Advertisement
E-Paper

শাসক দলের এই কণ্ঠস্বরে বিপদের আভাস রয়েছে

অমিত শাহের বক্তব্যে তাচ্ছিল্য রয়েছে। যা কিছু তাঁদের মতের সঙ্গে মেলে না, সেই সমস্ত কিছুর প্রতি তাচ্ছিল্য। শুধুমাত্র কণ্ঠস্বরের উচ্চতায় যাবতীয় সমালোচনাকে তুচ্ছতায় পর্যবসিত করার প্রচেষ্টা যেন এক। এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৩
অমিত শাহের কণ্ঠস্বরে এক শীতল স্রোত বইতে শুরু করেছে। তাঁর বার্তায় শাসকের রোষানলের ইঙ্গিত রয়েছে। ফাইল চিত্র।

অমিত শাহের কণ্ঠস্বরে এক শীতল স্রোত বইতে শুরু করেছে। তাঁর বার্তায় শাসকের রোষানলের ইঙ্গিত রয়েছে। ফাইল চিত্র।

সবাই দম্ভ খুঁজে পাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের উচ্চারণে, খুঁজে পাচ্ছেন ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার। কিন্তু শুধু দম্ভ, ঔদ্ধত্য, অহঙ্কার নয়, বিজেপি সভাপতির উচ্চারণে তার চেয়েও অনেক বড় বিপদ নিহিত রয়েছে।

রাজস্থানে দলীয় কর্মসূচির মঞ্চ থেকে কী বলেছেন অমিত শাহ? বলেছেন, আখলাকের মৃত্যু নিয়ে হইচই করা হয়েছিল, তার পরেও বিজেপি জিতেছে। বলেছেন, পুরস্কার ফেরত দেওয়ার হিড়িক পড়েছিল, তাও বিজেপি জিতেছে। বলেছেন, বিরোধীরা যা-ই করুন, ২০১৯-এও বিজেপি-ই জিতবে।

২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি জিতবে কি না, সে তর্ক অন্য। তর্কের মাধ্যমে সে প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে, এমন নিশ্চয়তাও নেই। কারণ এই সুবিশাল গণতন্ত্রে জনমতের গতিপ্রকৃতি অভ্রান্ত ভাবে আঁচ করা কারও পক্ষেই খুব সহজ কাজ নয়। তাই জনমত সমীক্ষাও কখনও মেলে, কখনও বিফলে যায়। তাই এত আগে থেকে ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের আভাস দেওয়ার চেষ্টা করা বৃথা। কিন্তু অন্য একটা আভাস মিলতে শুরু করেছে বিজেপি সভাপতির মন্তব্য থেকে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, মেরুকরণের চেষ্টা ততই প্রকট ও তীব্র হবে এবং যাবতীয় বিরোধী স্বরকে রক্তচক্ষু দেখানো হবে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

অমিত শাহের কণ্ঠস্বরে এক শীতল স্রোত বইতে শুরু করেছে। অমিত শাহের বার্তায় শাসকের রোষানলের ইঙ্গিত রয়েছে। আখলাকরা কেউ নন, আখলাকদের কোনও মূল্যই নেই, গুজবের ভিত্তিতে আখলাকদের গণপিটুনি দিয়ে মেরে দেওয়া হলেও কিছুই যায়-আসে না— এই রকম একটা বার্তাই যেন চারিয়ে গিয়েছে। আখলাক মানে কিন্তু শুধু আখলাক নন। আখলাক মানে শুধু মুসলিমরাও নন। আখলাক যেন যাবতীয় সংখ্যালঘুত্বের প্রতীক। ধর্মমতের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুত্ব, রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুত্ব, সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘুত্ব, জাতীয়তার বোধ বা দেশপ্রেমের বোধের ভিত্তিতে সংখ্যালঘুত্ব— আখলাক এখানে সব ধরনের সংখ্যালঘুত্বের প্রতীক হয়ে ধরা দিয়েছেন। অর্থাত্ যাঁরাই বিরোধিতা করবেন, যাঁরাই শাসকের দিকে আঙুল তুলবেন, যাঁরাই নিপীড়ন বা শোষণ বা দলনের অভিযোগ করবেন, তাঁদেরই বন্ধনীর বাইরে নিক্ষেপ করা হবে। তাঁদের কণ্ঠস্বর বা বক্তব্যকে নস্যাত্ করা হবে। তাঁদের আরও বেশি নিষ্পেষণের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। বার্তাটা অনেকটা এই রকমই বোধহয়।

অমিত শাহের বক্তব্যে তাচ্ছিল্য রয়েছে। যা কিছু তাঁদের মতের সঙ্গে মেলে না, সেই সমস্ত কিছুর প্রতি তাচ্ছিল্য। শুধুমাত্র কণ্ঠস্বরের উচ্চতায় যাবতীয় সমালোচনাকে তুচ্ছতায় পর্যবসিত করার প্রচেষ্টা যেন এক। এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই প্রচেষ্টা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ঠিক বিপ্রতীপ মেরুতে অবস্থান করে।

আর রয়েছে প্রশ্রয়। আখলাককে যাঁরা পিটিয়ে মারলেন, জুনেইদকে যাঁরা শেষ করে দিলেন, বাংলা থেকে রাজস্থানে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিককে যিনি খুন করলেন— সেই সবার প্রতি এক প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় যেন।

আরও পড়ুন: দেশে গণপিটুনিতে খুন হলেও ক্ষমতায় আসবে বিজেপিই, হুঙ্কার অমিত শাহের

অমিত শাহের সভাপতিত্বেই বিজেপি ২০১৯-এর ভোটযুদ্ধে লড়বে। অমিত শাহ নিশ্চয়ই রণকৌশল তৈরি করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। যাবতীয় বিরোধিতার প্রতি এই তাচ্ছিল্য, বিরোধী কণ্ঠস্বরের উপরে নেমে আসা অসাংবিধানিক তথা হিংসাত্মক আঘাতকে প্রশ্রয় দেওয়া— এ সবের মাধ্যমেই নির্বাচনী সাফল্যের পথ কেউ প্রশস্ত করতে চাইছেন কি না, বোঝা দুষ্কর। কিন্তু শাসক দলের কণ্ঠস্বরটা যে কারও কারও মধ্যে আতঙ্ক জাগাচ্ছে, তা বোঝা মোটেই কঠিন কাজ নয়।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay Amit Shah BJP অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি অমিত শাহ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy