Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

উত্তমপুরুষ একবচন

আর্থিক বৃদ্ধির হার তিন বৎসরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে। বেসরকারি লগ্নি নাই। আমদানি-রফতানির ছবিও সন্তোষজনক নহে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ যে মুখ থুবড়াইয়া পড়িতেছে, অরবিন্দ পানাগড়িয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিবার পূর্বে কার্যত তাহা বলিয়াই গিয়াছেন।

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

বামপন্থীরা অবধি ‘বুরে দিন’ ফিরাইয়া দেওয়ার দাবিতে পথে নামিবার কথা ভাবিতেছেন! যাঁহারা ‘কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স’ বলিতে ১৯৭৮ সালের পার্টি কংগ্রেস বুঝেন, তাঁহারা অবধি বিচলিত। নরেন্দ্র মোদী কৃতিত্ব দাবি করিতেই পারেন। তাঁহার তিন বৎসরাধিক সময়কালের শাসনে ভারতীয় অর্থনীতির এমনই হাল হইয়াছে। ভক্তরা প্রশ্ন করিতে পারেন, এমন অবস্থার পিছনে প্রধানমন্ত্রীর দায় আর কতটুকু— অর্থনীতি তাহার নিজের গতিতেই পথ হারাইয়াছে। কথাটি সম্পূর্ণ উড়াইয়া দেওয়ার নহে। ২০০৮ সালের মহামন্দা-উত্তর বিশ্বে কোনও সরকারের পক্ষেই অর্থনীতির পক্ষীরাজ ছুটাইয়া দেওয়া মুশকিল। ভারতীয় অর্থনীতির আজ যে হাল হইয়াছে, তাহার সিংহভাগ দায় প্রধানমন্ত্রীর অপরিণামদর্শিতার হইলে খানিক দায় সার্বিক পরিস্থিতির উপর বর্তায়ও বটে। কিন্তু, সেই যুক্তি পেশ করিবার পথ তিনি নিজেই বন্ধ করিয়া রাখিয়াছেন। ‘অচ্ছে দিন’-এর রাজনৈতিক ভাষ্যে তিনি যে অর্থনৈতিক দাবিগুলি মিশাইয়া দিয়াছিলেন, তাহাতে একটিই বার্তা ছিল— মনমোহন সিংহের সরকার যাহা পারে নাই, তিনি ক্ষমতায় আসিলে তাহা নিমেষে করিয়া ফেলিবেন। প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে তিন বৎসর কাটাইয়া দেওয়ার পর এখন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ঘাড়ে দোষ চাপাইতে চাহিলে মানুষ মানিবে কেন? জবাবদিহি তাঁহাকেই করিতে হইবে।

আর্থিক বৃদ্ধির হার তিন বৎসরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে। বেসরকারি লগ্নি নাই। আমদানি-রফতানির ছবিও সন্তোষজনক নহে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ যে মুখ থুবড়াইয়া পড়িতেছে, অরবিন্দ পানাগড়িয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিবার পূর্বে কার্যত তাহা বলিয়াই গিয়াছেন। বৎসরে গড়ে সওয়া কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতির ধারে কাছেও প্রকৃত সংখ্যাটি নাই। নরেন্দ্র মোদী নাকি এখন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়াইতে মরিয়া। অথচ, ইউপিএ-র তৈরি করা জাতীয় কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা যোজনাকে যারপরনাই অবহেলা করিয়াছে তাঁহার সরকার। বস্তুত, এইখানেই নরেন্দ্র মোদীর প্রকৃত সমস্যাটি নিহিত। তিনি অর্থনীতিকে শুধুমাত্র রাজনীতির চশমা পরিয়াই দেখেন। তাঁহার নিকট কর্মসংস্থান অপেক্ষা জরুরি ইউপিএ-র প্রকল্পকে কোণঠাসা করা। উৎপাদনের সমীকরণ বোঝা অপেক্ষা জরুরি তাহাকে রাজনীতির ভাষ্যে পেশ করা। রাজনীতির মন্ত্রে অর্থনীতিকে চালনা করিতে চাহিলে তাহার কী ফল হয়, ভারত বুঝিতেছে।

এই দায় না লইয়া নরেন্দ্র মোদীর উপায় নাই। অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন নাকি ঘনিষ্ঠ মহলে বলিয়াছেন, দেশের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসাবে তাঁহার পরামর্শ লওয়া দূরের কথা, আর্থিক নীতি রূপায়ণের ক্ষেত্রে স্বয়ং অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যও গ্রাহ্য হইত না। বস্তুত, নোটবাতিলের সিদ্ধান্তের সময় গোটা দেশ দেখিয়াছে, নরেন্দ্র মোদীর সম্পূর্ণ ভাষণ জুড়িয়াই ছিলেন উত্তমপুরুষ একবচন। রাতারাতি নোটবাতিলের সিদ্ধান্তে দেশের অর্থনীতি শুইয়া পড়িয়াছিল। সেই ধাক্কা সামলাইবার পূর্বেই অপ্রস্তুত অর্থনীতির উপর জিএসটি চাপাইয়া দেওয়া হইল। ‘শক থেরাপি’-তে প্রধানমন্ত্রীর ভরসা দৃশ্যত প্রবল। কিন্তু, অর্থনীতির পক্ষে এই অবিবেচনা প্রাণঘাতী হইতেছে। শুষ্ক কথায় ‘অচ্ছে দিন’ আসে না, এই সত্যটি দেশ বহুমূল্যে বুঝিতেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economic growth Indian Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE