Advertisement
E-Paper

ইশারাই যথেষ্ট

স্পষ্ট করিয়া বলা প্রয়োজন, লালুপ্রসাদ যাদবই হউন বা তাপস পাল-সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অথবা প্রণয় রায়, কাহারও বিরুদ্ধেই সিবিআই তদন্ত হওয়া আপত্তিকর নহে।

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৭ ০০:০০

খাঁচার তোতাপাখি কী বলিবে, তাহা নিতান্তই মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। দুর্জনের মতে, ঠিক সেই কারণেই সিবিআই হইতে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট অথবা আয়কর দফতর, কোনও প্রতিষ্ঠানই বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে নড়িয়া বসে না। লালুপ্রসাদ যাদবের বাড়িতে তল্লাশি হয়, প্রণয় রায়ের বাড়িতে কার্যত বিনা কারণে সিবিআই-এর কর্মীরা পৌঁছাইয়া যান, অথচ ব্যাপম কেলেঙ্কারি লইয়া টুঁ শব্দটি নাই। তিস্তা সেতলবাদের বিরুদ্ধে সামান্য কয়েক হাজার টাকার বেহিসাবের ফিরিস্তিও কর্তারা গুছাইয়া রাখেন, অথচ কর্নাটকে বহু হাজার কোটি টাকার খনি কেলেঙ্কারির তদন্ত আর অগ্রসরই হয় না। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় সুশাসনের উদাহরণ অতি বিরল। দুর্নীতির তদন্তের প্রশ্নে তাহার নিদর্শন খুঁজিয়া মরা নিতান্তই অর্থহীন হইয়াছে। আশঙ্কা হইতেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করিবার প্রতিশ্রুতিটিও নেহাত নির্বাচনী ‘জুমলা’ ছিল। ভারতীয় রাজনীতি বহু দিন যাবৎ যে পথে চলিয়াছে, তাহাতেই আরও বেশ কয়েক কদম অগ্রসর হওয়া ভিন্ন নরেন্দ্র মোদীরা আর কিছুই করিতে চাহেন নাই।

স্পষ্ট করিয়া বলা প্রয়োজন, লালুপ্রসাদ যাদবই হউন বা তাপস পাল-সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অথবা প্রণয় রায়, কাহারও বিরুদ্ধেই সিবিআই তদন্ত হওয়া আপত্তিকর নহে। কিন্তু, শিবরাজ সিংহ চৌহান, রমন সিংহ বা জনার্দন রেড্ডিদের বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ জমিয়া উঠুক, সিবিআই কিছু করিবে না, আর বিরোধীদের নাজেহাল করিয়া ছাড়িবে— তদন্তকারী সংস্থা এমন দ্বিচারী অবস্থান লইলে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ উঠিবেই। বিশেষত, বিরোধীদের শায়েস্তা করিতে তদন্তকারী সংস্থাগুলি নির্দিষ্ট বিধিরও তোয়াক্কা করিতেছে না, দিল্লির শাসকদের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অত্যুৎসাহী হইতেছে, এমন অভিযোগ একাধিক বার উঠিয়াছে। সিবিআই বা ইডি নিরপেক্ষ কি না, সেই প্রশ্নের চূড়ান্ত বিচার অসম্ভব। প্রতিষ্ঠানগুলির আচরণ দেখিয়া কী মনে হইতেছে, এক্ষণে তাহাই প্রধান প্রশ্ন। নরেন্দ্র মোদীর জমানা সেই প্রশ্নে ডাহা ফেল করিয়াছে।

আসল কথা, সিবিআই-আদি প্রতিষ্ঠানগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণ নষ্ট হইয়া গিয়াছে। অকারণে নহে। যে ব্যাপম কাণ্ডে অন্তত ৫০ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হইয়াছে, সেখানেও সিবিআই তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করিতে পারে নাই বলিয়া প্রকাশ। জনার্দন রেড্ডির কন্যার বিবাহে ধামাকা দেখিয়া গোটা দেশের চোখ ধাঁধাইয়া গিয়াছে, অথচ তাঁহার বিরুদ্ধেও নাকি দুর্নীতির প্রমাণ নাই। এই ব্যর্থতার জন্য তদন্তকারী অফিসারদের অপরিসীম অপদার্থতা দায়ী, না কি শাসক দলের ইশারায় ব্যর্থতাগুলি রচিত হয়, তাহা অনুমান করা চলে। প্রতিষ্ঠানগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করিয়া নেতারা এই ক্ষতিটি করিয়াছেন। সাধারণ মানুষ যে সংস্থাগুলির নিরপেক্ষতায় ভরসা করিত, যে সংস্থাগুলিকে গণতন্ত্রের প্রহরী জ্ঞান করিত, এখন আর তাহাদের উপর বিন্দুমাত্র আস্থা পোষণ করা দুষ্কর হইয়াছে। রাজনৈতিক আদেশভিন্নও যদি সিবিআই কোনও তদন্তে নামে, সাধারণ মানুষ তাহাকেও সন্দেহের চোখেই দেখিবে। বুঝিতে চেষ্টা করিবে, সেই ব্যক্তি বা সংস্থাটি কোনও ভাবে নয়াদিল্লির বিরাগভাজন হইয়াছিলেন কি না। বিশ্বাসের এই অভাব পূরণ করিবে, এমন সাধ্য কাহার?

CBI Central Ruling Party Scandal BJP সিবিআই Credibility
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy