Advertisement
E-Paper

শুধু আঙুল তুললে হয় না, কর্তব্যও পালন করতে হয়

আমরা সমালোচনায় অত্যন্ত পারদর্শী। যে কারণে কোনও বিষয়ের সমালোচনা আমরা করে থাকি, সেই কারণের নিরসনের পথ খুঁজতে বলা হলে আমরা অনেকেই একটু দমে যাই।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০৪:২৫
নায়ক: ইতালিতে গোল করা অভিজিৎ সরকার। নিজস্ব চিত্র

নায়ক: ইতালিতে গোল করা অভিজিৎ সরকার। নিজস্ব চিত্র

আমরা সমালোচনায় অত্যন্ত পারদর্শী। যে কারণে কোনও বিষয়ের সমালোচনা আমরা করে থাকি, সেই কারণের নিরসনের পথ খুঁজতে বলা হলে আমরা অনেকেই একটু দমে যাই। কেউ যখন নিরসনের পথটাও খুঁজে দেন এবং বুঝিয়ে দেন নিরসনের প্রক্রিয়াটিকে সফল ভাবে রূপায়িত করতে হলে আমাদের প্রত্যেককে কী কী দায়িত্ব বা কর্তব্য পালন করতে হবে, তখন আমরা আরও পিছু হটে যাই।

জনগোষ্ঠীর চরিত্র যেমন হবে, জাতীয় চরিত্রেও তার ছাপ পড়বে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। খেলাধূলার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আসরে ভারত যে অত্যন্ত সমীহের কোনও অস্তিত্ব নয়, সে আমরা সকলেই জানি, তা নিয়ে হা-হুতাশও আমাদের বিস্তর। শুধুমাত্র ক্রিকেটের আসরেই আমাদের মুখ উজ্জ্বল এবং অন্য কোনও খেলাতেই তেমন নয় কেন? বার বার প্রশ্ন তুলি, সরকার তথা প্রশাসনিক সদিচ্ছাকে দায়ী করি, ক্রীড়াসংস্থাগুলির কর্মকর্তাদেরও তুলোধোনা করি। যখন প্রশ্ন ওঠে, ক্রিকেট ছাড়া অন্য বিভিন্ন খেলাধূলা নিয়ে সাধারণ ভারতবাসীর উৎসাহ কতখানি? আমরা উত্তর হাতড়াতে থাকি। যখন প্রশ্ন ওঠে, ক্রিকেট ব্যতীত অন্যান্য খেলাধূলায় ভারতের যেখানে যা যৎসামান্য সাফল্য রয়েছে, সে সবের খোঁজ রাখি কি না? আমরা অস্বস্তিতে পড়ে যাই, সম্ভবত মুখ চাওয়া-চাওয়ি করি।

ফুটবলের যুব বিশ্বকাপ ভারতে আয়োজিত হচ্ছে। খুব ছোটখাটো ইভেন্ট মোটেই নয়। পৃথিবীর ফুটবল মানচিত্রে ভারতের স্থান আগের চেয়ে সামান্য উন্নত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যুব বিশ্বকাপের মতো বিরাট ফিফা ইভেন্ট আয়োজনের বরাত পাওয়া ভারতের পক্ষে নিঃসন্দেহে অনেক বড় সম্মান, অনেক বড় প্রাপ্তি। বিশ্ব ফুটবলের এত বড় এক আসর নিয়ে যতটা উৎসাহিত থাকার কথা ছিল সাধারণ ভারতবাসীর, তার কিয়দংশও কি দৃশ্যমান? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা অনেকেই অস্বস্তি বোধ করব। কিন্তু অস্বস্তির শেষ এখানেই নয়। যুব বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে ভারতের যুব দল ইতালি গিয়েছিল। ফুটবল বিশ্বের অন্যতম শাসক যে ইতালি, সেই ইতালিরই এক যুব দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিতে ইতিহাস গড়েছে ভারতীয় কিশোররা। কোনও উদ্‌যাপন নেই। ইতালিতে গিয়ে ইতিহাস গড়ল যে ভারতীয় দল, এই বাংলার কিশোর অভিজিৎ সরকার, সে দলের সদস্য। শুধু তাই নয়, ভারতীয় দল যে দু’বার বল জড়িয়ে দিয়েছে ইতালির জালে, সেই দু’বারের মধ্যে এক বারের কৃতিত্ব এই বঙ্গসন্তানের। ক’জন খবর রেখেছে? খবর পাওয়ার পরেই বা কতটা উল্লাস করেছি? এ সব প্রশ্নের সদুত্তর যে মেলে না, সে নতুন কথা নয়। কিন্তু সদুত্তর দিতে না পারা সত্ত্বেও যে নিষ্ফলা সমালোচনার পথ বর্জন করে আত্মসমালোচনার পথটা বেছে নিতে শিখি না, সে বড় আশ্চর্যের বিষয়।

আইপিএল বা আইএসএল-এর মতো স্থানীয় স্তরের বাণিজ্যিক আসর নিয়ে উচ্ছ্বাস আমাদের প্রবল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে জাতীয় প্রতিনিধিদের অসামান্য অর্জনের খবর কানে এসে পৌঁছনোর পরেও সে উচ্ছ্বাসের সিকিভাগ উৎসারিত হয় না। শুধু ভারতীয় যুব ফুটবল দলের একটা সাফল্যের নিরিখে কিন্তু বিচার করছি না। আইপিএল নিয়ে যে উচ্ছ্বাস আমাদের, জাতীয় হকি দলের একের পর এক সাফল্যে কি ততটা আনন্দিত হয়েছি? বাণিজ্যিক কারণে আলোকবৃত্তের কেন্দ্রস্থলে থাকা এক টুর্নামেন্ট ঘিরে যত মত্ততা আমাদের, মহিলাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝুলন গোস্বামী অসামান্য রেকর্ড তৈরি করার পর কি ততটা উচ্ছ্বাস দেখিয়েছি? অনেকেই আমরা খবরই রাখি না, ঝুলন গোস্বামী মহিলাদের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন গোটা বিশ্বে সর্বাধিক উইকেটের অধিকারী।

খেলোয়াড় বা ক্রীড়াবিদ আকাশ থেকে পড়েন না। দেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকেই উঠে আসেন তাঁরা। কিন্তু দেশবাসীর সামগ্রিক মানসিকতাতেই যদি ঔদাসীন্য থাকে বা উৎসাহের আকাল থাকে, তা হলে উঠতি প্রজন্মের মধ্যেও খেলাধূলার জন্য উপচে পড়া উদ্দীপনার জন্ম হওয়া কঠিন। শুধু সমালোচনায় দায় না সেরে যদি নাগরিক হিসেবে কিছু দায়িত্ব বা কর্তব্য কাঁধে তুলে নিতে শিখি আমরা কোনও দিন, ছবিটা কিন্তু সে দিন দ্রুত বদলাতে শুরু করবে।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter Football Under-17 FIFA World Cup Indian Football Team
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy