দিল্লি ডায়েরি। —ফাইল চিত্র।
কেন্দ্র ও দিল্লি সরকারের আইনি লড়াইয়ে দিল্লি সরকারের পক্ষে রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। পরে সেই রায়ের বিরুদ্ধে অধ্যাদেশ আনে কেন্দ্র। সেই অধ্যাদেশকে আইনি চেহারা দিতে কেন্দ্র দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চল শাসন (সংশোধনী) আইন সংসদে পেশ করলে, আইনের পক্ষে সরকারের হয়ে সওয়াল করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের ভাইপো, আইনজীবী ও বিজেডি সাংসদ পিনাকী মিশ্র। তখন আর এক আইনজীবী, তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় গলা ফাটিয়ে ওই বিলের বিরোধিতায় সরব হলেন। এমনিতেই তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বজ্রনির্ঘোষের সঙ্গে বিলক্ষণ পরিচিত লোকসভা। বিরোধীদের যে কোনও বিষয় নিয়ে স্লোগানে, বাংলার কোনও হেনস্থা নিয়ে চিৎকারে তাঁর স্বর সবাইকে ছাপিয়ে যায় বার বার। তার সাম্প্রতিক সংস্করণে মুগ্ধ স্বয়ং কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী। লোকসভাকে চাঙ্গা করতে নতুন স্লোগান নিয়ে ময়দানে নামতে দেখা গেল কল্যাণবাবুকে। সদ্য নির্মিত ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজ্য ধরে ধরে সেই স্লোগান চলতে থাকল। “কর্নাটক মে ইন্ডিয়া, কাশ্মীর মে ইন্ডিয়া, রাজস্থান মে ইন্ডিয়া...।” নিজের আসনে বসে পুরো বিষয়টি স্মিতমুখে উপভোগ করছিলেন সনিয়া। অধিবেশন মুলতুবি হওয়ার পর দেখা গেল তিনি কথা বলছেন কল্যাণের সঙ্গে। আদা-লজেন্সও দিলেন সনিয়া তাঁকে। চিৎকার করে গলা ব্যথা করে ফেলা সাংসদদের উপশমের জন্য এটি তিনি সর্বদা ব্যাগেই রাখেন।
রেকর্ড হবে না
তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বললেই রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেন, একটি শব্দও সংসদের রেকর্ডে যাবে না। তাই, ‘নাথিং উইল গো অন রেকর্ড’-এর নির্দেশ তাঁর মুখে প্রায়ই শোনা যায়। অন্য দিকে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের সঙ্গেও তাঁর কথা ও কটাক্ষের লড়াই চলতে থাকে। সংসদের চলতি অধিবেশনে বিরোধীদের দাবিতে এক দিন খড়্গেকে বলার অনুমতি দিয়ে ধনখড় বললেন, খড়্গের জন্য তাঁর হৃদয়ে বিশেষ জায়গা রয়েছে। খড়্গে উত্তর দিলেন, ধনখড়ের হৃদয় বিরাট বড়। কিন্তু সেই হৃদয় জুড়ে শুধুই শাসক দল বিজেপি। ধনখড় শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন ঠিকই। একই সঙ্গে নির্দেশ দিলেন, “নাথিং উইল গো অন রেকর্ড, নাথিং উইল গো অন রেকর্ড।”
মুখ ঢেকে যায়
মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য দাবি করে বাদল অধিবেশনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বিরোধী সাংসদেরা। শাসক শিবিরের নেতা-মন্ত্রী কিংবা অন্য দলের সাংসদ মুখ খুললেই প্ল্যাকার্ড নিয়ে তাঁদের পাশে চলে যাচ্ছেন বিরোধীরা। তাক করা ক্যামেরার সামনে তুলে ধরছেন প্ল্যাকার্ড, যাতে লোকসভার অভ্যন্তরের বিরোধের বার্তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। তাতেই কাজ বেড়েছে আলোকচিত্রী, ভিডিয়োগ্রাফারদের। যে মুহূর্তে বক্তব্যরত সাংসদের সামনে প্ল্যাকার্ড তুলে ধরা হচ্ছে তৎক্ষণাৎ দৃশ্যপট বদলে দিতে হচ্ছে। এ দিকে বিরোধীদের ওই কাণ্ডে বিপাকে মন্ত্রীরা। প্ল্যাকার্ডের ভয়ে অন্তত চার-পাঁচটি সারি পিছনে গিয়ে নিজেদের বক্তব্য রাখছেন তাঁরা, যাতে প্ল্যাকার্ডে তাঁদের মুখ ঢেকে না যায়!
নিদ্রা গিয়েছেন?
রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিবৃতির দাবিতে প্রায় প্রতি দিনই সরব বিরোধী সাংসদরা। তার পরে বিরোধী সাংসদরা দল বেঁধে ওয়াক আউট করছেন। বিরোধী বেঞ্চ খালি থাকছে। এক দিন দেখা গেল, গোটা বিরোধী শিবির ওয়াক আউট করার পরেও কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা পি চিদম্বরম বসে রয়েছেন। তাঁর চোখ বোজা। বেরিয়ে যাওয়ার পরে বিরোধী সাংসদরা খেয়াল করেন, চিদম্বরম আসেননি। আরজেডি সাংসদ মনোজ কুমার ঝা তাঁকে ডাকতে গেলেন। জানা গেল, চিদম্বরম বলেছেন, তিনি ঘুমিয়ে পড়েননি। চোখ বন্ধ করে ধ্যান করছিলেন।
বাংলাকে ভালবাসি...
রাজ্যসভায় তৃণমূলের নতুন সাংসদ হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাকেত গোখলে। তথ্যের অধিকার কর্মী হিসেবে বিজেপিকে প্রায়ই বিপাকে ফেলেছেন সাকেত। গুজরাতে জেলে বন্দি থেকেছেন। তাঁর রাজ্যসভায় প্রবেশ বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের একেবারেই পছন্দ নয়। সাকেত সংসদে খুশি মনেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ বলে বাংলায় লেখা ভিজ়িটিং কার্ডও ছাপিয়েছেন। আপাতত তাঁর ঠিকানা চাণক্যপুরীর বঙ্গ ভবন। মরাঠি হলেও শুভানুধ্যায়ীদের বঙ্গভবনে বাঙালি খাবার চেখে দেখারও আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy