছে। ন্যুব্জ অর্থনীতির আবহে ক্রেতা ও উপভোক্তা অতিমাত্রায় সতর্ক ও মিতব্যয়ী, বাজারে পণ্য ও পরিষেবাসমূহের চাহিদা নাই। এই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ হইতে অতিমারি বিদায় লইবার পরেও দীর্ঘ সময় লাগিবে। বেকারত্ব এই মুহূর্তে শুধু ভারতের নহে, সমগ্র বিশ্বেরই সমস্যা। উন্নত বিশ্বে, বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে তবু কর্মহীনদের জন্য সরকারি সহায়তা প্রকল্প আছে, ভারতের ন্যায় বিপুল জনসংখ্যার দেশে তদ্রূপ প্রকল্পের সাধ থাকিলেও সাধ্য সুদূরপরাহত। মনে রাখিতে হইবে, এই দেশে ১৫-২৯ বৎসর বয়সি তরুণের সংখ্যা প্রায় ৩৯ কোটি, মোট জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশ, সমগ্র বিশ্বে সর্বাধিক। যে তারুণ্যে ভর করিয়া দেশ সমৃদ্ধির পথে আগাইতে পারিত, কর্মহীনতার প্রকোপে সেই তারুণ্যের বৃহদংশই ভার হইয়া উঠিয়াছে। এই মানবসম্পদ সদ্ব্যবহারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে লইতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Unemployment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE