ডেঙ্গি ভয়ানক, তাহার ব্যাপকতা গোপন করিবার চেষ্টা আরও ভয়ংকর। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাহাই করিতেছে। ডেঙ্গিবাহী মশার কীট কোথায় মিলিতেছে, কোন কোন এলাকায় রোগ বাড়িতেছে, কত জন মৃত, সরকার কিছুই জানায় নাই। অথচ যেখানে যখন ডেঙ্গি ধরা দিবে, সেখানে তখনই সরকার নাগরিকদের সতর্ক করিবে, ইহাই প্রত্যাশিত। সরকার নীরব থাকিতে পারে, মশারা চুপ করিয়া নাই। রাজ্যে ডেঙ্গি ফের মাথা চাড়া দিয়াছে। তাহা এ বৎসরও ব্যাপকতায় ও তীব্রতায় জনজীবনকে পর্যুদস্ত করিতে পারে, তাহার ইঙ্গিত মিলিয়াছে। নানা অঞ্চলে রোগের প্রকোপ অন্যান্য বৎসরকে ছাড়াইয়াছে বলিয়া নাগরকিদের একাংশের অভিযোগ। এসএসকেএম-এ একাধিক বার ডেঙ্গিবাহী মশার কীট মিলিয়াছে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ইতিমধ্যেই উনিশ জন আক্রান্তের খবর মিলিয়াছে। শিলিগুড়ি শহরের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড ডেঙ্গির আক্রমণে ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত। এমন টুকরো টুকরো খবর প্রকাশিত হইতেছে, অথচ সামগ্রিক পরিস্থিতি কতটা গুরুতর, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতর বা পুরসভা হইতে কোনও তথ্যই মেলে নাই। নাগরিকের কি সে তথ্য পাইবার অধিকার নাই?
জাতীয় স্তরে তথ্য-পরিসংখ্যান যাহা মিলিয়াছে, তাহা আশ্বস্ত করিতে পারে না। গত বৎসর বাইশ হাজারেরও অধিক ডেঙ্গি-আক্রান্ত লইয়া পশ্চিমবঙ্গ সারা দেশে শীর্ষে ছিল। মৃত্যু হইয়াছিল ৪৫ জনের, তাহাও রাজ্যকে প্রায় শীর্ষে পৌঁছাইয়াছে। এ বৎসর এখনও অবধি ৫৭১ জন আক্রান্তের খবর সরকারি ওয়েবসাইটে উঠিয়াছে। তাহার মধ্যে শতাধিক কেবল কলকাতায়। ইহা গত বৎসরের তুলনায় কম, কিন্তু সংক্রমণের সিংহভাগ ঘটে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে। গত বৎসরও অধিকাংশ সংক্রমণ এই সময়েই ঘটিয়াছিল। এ বৎসরও যে তেমনই বিপর্যয় হইবে না, তাহার আশ্বাস মেলে নাই। কারণ, নাগরিকের প্রাণ যাইলেও মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়ে নাই। স্বাস্থ্য দফতর হইতে পুরসভাগুলিকে তাগাদা দিতে হইয়াছে। স্বল্প কর্মী এবং সীমিত ক্ষমতার অজুহাতও পূর্বের মতোই প্রস্তুত। সর্বাপেক্ষা বিরক্তিকর রাজনৈতিক চাপান-উতোর। তৃণমূল মন্ত্রী গৌতম দেব শিলিগুড়িতে বাম পুরসভাকে দুষিয়াছেন কার্যে গাফিলতির জন্য। কিন্তু বিধাননগর-সহ তৃণমূল-পরিচালিত বিভিন্ন পুরসভাতেও যে কাজের কাজ হয় নাই, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হয় নাই, তাহা স্বীকার করিবে কে?
সমস্যা শুধু ডেঙ্গির নহে। ম্যালেরিয়াতে এ বৎসর এখনও অবধি আট জনের মৃত্যু হইয়াছে। গত বৎসরও পঁয়ত্রিশ হাজারের অধিক আক্রান্ত হইয়াছে, সর্বাধিক আক্রান্ত তিনটি রাজ্যের মধ্যে স্থান পাইয়াছে পশ্চিমবঙ্গ। ইহাতে স্পষ্ট, মশা তথা অন্যান্য রোগবাহী পতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের কার্যসূচিতে বড়সড় গোলযোগ থাকিয়া গিয়াছে। দুর্বলতা কোথায়, তাহা জানিয়াও সমাধান করা যায় নাই। সমস্যা পরিকল্পনায়, না অর্থবরাদ্দে, নাকি রূপায়ণের ত্রুটিতে, তাহা জানিবার অধিকার আছে রাজ্যবাসীর। সরকারের ব্যর্থতা দুঃখজনক, সাফল্যের অভিনয় ক্ষমার অযোগ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy