Advertisement
E-Paper

কপটতার শিখরে দাঁড়িয়ে সদর্থক প্রত্যাশা না রাখাই শ্রেয়

নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের বড়সড় অশান্তি হল। জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা হল, ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে ছয় জঙ্গির মৃত্যু হল। পাক বাহিনীর সঙ্গেও ভারতীয় বাহিনীর সংঘর্ষ হল, প্রাণহানির সংখ্যা তাতেও কম নয়।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৩৬
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

পাকিস্তানের সঙ্গে হাতির দাঁতের কিয়ত্ মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। প্রাণীকুলে দাঁতের কার্যকারিতা নানা রকম। কিন্তু দাঁতের প্রধান ও প্রাথমিক কাজ খাদ্যগ্রহণ প্রণালীর সঙ্গেই সম্পর্কিত। হাতির ক্ষেত্রে বাস্তবটা একটু অন্য রকম। তার খাওয়ার দাঁত আর দেখানোর দাঁত পরস্পরের চেয়ে পৃথক। তাই দ্বিচারিতা সংক্রান্ত প্রবচনে নমুনা হিসাবে হাতির দাঁতের ব্যবহার বহুল। পাকিস্তানের ভারত নীতিও ঠিক এই রকম। বিশ্বকে দেখানোর জন্য এক রকম নীতি, বাস্তবের মাটিতে আর এক রকম।

নিয়ন্ত্রণরেখায় ফের বড়সড় অশান্তি হল। জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টা হল, ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে ছয় জঙ্গির মৃত্যু হল। পাক বাহিনীর সঙ্গেও ভারতীয় বাহিনীর সংঘর্ষ হল, প্রাণহানির সংখ্যা তাতেও কম নয়। স্বাভাবিক কারণেই উত্তেজনা আরও বাড়ল। কিন্তু সে সবের পাশাপাশি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে সে দেশের সংবাদমাধ্যম জানাল, ইসলামাবাদ শান্তি চাইছে। দু’দেশের সম্পর্কে তিক্ততা আরও বাড়ুক, ইসলামাবাদ তা চাইছে না, ভারত এবং পাকিস্তান পরস্পরের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ করুক, ইসলামাবাদের কাছে তা কাম্য নয়, দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ফের যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরি হওয়া ইসলামাবাদের কাছে কাঙ্খিত নয়— পাক বিদেশমন্ত্রক এমন বার্তা দিয়েছে বলে পাক সংবাদমাধ্যমের দাবি। যদি সত্যি এই রকম হয় ইসলামাবাদের ভাবনা-চিন্তার গতি, তা হলে বার বার কেন অশান্ত হচ্ছে সীমান্ত, কেন বার বার রক্তে ভাসছে নিয়ন্ত্রণরেখা, কেন বন্ধ হচ্ছে না জঙ্গি তত্পরতা?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এ কথা ঠিক যে, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে তিক্ততা দীর্ঘ দিনের, উত্তেজনা প্রবল, সঙ্ঘাতের আশঙ্কাও যথেষ্টই। কিন্তু এ কথাও মানতে হবে যে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি স্থাপনের শর্ত মোটেই খুব একটা কঠিন বা জটিল নয়। সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করুক পাকিস্তান, সীমান্তে একটা গুলিও খরচ করা দরকার পড়বে না আর— অজস্র বার এ বার্তা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে দিয়েছে নয়াদিল্লি। কোন অমোঘ অভ্যন্তরীণ বাধ্যবাধকতায় সেই শর্তটুকু পূরণের দিকে ইসলামাবাদ পদক্ষেপ করতে পারে না, সে কথা ইসলামাবাদের কর্তারাই ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু মুখে শান্তির কথা যতই বলুক, শান্তির লক্ষ্যে কোনও পদক্ষেপই যে ইসলামাবাদ করে না, সে কথা গোটা বিশ্বই (চিন ব্যতীত) বলতে পারবে।

নিয়ন্ত্রণরেখায় এবং আন্তর্জাতিক সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন সম্প্রতি জলভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন টেরর লঞ্চ প্যাড থেকে জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি ঢোকানোর চেষ্টা রোজ হচ্ছে, জঙ্গিদের কভার ফায়ার দিতে আচমকা গোলাবর্ষণ শুরু হচ্ছে। উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে বা কোনও অজানা উদ্দেশ্য সাধন করতে মাঝে-মধ্যেই সীমান্তে বা নিয়ন্ত্রণরেখায় কর্তব্যরত ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মীদের নিশানা বানিয়ে খুন করা হচ্ছে। আর প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ভারত উপযুক্ত বা ততোধিক প্রাবল্য নিয়ে জবাব দিচ্ছে, প্রয়োজনে পাক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে অভিযান চালিয়ে আসছে। ভারতের পাল্টা পদক্ষেপ যখনই বড্ড ভারী ঠেকছে পাকিস্তানের কাছে, তখনই ইসলামাবাদের কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, পাকিস্তানের অস্ত্রাগারে পরমাণু বোমা রয়েছে এবং প্রয়োজন পড়লে তা প্রয়োগ করতে পাকিস্তান দ্বিধান্বিত হবে না। এই পথে উন্নতি হবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের? এই পাকিস্তান কূটনৈতিক সামাধান সূত্রের কথা বলছে?

আরও পড়ুন: পাকিস্তানের হামলা, জবাবে ভারত, নিহত ৭ পাক সেনা

আরও পড়ুন: বাগ‌্‌যুদ্ধে কাজ হয়নি, কূটনীতির পথে পাকিস্তান

পাকিস্তানের পরমাণু-হুমকি প্রসঙ্গে সম্প্রতি ভারতের সেনাপ্রধান বেশ চড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, হুমকির পরোয়া তিনি করেন না, তাঁর বাহিনী পাকিস্তানে ঢুকে অভিযান চালাতে প্রস্তুত, শুধু সরকারি অনুমতি প্রয়োজন। এহেন মন্তব্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা ভারতের সেনাপ্রধান নিশ্চয়ই বোঝেন। বুঝেও এমন মন্তব্য কেন করলেন, কার অনুমোদন নিয়ে করলেন, তা জেনারেল রাওয়ত নিজেই জানেন। কিন্তু ভারতের সেনাপ্রধান এ মন্তব্য করতেই পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী-সহ সে দেশের প্রশাসনের নানা মহল যে ভাবে বেলাগাম প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করলেন, যে ভাবে পাল্টা যুদ্ধের হুঙ্কার ছাড়তে শুরু করলেন, যে ভাবে ভারতকে যুদ্ধে আহ্বান জানাতে লাগলেন, তাতেও বিন্দুমাত্র দায়িত্ববোধের পরিচয় নেই। আর ওই সব দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের পরে চব্বিশ বা আটচল্লিশ ঘণ্টা কাটার আগেই কোনও অপ্রচলিত মাধ্যমকে হাতিয়ার করে কূটনৈতিক পথে উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা দেওয়ার মধ্যেও কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

বস্তুত বিশ্বাসযোগ্যতাই এখন পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে মহার্ঘ্য। কথায় আর কাজে এত অমিল, এত বার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, সন্ত্রাসের সঙ্গে এত সম্পৃক্তি ভারতের এই প্রতিবেশী দেশটির যে, শুধু ভারতের সূচকে নয়, আন্তর্জাতিক সূচকেও পাকিস্তানের বিশ্বাসযোগ্যতা অত্যন্ত কম। পাকিস্তান সন্ত্রাসের বিনাশের লক্ষ্যে আত্মত্যাগ করে, পাকিস্তান শান্তি চায়, পাকিস্তান কূটনৈতিক পথ ধরে ভারতের সঙ্গে নিজেদের দূরত্ব কমাতে চায়— এ ধরনের বার্তা মৌখিক ভাবে চারিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সফল ভাবে সুবোধ সাজা যাবে, এমন আশা এখন আর না করাই শ্রেয়। ভারত বিরোধী সন্ত্রাসে নিরন্তর মদত দেওয়া হবে, বিনা প্ররোচনায় সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করা হবে, প্রায় রোজ ভারতে জঙ্গি ঢোকানোর চেষ্টা হবে আর নয়াদিল্লি চিরন্তন সংযমের পথে হাঁটবে— এও দুরাশা। যত দ্রুত পাকিস্তান এ সত্য উপলব্ধি করে, ততই মঙ্গল।

এই উপমহাদেশে কোনও ভূ-রাজনৈতিক অশান্তি ভারতের হাত ধরে শুরু হয়নি। সঙ্কট নিরসনে অগ্রগণ্য ভূমিকা নিতে গিয়ে ভারতকে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে বা কারও চক্ষুশূল হতে হয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে। কিন্তু ভারত সঙ্কটের জন্ম দিয়েছে, এমন নিদর্শন নেই। অতএব শান্তির লক্ষ্যে যদি সত্ প্রচেষ্টা থাকে পাকিস্তানের তরফে, ভারতের তরফ থেকে সদর্থক সাড়া পেতে সময় লাগবে না, এ বিষয়ে ইসলামাবাদ নিশ্চিত থাকতে পারে। কিন্তু শান্তির পথে হাঁটতে পাকিস্তান সত্যি প্রস্তুত কিনা, সে বিষয়ে ইসলামাবাদের কর্তারা নিজেরা একটু নিশ্চিত হয়ে নিন।

Newsletter Bipin Rawat India ভারত Pakistan General Asif Gafoor মেজর জেনারেল আসিফ গফুর পাকিস্তান অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Anjan Bandyopadhyay Terrorism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy