প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পর তিনি আমেরিকাকে কোন পথে চালিত করতে চান?
এ কী বললেন ডোনাল্ড ট্রাম্প! তিনি নিশ্চয়ই জানেন, এখন থেকে তাঁর ছোট-বড় নানা মন্তব্য এবং পদক্ষেপ বিশ্ব রাজনীতির সবচেয়ে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে চলেছে। যদি সত্যিই এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল হন তিনি, তা হলে এমন এক বার্তা চারিয়ে দিলেন কী করে, যা এ বিশ্বের ভারসাম্যটাই টলিয়ে দিতে পারে? বিরাট প্রশ্নচিহ্ন জাগছে এক।
পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নামার ডাক দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সভ্য পৃথিবীতে বসে এমন হুঙ্কারের কথা কল্পনার দূরতম পরিসরেও আসে না। অথচ পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেই ভয়ঙ্কর আহ্বানটাই রাখলেন গোটা বিশ্বের সামনে।
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি যা কিছু দিয়েছিলেন তিনি, সে সব যদি অংশতও পূরণ করেন, তা হলেই পৃথিবীর সমাজ-রাজনৈতিক ইতিহাস নতুন করে লেখার প্রয়োজন হয়ে পড়বে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইতে বিজয়ী ঘোষিত হওয়ার পর থেকে যে বার্তা ধাপে ধাপে ট্রাম্প দিচ্ছেন, তাতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোকেও অনেক ছোট মনে হচ্ছে আজ। এক বেপরোয়া ধনকুবেরের রহস্যময় চরিত্রের অন্ধকারাচ্ছন্ন নানা দিক একে একে অনাবৃত হতে শুরু করেছে বলে প্রতীত হচ্ছে। সে অন্ধকারের গর্ভে আরও অনেক ভয়ঙ্করের লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা জাগছে, বিশ্ব মানবতার ভবিষ্যৎ ভেবে আতঙ্কিত হতে হচ্ছে।
আমেরিকা তত ক্ষণ পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্রাগার বাড়িয়ে চলবে, যত ক্ষণ না গোটা পৃথিবী উপলব্ধি করছে পরমাণু অস্ত্র আসলে কী বস্তু— ডোনাল্ড ট্রাম্প এমনই হুঙ্কার দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ট্রাম্প আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের মাঝখানে এখন নির্বাচন নামক কোনও বাধা আর নেই, যা তাঁকে টপকাতে হবে। অতএব, গা গরম করা ভাষণ দেওয়ার প্রয়োজন এখন আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেই। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প যখন সব প্রতিপক্ষকে এবং প্রকারান্তরে গোটা বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নামার ডাক দিচ্ছেন, তখন একে অন্তঃসারশূন্য শব্দগুচ্ছ বলে তাচ্ছিল্য করা যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার পর তিনি আমেরিকাকে কোন পথে চালিত করতে চান, এখনকার বার্তাগুলো সম্ভবত সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কী বলছেন, তিনি নিজে কি তার তাৎপর্য বুঝছেন? পরমাণু অস্ত্রের বিপদটা ঠিক কী রকম, পৃথিবী তা জানে না, এ কথা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কে বললেন? নতুন করে এ বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রের ক্ষমতা সমঝে দেওয়ার দরকার পড়েছে, এ উপলব্ধি তাঁর কেন হল? দু’টো বিশ্বযুদ্ধে অসীম ধ্বংসের সাক্ষী হয়ে আসা এ পৃথিবী আজ অস্ত্র সংবরণের কথা বলে, সামরিক সংযমের আপ্রাণ প্রয়াস দেখায়, পরমাণু অস্ত্রের প্রসার রোধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গড়ে তোলে। যে কোনও সভ্য, প্রতিগিশীল রাষ্ট্রের কাছ থেকে এই মানসিকতাই কাম্য। কিন্তু ট্রাম্পের অভিমুখ এ সবের ঠিক বিপ্রতীপে।
অসীম ধ্বংসের এক পদধ্বনি যেন অমোঘ পদক্ষেপে এগিয়ে আসছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প কি শুনতে পাচ্ছেন সে পদধ্বনি? শুনতে পাওয়াটা খুব জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy